নিজস্ব সংবাদদাতা: মাস কয়েক আগে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় উঠে যাওয়া নিয়ে হইচই হয়েছিল। জানা গিয়েছিল রাজ্যের প্রায় সাতশটি বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। এবার যে তথ্য এল তা আরও মারাত্মক। দেখা যাচ্ছে গত ১০ বছরে রাজ্য থেকে উধাও হয়ে গেছে ৭০১৮ টি প্রাথমিক স্কুল। এই তথ্য পাওয়া গেছে খোদ রাজ্য সরকারেরই নথি থেকে। রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর এই তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্র সরকারকে। মিড-ডে-মিল পরিচালনার নিয়মে কিছু রদবদল আনতে চলেছে কেন্দ্র সরকার। সেই মত রাজ্যগুলিকেও পরিকল্পনা করতে বলা হচ্ছে এবং তা পাঠাতে হচ্ছে কেন্দ্র কে। সেখানেই রাজ্য সরকার যে তথ্য দিয়েছেন তাতেই ফুটে উঠেছে এই বাস্তবতা। দেখা যাচ্ছে শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ই নয়, আশঙ্কা জাগিয়ে কমছে পড়ুয়ার সংখ্যাও।
রাজ্যের বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের দেওয়া ওই তথ্য অনুযায়ী ২০১২-র মার্চে রাজ্যে ৭৪,৭১৭টি প্রাথমিক স্কুল ছিল। ২০২২-র মার্চে সেই সংখ্যা ৬৭,৬১৯টি। ‘নেই’ হয়ে গেছে ৭০১৮টি স্কুল। জেলাওয়াড়ি পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ্যের ২১টি জেলায় একের পর এক প্রাথমিক স্কুল উঠে গেছে। যারমধ্যে সবচেয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়, বিলুপ্ত হয়ে গেছে ১১৯২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপর দেখা যাক পশ্চিম মেদিনীপুরের চিত্র । ২০১২-তে এই জেলা অবিভক্ত। ঝাড়গ্রাম সৃষ্ট হয়নি। তখন সেই জেলায় প্রাথমিক স্কুল ছিল ৮৪০৪টি। আর এখন? ২০২২ সালে দাঁড়িয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে ৫৪১১, ঝাড়গ্রামে ১৯৪৬। মোট – ৭৩৫৭টি। দুই জেলায় কমেছে ১০৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ২০১২ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল ৫৬১৯টি। বর্তমানে হয়েছে ৪৭৫২টি। উধাও হয়ে গেছে ৮৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
আক্ষরিক অর্থেই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি সব চেয়ে মার খাচ্ছে রাজ্যের প্রান্তিক এলাকা, জঙ্গলমহল থেকে সুন্দরবনে। ঝাড়গ্রাম আর পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল থেকে যেমন ১০৪৭টি স্কুল উধাও হয়ে গেছে তেমনি বাঁকুড়া আর বীরভূম থেকে হাওয়া হয়ে গিয়েছে ১২০০ স্কুল। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১১৯২ টি প্রাথমিক স্কুল কমেছে সেখানে ১৩টি ব্লক রয়েছে সুন্দরবনের প্রান্তিক অঞ্চলে। আরও একটি কথা মাথায় রাখা দরকার যে এমনটা নয় যে এখানেই শেষ। বরং এই প্রক্রিয়া এখনও চলছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে গত চার মাসে বন্ধ হয়েছে চারটে প্রাথমিক স্কুল। স্কুল কমবে কিন্তু পড়ুয়া বাড়বে এমনটা তো হয়না তাই কমছে পড়ুয়ার সংখ্যাও। ২০১২-র মার্চে রাজ্যের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে পড়ুয়া ছিল ৭৮,০৪, ৬৮৪জন। কিন্তু ২০২২-র মার্চে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১,৯৫, ৭২৮ জনে! কিন্তু রাজ্যের জনসংখ্যা তো বাড়ছে, তা’হলে পড়ুয়া কমছে কেন?
এই ১০ বছরে কেবলমাত্র ২টি নতুন প্রাথমিক স্কুল বেড়েছে রাজ্যের দুই জেলায়। পুরুলিয়ায় ৩৪৯০ থেকে হয়েছে ৩৪৯১টি। এছাড়া শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ এলাকায় ৮৩টি প্রাথমিক স্কুল বেড়েছে বলে সরকারের দাবি। রাজ্যের বাকি সব জেলাতেই স্কুল কমে গেছে। নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি বা ABPTA ‘র রাজ্য সভাপতি দেবাশিস দত্ত বলেন, “ঘুরিয়ে কেন্দ্রের নয়া শিক্ষা নীতিকে বাস্তবায়িত করতে চাইছে রাজ্য সরকার। প্রাইমারি স্কুলগুলি এরা তুলে দিতে চাইছে। বামফ্রন্ট সরকারের সময় গ্রামের প্রাইমারি স্কুলগুলি পরিচালনা করার জন্য ভিলেজ এডুকেশন কমিটি সরকার তৈরি করেছিল। সেখানে গ্রামের লেখা পড়া জানা লোকদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হতো। কিন্তু এখন সেই কমিটির কোনও অস্তিত্ব নেই। শাসক দলের পঞ্চায়েত সদস্য বা কাউন্সিলর কমিটি চালায়। প্রাইমারি শিক্ষার এই বেহাল দশা নিয়ে বার বার প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছি আমরা তিনি আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু কাজ হয়নি। আর এখন যিনি শিক্ষা মন্ত্রী হয়েছেন। তার সঙ্গে দেখা করার আবেদন জানালেও তিনি দেখা করেননি।” সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মোহন দাস পণ্ডিত বলেন, রাজ্য সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে।