নিজস্ব সংবাদদাতা: শালীনতার সমস্ত মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেন তৃনমূলের রাজ্য কমিটির মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। ল্যাজ নাড়া জন্তু থেকে জন্মের ঠিক নেই বলেও মন্তব্য করে বসলেন তিনি। বলাবাহুল্য বাংলার রাজনীতিতে যে কু-কথার স্রোত এখন বইছে তাতে সঞ্চিত হয়ে রইল ১০ই নভেম্বর নন্দীগ্রামে তৃনমূল কংগ্রেস আয়োজিত এই শহীদ স্মরণে অনুষ্ঠানে কুনাল ঘোষের কয়েকটি মন্তব্য।
নন্দীগ্রামের গোকুলনগরের কর পল্লীতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে শুরু থেকেই চড়া মেজাজে ছিলেন কুনাল ঘোষ। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই নন্দীগ্রামের মাটিতে মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরাজিত হওয়ার পর থেকেই নন্দীগ্রাম নিয়ে যথেষ্ট স্পর্শকাতর রাজ্য তৃনমূল। খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে তাঁর উষ্মা প্রকাশও করেছেন। ভবানীপুর উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে না আসা অবধি প্রচন্ড চাপেই ছিল তৃনমূল কংগ্রেস। তাই সেই চাপই যেন ভেঙে পড়ল ভবানীপুর উপনির্বাচনের পর প্রথম নন্দীগ্রামে অনুষ্ঠিত কোনও সভায়। যেখানে কুনাল ঘোষকে বলতে শোনা গেল ‘ওর বাপের কোনও ঠিক আছে নাকি?’ জাতীয় মন্তব্য।
ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ বাহিনীর ব্যানারে এই অনুষ্ঠান হলেও আগা গোড়া দাপট ছিল তৃণমূলেরই। কুনাল ঘোষ ছাড়াও রাজ্য তৃনমূলের নেতা তাপস রায়, মৎসমন্ত্রী অখিল গিরি, শেখ সুফিয়ান, বিধায়ক ফিরোজা বিবি সহ এক গুচ্ছ নেতা এদিন উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চের নিচেও ছিল তৃনমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকদের ভিড়। তারই মাঝখানে অধিকারী পরিবারের আদ্যশ্রাদ্ধ করতে গিয়ে মঞ্চ থেকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হঠাৎই কুনাল ঘোষ শ্লোগান দিয়ে বসেন, ‘শুভেন্দু হঠাও।’ সাথে সাথে তৃনমূল কংগ্রেস কর্মী নেতারা আওয়াজ তুলেন, দেশ বাঁচাও বলে। আসলে এটাই বলতে অভ্যস্ত এখন তৃনমূল কর্মীরা। কিন্তু কুনাল ঘোষ বিরক্ত নিয়ে বলেন, ‘ আরে দেশ কী? একটা রাস্তার ল্যাজ নেড়ে বেড়ায়! বলুন, নন্দীগ্রাম বাঁচাও।’
শুভেন্দু হঠাও শ্লোগান শেষ করেই কুনাল ঘোষ বলেন, ‘জন্মের ঠিক আছে ওর?’ সম্ভবতঃ এটা বলার পরই হুঁশ ফেরে তাঁর। ড্যামেজ কন্ট্রোলের জন্য এরপরই বলেন, ‘মা কাকে বলে? যিনি জন্ম দিয়েছেন শুধু তিনিই মা? তোমাকে, তোমার গোটা গুষ্টিকে জন্ম দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়…” যদি সেটাই হয় তবুও তার সঙ্গে জন্মের ঠিক না থাকার কী সম্পর্ক? তা স্পষ্ট করতে পারেননি কুনাল। এদিন ফের একবার অধিকারী পরিবারই সিপিএমকে নন্দীগ্রাম দখল করতে সাহায্য করেছে বলে দাবি করেছেন ঘোষ।
অনেকের মতে কুণালের এই বেফাঁস মন্তব্যের পেছনে মূখ্যমন্ত্রীর নন্দীগ্রামে হেরে যাওয়া এবং শুভেন্দুর কাছে হেরে যাওয়াটাই আসল কারন। নন্দীগ্রামে জয়ের পর শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন যতদিন মূখ্যমন্ত্রী বাঁচবেন ততদিন তাঁর কানের কাছে বাজবে, আমি শুভেন্দুর কাছে হেরেছি। মূখ্যমন্ত্রী কী করবেন জানা নেই কিন্তু নন্দীগ্রামের তৃনমূল নেতারা যে চাপ ধরে রাখতে পারছেননা তা আরও একবার প্রমাণিত হল।
এদিন এই একই অনুষ্ঠান পৃথক ব্যানারে করা হয়েছে বিজেপির তরফে যেখানে শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত ছিলেন। শুভেন্দু বলেন, আমি ২ বারের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়েছি তাই তাঁর ল্যাজুড়দের কোনও কথার উত্তর আমি দেবনা। যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু বলেন তার জবাব দেব। যতবার বলবেন ততবারই উত্তর দেব।