নিজস্ব সংবাদদাতা: জিমখানার (Technology Students’ Gymkhana) ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্র সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠল আইআইটি খড়গপুর(IIT Kharagpur Campus) ক্যাম্পাস। সংঘর্ষে একাধিক ছাত্র আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে জখম হয়েছে আইআইটি খড়গপুরের এক নিরাপত্তা আধিকারিক সহ ৩ নিরাপত্তা রক্ষী এবং একজন অধ্যাপকও। যদিও তাঁর আঘাত সামান্য বলেই জানা গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাতের দিকে। এই ব্যাপারে আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষর পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে কিছুই জানানো হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইআইটির কয়েকজন পড়ুয়া এই সংঘর্ষের কথা অবশ্য স্বীকার করেছেন। ঘটনায় পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে বুধবার সকাল থেকে আইআইটি চত্বরে ছাত্রদের আবাসন এলাকাগুলি থমথমে রয়েছে।
জানা গেছে মঙ্গলবার আইআইটি ক্যাম্পাসে অবস্থিত জিমখানার বিভিন্ন পদের জন্য ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন ছিল। জিমখানা হল পড়ুয়াদের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপের প্রতিষ্ঠান। একটি ইনডোর স্টেডিয়াম, মাল্টি জিম, সুইমিংপুল ইত্যাদি রয়েছে এই জায়গা বা তার আশেপাশে। এছাড়াও পড়ুয়াদের জন্য কিছু কল্যাণমূলক উদ্যোগ নেওয়া হয় এখান থেকে। তাই জিমখানা পরিচালন সমিতির পদগুলি পড়ুয়াদের জন্য বেশ সম্মানের বিশেষ করে VP বা সহসভাপতির পদটি। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে পড়ুয়াদের থাকার জন্য দেড় ডজনেরও বেশি আবাসন রয়েছে। এই আবাসনগুলির মধ্যে থেকে কোন আবাসনের বাসিন্দা এই VP পদে নির্বাচিত হবে তাই নিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ রেষারেষি হয়ে থাকে এই নির্বাচনকে ঘিরে কিন্তু তা যে সংঘর্ষের রূপ নেবে তা ধারণা করতে পারেনি কেউ।
দিনভর পড়ুয়াদের ভোটদান পর্ব শেষ হওয়ার পর শুরু হয় ভোট গণনা। রাত ১০টার কিছু আগে ভোট গণনা শেষ হয় এবং দেখা যায় জিমখানায় সহ সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হলের আবাসিক ছাত্র ব্রাহ্নজত সিং। আইআইটির ইন্টিগ্ৰেটেড বি টেকের জিও-ফিজিক্স বিভাগের পড়ুয়া ব্রাহ্নজতের পাশাপাশি এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন নেহেরু হল ও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল হলের দুই আবাসিক পড়ুয়া। ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এই দুটি হলের প্রার্থীকে পরাজিত করে ব্রহ্নজত সিং জয়ী হন। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরেই বিজয় মিছিলের প্রস্তুতি নেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হলের আবাসিক পড়ুয়ারা। তাঁদের সঙ্গে আরও তিনটি হলের পড়ুয়ারা যোগ দেন। জানা গিয়েছে জয়ী প্রার্থীকে নিয়ে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হলের আবাসিক পড়ুয়ারা বিজয় মিছিল নেহেরু ও প্যাটেল ছাত্র আবাসনের সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
কিন্তু কয়েকটি হলের পড়ুয়ারা সেই দিকে যেতে রাজি হচ্ছিলেননা। কারন প্রথমত: ওই নেহেরু, প্যাটেল ছাত্রাবাসগুলি মূলরাস্তা থেকে কিছুটা ভেতরে দিকে অবস্থিত। দ্বিতীয়ত: নেহেরু ছাত্রাবাসের আবাসিক ছাত্র যেহেতু নির্বাচনে পরাজিত সেই স্থল দিয়ে বিজয় মিছিল গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে। এই নিয়েই শুরু হয় তুমুল বচসা। তারপরেই শুরু হয়ে যায় দুপক্ষ পড়ুয়াদের মধ্যে সংঘর্ষ। উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি থেকে শুরু করে ধ্বস্তাধ্বস্তি ও ঠেলাঠেলি শুরু হয়। উত্তেজনা বেড়ে যায়। অভিযোগ সেইসময় বেশ কয়েকজন পড়ুয়া হকি স্টিক ও লাঠি নিয়ে মারধর শুরু করেন। রীতিমতো উত্তাল হয়ে ওঠে আইআইটি চত্বর।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইআইটির নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীদের একটি বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। খবর পেয়ে ছুটে আসেন নেহেরু ছাত্রাবাসের দায়িত্বে সহকারী ওয়ার্ডেন এবং আইআইটির এক অধ্যাপক। দুই পক্ষের ঝামেলা বন্ধ করতে গিয়ে তিনি সামান্য চোট পান। আর তিন নিরাপত্তা রক্ষী জখম হন। তারপরেই নবনির্বাচিত সহ সভাপতি ব্রহ্নজত সিং সকলকে শান্ত হতে অনুরোধ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। আইআইটি খড়গপুরের রেজিস্টার তমাল নাথ বলেছেন ” মঙ্গলবার ছাত্রদের নির্বাচন ছিল বলে জানি কিন্তু আমি ক্যাম্পাসের বাইরে থাকার কারনে অন্য কিছু জানতে পারিনি।’ বিটেক চতুর্থ বর্ষের এক পড়ুয়া বলেছেন ” যা কিছু হয়েছে সব মিটমাট হয়ে গিয়েছে। এই নিয়ে আমাদের আর কোনও কিছু বলার নেই।”