নিজস্ব সংবাদদাতা: কাক ভোরে জঙ্গল থেকে এক ব্যবসায়ীর মৃতদেহ উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ালো এলাকায়। সোমবার ভোরে স্থানীয় মানুষজন মৃতদেহটি দেখতে পায় খড়গপুর-কেশিয়াড়ী রাজ্য সড়কের প্রেমবাজার ও গোপালীর মধ্যবর্তী হিজলী জঙ্গলের বেশ কিছুটা ভেতরে। জানা গেছে দক্ষিণমুখি ওই রাস্তায় গোপালী আশ্রম পের হয়ে ডানদিকে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে একটি মোরামের রাস্তা চলে গেছে পশ্চিম পাথরির দিকে। ওই রাস্তায় জঙ্গলের ভেতরে পড়েছিল বছর ষাটেকের ওই ব্যবসায়ীর মৃতদেহ। জানা গেছে ব্যক্তির নাম পি. বাবু রাও। ঘটনাস্থল থেকে ৫ কিলোমিটার দুরে খড়গপুর পৌরসভার ৩৪নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রপল্লীর বাসিন্দা তিনি।
পরিবারের লোকেদের বক্তব্য বাড়ি থেকে সন্ধ্যা ৭টার আশেপাশে বেরিয়ে গেছিলেন তিনি। আইআইটি ফ্লাইওভারের নীচে পুরিগেট লাগোয়া একটি খাবার দোকান রয়েছে তাঁর। এছাড়াও রয়েছে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ ব্যবসা। কয়েকটি পরিবহনের গাড়িও রয়েছে তাঁর। এর বাইরে সুদে টাকা ধার দেওয়ার ব্যবসাও ছিল তার। শরীরে নানা উপসর্গ ছিল। সুগার, প্রেসার ছাড়াও শ্বাসকষ্ট ছিল যদিও তারই মধ্যে ব্যবসা চালাতে নিয়মিত ছোটাছুটি করতেন। বাজারে বেশকিছু দেনা যেমন ছিল তেমনই ছিল পাওনা। ইদানিং এসব নিয়ে ব্যতিব্যস্ত ছিলেন, মানসিক চাপেও ছিলেন। যেহেতু সুদের ব্যবসা করতেন তাই তাঁর শত্রুও থাকা অসম্ভব নয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় মৃতদেহটি। তাঁর পরনে ফুলস্লিভ গেঞ্জি ছিল। প্যান্ট কোমর থেকে নিচের দিকে অনেকটাই নামানো ছিল। পাশেই একটি বাইক পাওয়া যায়। বাইকে পি.রাও লেখা ছিল। স্থানীয়দের বক্তব্য দেহটি চিৎ করার পর দেখা যায় মুখমন্ডলে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে যা অনেকটা থেঁতলে দেওয়ার মতই। পুলিশ অবশ্য বলেছে এটা দেখে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো মুশকিল। হতে পারে গাড়ি চালাতে চালাতে কোনও ভাবে পড়ে গিয়েও মুখে আঘাত পেয়েছেন। ঘটনাটি দুর্ঘটনাও হতে পারে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ছাড়া কিছু স্পষ্ট হওয়ার নয়। মৃতদেহটি উদ্ধার করে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে সেই কারণেই।
পুলিশ আঘাতের স্বরূপ ও গভীরতা, মৃত্যুর সময়, শারীরিক অবস্থা, হার্ট আ্যটাক কীনা, পাকস্থলীতে পাওয়া খাদ্য পানীয় ইত্যাদি নানা বিষয়ের হদিস পেতে চাইছে যার থেকে মৃত্যুর কারণ পরিস্কার হতে পারে। পুলিশ এও খতিয়ে দেখছে পশ্চিম পাথরি থেকে রাজ্যসড়কে আসা বা বিপরীত দিকে যাওয়ার জন্য জঙ্গলের ওই স্বল্প পরিসরের রাস্তা কেন ব্যবহার করলেন ওই ব্যক্তি। এলাকাটি খড়গপুর গ্রামীন পুলিশের অন্তর্গত তাই দেহ সংগ্ৰহ করে তদন্তের কাজ শুরু করা হয়েছে। পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন পুলিশ আধিকারিকরা।
খড়গপুর গ্রামীণ পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “একদিকে যেমন ঝকঝকে রাজ্য সড়ক ওপর প্রান্তে তেমনই প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার রাস্তা। মাত্র ৫০মিটার দুরে এই দুটি রাস্তার সংযোগস্থল। রাত্রিবেলায় কোনও ব্যক্তি বাইক নিয়ে একপ্রান্ত থেকে ওপর প্রান্তে যেতে চাইলে ওই সংযোগস্থলটি ব্যবহার করবে এটাই স্বাভাবিক। অথচ তিনি কেন জঙ্গলপথ ধরলেন, এটাই ভাবনার। তিনি কী নেহাৎ শর্টকাট করার জন্য গেলেন নাকি কেউ বা কারা তাঁকে ওই পথে নিয়ে গিয়েছিল তা খতিয়ে দেখার বিষয়। আমরা সমস্ত বিষয়টি দেখছি তবে তার আগে পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা পেতে হবে।”