নিজস্ব সংবাদদাতা: গ্রামীন এলাকায় ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মত পতঙ্গবাহিত রোগ, জলবাহিত রোগ এবং সংক্রামক রোগ দ্রুত নির্ণয় করা এবং সাথে সাথে প্রতিষেধক ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে আরও নিবিড় পরীক্ষাগার তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন (National Health Mission)ও পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য বিভাগ ( West Bengal health Department)। সরকারি পরিভাষায় এই ল্যাবগুলির নাম দেওয়া হয়েছে ব্লকপ্রাইমারি হেলথ ইউনিট বা BPHU. রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় এই ধরনের ল্যাব বা পরীক্ষাগারগুলি গড়ে তোলা হতে চলেছে। জানা গেছে সারা বাংলায় মোট 86টি ল্যাব তৈরির জন্য বরাদ্দ হয়েছে প্রায় 45কোটি টাকা। এরমধ্যে 13 টি ল্যাব নির্মিত হচ্ছে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে। পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে 6টি করে মোট 12টি ল্যাব তৈরি হচ্ছে দুই মেদিনীপুরে। অন্যদিকে 1টি ল্যাব পাচ্ছে ঝাড়গ্রাম জেলা। অন্যদিকে পশ্চিম মেদিনীপুরে যে 6টি ল্যাব হতে চলেছে তারমধ্যে 3টিই হবে খড়গপুর মহকুমায়।
এবার জেনে নেওয়া যাক এই ল্যাবগুলির কাজ কী হবে? এই ল্যাবগুলির কাজ হচ্ছে গ্রামীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা। পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিক ‘KGP বাংলা’কে জানান, “এতদিন এই ধরনের ল্যাব থাকত জেলায়। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, আন্ত্রিক ইত্যাদি জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত স্থানীয় রোগভোগের পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার জন্য এই ল্যাব গুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এই রোগগুলি একটা নির্দিষ্ট এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ এর পেছনে রয়েছে স্থানীয় কারন। জেলা বা রাজ্যে এই খবর যখন পৌঁছায় তখন সংক্রমন অনেকটা ছড়িয়েছে, বহু মানুষ আক্রান্ত। তারপর ঠিক কী হয়েছে বোঝার জন্য এলাকায় নমুনা সংগ্ৰহ করে তা পাঠানো হচ্ছে জেলায় অথবা রাজ্যে। পরীক্ষা করে সঠিক কারণ জানতে কয়েকদিন সময় লাগছে। ততদিনে সংক্রমন আরও একটু ছড়িয়ে গেছে। এলাকায় ল্যাব হলে এটা দ্রুত চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।”
যেমন আন্ত্রিক বা ডায়রিয়ার ৬রকম প্রকার রয়েছে। এখন যে রোগটি ছড়িয়েছে তার অর্গানিজম বুঝতে আমাদের কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হয় স্থানীয় স্তরে ল্যাব না থাকায়। চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয়। এই ল্যাবে একজন কীটতত্ত্ববিদ (Epidemiologist )থাকবেন যিনি এলাকার মশা মাছি বা রোগবাহক কীটপতঙ্গের জিনগত পরিবর্তনের ওপর নজরদারি করতে পারবেন সংগৃহিত নমুনাগুলি পরীক্ষার মাধ্যমে। এবং এই কাজ নিয়মিত চললে আগে থেকে সতর্ক হওয়া যাবে। এই জনস্বাস্থ্য ল্যাবগুলিতে একটি সাধারণ ল্যাব ছাড়াও বায়োকেমিক্যাল ল্যাব, সংক্রামক রোগ নির্ণয় ল্যাব এবং এইচআইভি ইত্যাদিযৌনসংক্রমন জনিত ল্যাব থাকছে। নমুনা সংগ্ৰহ, নমুনা প্রস্তুত করার জন্য পৃথক পৃথক ব্যবস্থা থাকছে। এছাড়া কীটতত্ত্ববিদ (Epidemiologist ) ও বিএমওএইচ (BMOH)নিজস্ব চেম্বার সহ দুটি তল মিলিয়ে প্রায় ২০টি কক্ষ থাকছে।
কোথায় কোথায় এই জনস্বাস্থ্য ল্যাব বা ব্লকপ্রাইমারি হেলথ ইউনিট হতে চলেছে দেখে নেওয়া যাক। পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের বড়রাঙ্কুয়া, চণ্ডীপুরের এড়াশাল, মহিষাদলের বাসুলিয়া, তমলুকের অনন্তপুর, শহিদ মাতঙ্গিনীর জানুবাসান এবং এগরার গঙ্গাধরবাড়া গ্রামীন হাসপাতালে এই পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর মহকুমার ডেবরা, সবং এবং দাঁতনের খন্ডরুই গ্রামীন হাসপাতালে হতে চলেছে ৩টি ল্যাব। ঘাটাল মহকুমার দাসপুর ও চন্দ্রকোনা এবং মেদিনীপুর সদর মহকুমার গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালে জনস্বাস্থ্য ল্যাব হচ্ছে। ঝাড়গ্রাম জেলার একমাত্র ল্যাবটি হচ্ছে বিনপুরে। প্রতিটি জনস্বাস্থ্য ল্যাব গড়ে তোলার জন্য ৫২লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে।