নিজস্ব সংবাদদাতা: উত্তপ্ত গরম জলে পড়ে ছটফট করছিল শিশুটি। আশেপাশে দাঁড়িয়েছিলেন অনেকেই, এমন কি মিষ্টি দোকানের মালিক কর্মচারীরাও। ৫ বছরের শিশুকন্যা শেষ অবধি নিজেই উঠে কড়াইয়ের বাইরে আসে। ৫দিনের যন্ত্রনায় ময় লড়াই চালিয়ে শেষ অবধি মৃত্যুর কাছে হার মেনেছে শিশুটি।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/01/IMG-20220106-WA0015.jpg)
যাওয়ার আগে মায়ের কাছে শুধু একটাই আফসোস করে গেছে, ‘মাগো, আমায় কেউ তোলেনি। ওরা হাসছিল, মজা দেখছিল। আমি কিন্তু নিজেই উঠে এসেছি।’ পূর্ব মেদিনীপুরের মেছেদার এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর মানুষ হিসাবে কতটা লজ্জিত হলে মনুষ্যত্ব বজায় থাকে জানা নেই। স্বান্তনা একটাই ওই দুধের শিশুর কাছে আর কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তার মৃত্যু সেই দায় থেকে বাঁচিয়েছে।
মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটে ৩১শে ডিসেম্বর। কোলাঘাট থানার মেছেদাতে চিলড্রেন পার্ক লাগোয়া মিষ্টি দোকান। দোকানের বাইরে পার্কের রাস্তার পাশেই রাখা হয় দোকানের বাসন,কোসন, কড়াই ইত্যাদি। ব্যবহারের পর গরম জলও রাখা হয় বড় কড়াইতে। বর্ষশেষের আনন্দ সেদিন। সবাই আনন্দে মেতে উঠেছে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/01/IMG-20220106-WA0013.jpg)
তিনটি শিশু খেলছিল নিজেদের মধ্যে। খেলতে খেলতে গরমজলের কড়াইয়ে পড়ে যায় ৫বছরের অঙ্কিতা গোস্বামী। অঙ্কিতা গোস্বামী বাড়ি শান্তিপুর বিদ্যাসাগর পল্লীতে। বাবা অর্ণব গোস্বামী পেশায় গাড়ি চালক। অঙ্কিতাকে প্রথমে তমলুক পরে কলকাতা পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সেখানে ৪ ই জানুয়ারি মারা যায়।
বৃহস্পতিবার ক্ষুব্ধ পরিবারের সদস্য, অঙ্কিতার প্রতিবেশীরা ক্ষোভ উগরে দিয়ে ভাঙচুর করেছে মিষ্টি দোকানটির কিছু অংশ। অঙ্কিতার মা বুক ভাঙা কান্নায় ফেটে পড়ে বলেছেন, ‘ মেয়ের সঙ্গে সেদিন আমিও ছিলাম। মেয়েটার খিদে পেয়েছিল বলে একটা দোকান থেকে চালভাজা কিনতে গিয়েছিলাম। ওই টুকু সময় মাত্র। ফিরে এসে মেয়ে দেখে চমকে যাই। মেয়ে তখন একটাই কথা বলে যাচ্ছে, মাগো, ওরা আমাকে কেউ তোলেনি, অনেক কষ্টে আমিই বেরিয়ে এসেছি মা। গোটা শরীর আমার জ্বলে যাচ্ছে! অঙ্কিতার মা আরও জানিয়েছেন, পাশেই তিনজন দাঁড়িয়েছিল, মিষ্টি দোকানের ভেতরেও দোকানের লোকেরা ছিল। তারা কেউ এগিয়ে এলনা আমার মেয়েটাকে তুলতে।
অঙ্কিতার বাবা অর্নব জানিয়েছেন,” কলকাতার চিকিৎসকরা বলেছিলেন, ক্ষতর পরিমান যথেষ্ট বেশি। মেয়েটিকে যদি সঙ্গে সঙ্গে তুলে নেওয়া সম্ভব হত তাহ’লে হয়ত এতটা ক্ষতি হতনা। মেয়েটি বেঁচে যেতে পারত।”
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/01/Screenshot_20220106-135350_WhatsAppBusiness.jpg)
অর্নব আরও বলেন,” শরীরময় ফোস্কা পড়ে গেছিল মেয়ের। মুখ, ঘাড় পুরোপুরি জ্বলে যাওয়ার মত হয়ে গেছিল। অবস্থা খারাপ বুঝেই তমলুকের চিকিৎসকরা তাকে এসএসকেএমে পাঠান। ওখানে বার্ন ইউনিটে রাখা হয় কিন্তু তাও বাঁচাতে পারলেননা চিকিৎসকরা।” কিন্তু খোলা জায়গায় এভাবে গরমজলের কড়াই রাখা হয়েছিল কেন? উত্তর পাওয়া যায়নি দোকানদারের কাছ থেকে।