নিজস্ব সংবাদদাতা: দুয়ারে পুরভোট আর তার আগে পাড়ায় পাড়ায় ‘কওন বনেগা হিরো’ র লড়াইয়ে খড়গপুর বিজেপি (BJP)? আর সেই লড়াইয়ে ঢুকে পড়েছে মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) বনাম খড়গপুর শহর বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায় (Hiran Chaterjee) অনুগামীরা। বৃহস্পতিবার সেই লড়াই পরিণত হল বচসা থেকে হাতাহাতিতে যা সামাল দিতে আসরে নামতে হল খড়গপুর শহর পুলিশকে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2021/12/IMG-20211203-WA0019.jpg)
গোটা ঘটনায় সরগরম খড়গপুর শহর। যদিও বিজেপির অন্দরের খবর আরও যে পুরভোটের আগে খড়গপুর বিজেপির ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে আসরে নামছেন খোদ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। হিরণকে বোড়ে করে সেই লড়াইয়ের মূল লক্ষ্য খড়গপুর থেকে বিজেপি সহ সভাপতি দীলিপ ঘোষের রাশ আলগা করে দেওয়া।
জানা গেছে বৃহস্পতিবার বিকেলে খড়গপুরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লি গেটে হিরণের (Hiran Chatterjee) কম্বল বিতরণ কর্মসূচি ছিল। অভিযোগ এই এলাকাটি বিজেপির খড়গপুর শহর উত্তর মন্ডলের মধ্যে সাংগঠনিক এলাকার মধ্যে পড়লেও এই কর্মসূচি সম্পর্কে কিছুই অবগত করানো হয়নি খড়গপুর শহর বিজেপির উত্তর মণ্ডল সভাপতি দীপসোনা ঘোষকে। বরং অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পান দীপসোনা বিরোধী তৃষা চাকলাদার নামে এক বিজেপি নেত্রী। চাকলাদারের অভিযোগ, দীপসোনা তাঁকে ফোন করে হুমকি দিতে থাকেন যে কম্বল বিতরণ কর্মসূচিতে করা যাবে না। আর জোর করে অনুষ্ঠান করলে তার ফল ভাল হবে না। যদিও শেষ অবধি এই কর্মসূচি হয় এবং তাতে উপস্থিত ছিলেন হিরণ চট্টোপাধ্যায়।
গন্ডগোলের সূত্রপাত হয় অনুষ্ঠান শেষে হিরণ বেরিয়ে যাওয়ার পর। তৃষা চাকলাদারের অভিযোগ, বিধায়ক বেরিয়ে যাওয়ার পরই দীপসোনা, কুণাল সরকার নামে বেশ কয়েকজন স্থানীয় তৃণমূল নেতা সেখানে যায়। বিজেপি নেত্রী তৃষা, তাঁর দাদা কুন্তল চাকলাদার, অঙ্কিত শর্মা, অভিজিৎ ভুঁইয়ার উপর হামলা চালানো হয়। দীপসোনা রীতিমতো চপার হাতে হামলা চালায় বলেই অভিযোগ। দু’পক্ষের কথা কাটাকাটি হয়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। রাতেই শহর পুলিশের কাছে দীপসোনা, কুণাল-সহ বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে খড়গপুর টাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তৃষা।
বিজেপি নেত্রীর দাবি, দীপসোনা বেশ কয়েকবার কুপ্রস্তাব দিয়েছেন তাঁকে। তবে তাতে রাজি না হওয়ায় তৃষার উপর ক্ষুব্ধ দীপসোনা বৃহস্পতিবার হামলা চালিয়েছেন তিনি। যদিও দীপসোনা অভিযোগ খারিজ করেছেন। তাঁর দাবি,” সুভাষপল্লীতে বিজেপির কোনও দলীয় অনুষ্ঠান ছিল না । ওই অনুষ্ঠানে আমাদের দু’দল কর্মী বচসায় জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই এবং এক দলকে ওখান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসি। আমাকে অযৌক্তিক ভাবে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। যাঁরা এই অভিযোগ আনছেন তাঁদের বিরুদ্ধেই দল বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে। প্রমান সহ তা দলের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দল ওদের দায়িত্ব থেকে মুক্ত করেছে। হিরণবাবু এসব জানেননা। সেই সুযোগ নিচ্ছে ওরা।
বিধায়ক হিরণ অবশ্য বিষয়টিকে দলীয় কর্মীদের কার্যকলাপের বদলে কিছু সমাজবিরোধীদের কাজ বলেই বর্ননা করেছেন। তাঁর মতে, আমি ঘটনাস্থলে ছিলামনা তাই কারা এটা করেছেন তা বলতে পারবনা। আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে খড়গপুরের মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি। সেই কাজে বাধা দিলে মানুষই তার প্রতিরোধ করবে। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে খড়গপুরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কারা কারা টিকিট পাবেন সেই নিয়ে একটি সূক্ষ্ম প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে বিজেপির মধ্যে। লড়াইয়ের চোরা স্রোত বইছে এলাকার ছোটখাটো নেতাদের মধ্যে। সুভাষপল্লীর ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ। এই তত্ত্ব স্বীকার করে নিয়েছেন দীপসোনাও। তিনি বলেছেন, ‘পুরভোটের আগে এধরনের ঘটনা আরও ঘটবে জানি। দলের বদনাম হবে ঠিকই কিন্তু কী করা যাবে?”