নিজস্ব সংবাদদাতা: জঙ্গলমহলের প্রাক্তন মাওবাদীদের কী ফের সক্রিয় করতে চাইছে সিপিআই (মাওবাদী) র ঝাড়খন্ড ইউনিট? তৃনমূল কংগ্রেসে পুনর্বাসিত হওয়া প্রাক্তন মাওবাদীরা কী তলে তলে ফের জঙ্গলে পুনর্গঠিত করতে চাইছে মাওবাদী সংগঠন? এরকমই গুরুতর কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে গোয়েন্দাদের তরফ থেকে বিশেষ করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কিছু আধিকারিক এমনটাই মনে করছেন। তাঁদের পরিস্কার বক্তব্য বাংলার জঙ্গলমহলের প্রাক্তন মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে ঝাড়খন্ডের মাওবাদীরা। এই কথা কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেও রিপোর্ট করা হয়েছে বলে একটি সূত্র মারফৎ জানতে পারা গেছে।
সম্প্রতি একটি ঘটনায় রাজ্য পুলিশের কিছু আধিকারিক এই বিষয়টি নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। গত ৬ই নভেম্বরের একটি ঘটনা এই ভাবনার রসদ জুগিয়েছে। ওই দিন লালগড়ের কাঁটাপাহাড়িতে ১৫কেজি তরল মাদক সহ গ্রেপ্তার হয় ৫ জন। এই ৫ জনের মধ্যে ৩জন লালগড় এলাকার বাসিন্দা। ২জন পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী থানা এলাকার বাসিন্দা। এদের মধ্যে অন্যতম অভিযুক্ত লালগড়ের শম্ভু হাঁসদা প্রাক্তন সক্রিয় মাওবাদী এবং বর্তমানে সক্রিয় তৃনমূল কর্মী এমনটাই জানা গেছে। একটি সূত্র জানাচ্ছে শম্ভু হাঁসদা লালগড়ের রামগড় গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার তৃনমূল কংগ্রেসের শালুকা বুথ কমিটির সভাপতি।
ওই মাদক কাণ্ডের তদন্তে গিয়ে চক্ষু চড়ক গাছ হয় পুলিশের। শম্ভুর বুড়িশোল গ্রামের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে ২টি তাজা মাইনের সন্ধান পায় পুলিশ যা কিনা তার গোয়াল ঘরের কাছাকাছি ছিল।
ঘটনার খবর জানতে পেরেই সক্রিয় হয়ে ওঠে রাজ্য পুলিশ। বাঁকুড়া রেঞ্জের আইজি রাজা রাজশেখরন স্বয়ং চলে আসেন লালগড়ে শম্ভুকে জেরা করার জন্য। শম্ভু পুলিশকে জানায় সে মাইন দুটি নিয়ে জোগাড় করেছিল এক ব্যক্তির কাছ থেকে। কেন এই মাইন দুটি সে এনেছিল তার উত্তরে সে পুলিশকে জানায় যে, মাওবাদী পুনর্বাসন প্যাকেজ পাওয়ার জন্যই সে এই কাজ করেছে। শম্ভুর এই দাবির যথার্থতা যাইহোক না কেন ভুয়ো মাওবাদী সেজে সরকারের প্যাকেজ আর চাকরি নেওয়ার কাজ যে আগেও হয়েছে তা এই দাবি থেকে প্রমাণিত।
যদিও শম্ভুর এই দাবি মানতে রাজি নন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাদের বক্তব্য জঙ্গলমহলে নতুন করে টাটকা মাইন পাওয়া অসম্ভব যদি না তা এখন বানানো হয় অথবা অন্য জায়গা থেকে আনা হয়। এক আধিকারিকের কথায়, ‘গত একদশকে প্রচুর মাইন উদ্ধার হয়েছে। এখনও কালেভদ্রে কোথাও কোথাও হচ্ছে কিন্তু গত ৫ বছরে যে সব মাইন উদ্ধার হয়েছে সবই জং ধরা। এই মাইন দুটি তাজা এবং এগুলি ব্যবহারের জন্যই ঝাড়খন্ড থেকে এসেছিল। সময় বুঝে পোঁতা হত।’ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের আরও আশঙ্কা বাংলার জঙ্গলমহলের মাওবাদীদের নিজস্ব উপার্জনকে দ্রুত বৃদ্ধি করার জন্য মাদকের কারবার শুরু করা হয়েছে যা উগ্রপন্থীরা সচরাচর করে থাকে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের বক্তব্য, শম্ভু হাঁসদা ২০১০ সালেও সক্রিয় মাওবাদী হিসাবে কাজ করেছে যেমনটা কাজ করেছে লালগড়ের তৃনমুল সভাপতি শ্যামল মাহাত, তৃনমূলের রাজ্য কমিটির মুখপাত্র ছত্রধর মাহাত এবং একাধিক অঞ্চল কমিটির সভাপতিরা। পাশাপাশি নিচু তলাতেও মাওবাদীদের একটি অংশ মিশে গেছে শাসকদলের সঙ্গে। এদেরই কাউকে কাউকে ভিত্তি করে ফের গুটি সাজাচ্ছে মাওবাদীরা। রাজ্য পুলিশও অবশ্য চুপ করে বসে নেই। মাদক আইনের পাশাপাশি ইতিমধ্যেই শম্ভুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে রাজের তরফে।