শশাঙ্ক প্রধান: ধ্যাড়ধ্যাড়ে গোবিন্দপুর নয়, গোবর্ধনপুর! গায়ে কারও ছ্যাঁকা লাগতেই পারে কিন্তু ঘটনা হল যে সম্মান এসে পৌঁছানোর কথা ছিল ১মাস আগে তা পৌঁছাতে পারেনি বন্যার জন্য। এমনই ধ্যাড়ধ্যাড়ে গোবর্ধনপুর নামটি ভারতের মানচিত্রে উঠে আসল সেই গ্রামের এক ৩ বছরের শিশুর দৌলতে। সারা দেশকে অবাক করে পশ্চিম মেদিনীপুরের সেই গোবর্ধনপুরের ব্রহ্মানিপুরের ওই বালকের নাম উঠেছে ইন্ডিয়া বুকস অফ রেকর্ডে। আর সেই রেকর্ড সহ সম্মানটি ওই বালকের হাতে এসে পৌঁছনোর কথা ছিল আসার কথা ছিল সেপ্টেম্বর মাসেই কিন্তু বন্যার জন্য সেই সম্মান পৌছালো মাত্র ক’দিন আগেই। এমনই এক গ্রামের এই বিস্ময় প্রতিভা স্বাভাবিক ভাবে নজর কেড়েছে সবার।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার অন্তর্গত গোর্বধনপুর এলাকার ব্রহ্মানিপুর গ্রামের দস্পতি সৌমিত্র ও অদিতি প্রধানের তিন বছরের বালক সৌরিককে নিয়ে এখন তাই হৈ হৈ কান্ড সারা গ্রাম এবং গ্রাম ছাড়িয়ে আশেপাশের গ্রামেও। অনেকেই ছুটে আসছেন তাঁকে দেখতে। সোস্যাল মিডিয়াতেও এখন তার ছবি আর কীর্তি ভাইরাল। ৩ বছরের সৌরিক প্রধান অর্নগল ভাবে বলতে পারে বিশ্বের ১৯৫ টি দেশের নাম এবং নির্ভুল ভাবে বলতে পারে রাজধানীর নামও! দেশটির পতাকা সম্পর্কিত কার্ডগুলি পরপর রাখলে সে সেই কার্ডগুলি দেখে দেশের নাম ও রাজধানী বলতে শুরু করে। অর্থাৎ শুধু একটি দেশ ও তার রাজধানী নয়, তার সাথে ওই দেশের পতাকার রঙও মনে রাখতে পারে সৌরিক। আর এই ভাবে সে ১৯৫টি দেশের নাম ও রাজধানীর নাম বলতে পারে।
না, মুখস্থ করা বিষয় নয়, সৌরিক এই কাজটি করে আত্মস্থ করে। এমনটা নয় যে ইংরেজির এ অক্ষর দিয়ে শুরু হওয়া দেশটির নাম থেকে সে পরপর জেড অবধি গড়গড় করে শুধু বলে যায়। মাঝখান থেকে কোনো দেশের কার্ড সরিয়ে দিলে সে সেটা ধরে ফেলতে পারে। সৌরিকের বাবা পেশায় ঔষধ প্রতিনিধি সৌমিত্র প্রধান জানান, “যখন থেকেই এক পা দু পা করে চলতে শুরু করে, এবং আদো আদো করে কথা বলার চেষ্টা করে, তখন থেকেই ওর মধ্যে একটা অনুকরণ করার ব্যাপার লক্ষ করি। কোনও কথা অনুকরণ করে তা বলার চেষ্টা করতো, তা বেশ মনে রাখতেও পারতো। তারপর থেকেই একটু একটু করে ওকে বিশ্বের বিভিন্ন পতাকা দেখিয়ে তার নাম ও তার রাজধানীর নাম শেখাতে শুরু করি। পরে জিজ্ঞেস করলে, বেশ নির্ভুল ভাবেই যে কোনও পতাকা দেখে তার নাম ও রাজধানী সঠিকভাবে মনে রেখে অর্নগল ভাবে বলে চলেছে।
সৌরিকের মা অদিতি ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের নার্স। সৌরিককে তাই মায়ের সঙ্গে ঝাড়গ্রামেও থাকতে হয়। ছুটিছাটায় বাবা মার সঙ্গে চলে আসে গ্রামে। এখনও স্কুলে ভর্তি হয়ে ওঠা হয়নি তার। বেশি মানুষজন দেখলে ঘাবড়ে যায় লাজুক শিশু। মা অদিতি জানান, ‘গত আগস্ট মাসে ওর এই সমন্ধতীত সকল তথ্য ইন্ডিয়া বুকস অফ রেকর্ড এ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল ওর বাবা। তারপর আমরা খবর পাই রেকর্ড করেছে ও। সার্টিফিকেট আসার কথা ছিল সেপ্টেম্বর মাসের ২০তারিখ।’
‘কিন্তু বন্যার জন্য সেই সার্টিফিকেট এসেও আমাদের হাতে আসেনি। আমাদের এলাকা তখন জলবন্দি। ফিরে যায় সেই সার্টিফিকেট। অবশেষে বৃহস্পতিবার অক্টোবরের ২১ তারিখ সকালে ইন্ডিয়া বুকস অফ রেকর্ড-এর তরফে ছেলের নামিত প্রশংসাপত্র ও উপহার হাতে পেয়েছি। নিজেদের খুব গর্ব অনুভব করছি। আমরা চাই ও বড় হয়ে ও মানুষের মতো মানুষ হোক, দেশের নাম উজ্জ্বল করুক।” বলাবাহুল্য, একরত্তি এই খুদের বিস্ময়কর প্রতিভায় শুধু ওই শিশুর পরিবারের মুখ উজ্জ্বল নয়, গর্বে বুক ফুলেছে গোটা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাবাসির!