নরেশ জানা: দেশ জোড়া তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে শেষ অবধি আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur) প্রতিষ্ঠিত মেডিক্যাল কলেজের নাম ফের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রতিথযশা চিকিৎসক ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের নামেই। মঙ্গলবার আইআইটি খড়গপুরের প্রাক্তনীদের উদ্দেশ্যে নিজের তৃতীয় বছরের রিপোর্ট কার্ড পেশ করতে গিয়ে এমনটাই জানালেন প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর বীরেন্দ্র কুমার তিওয়ারি (Virendra Kumar Tewari)। উল্লেখ্য ২০২১ সালে ২৬০ শয্যার এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি উদ্বোধন করার সময় রাতারাতি নাম বদল করে দেওয়া হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জীর নামে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/12/IMG-20221228-WA0009.jpg)
এরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। এমন কী আইআইটি খড়গপুরের প্রাক্তন অধ্যাপক অজয় রায়ের নেতৃত্বে ৫৩ জন প্রাক্তনীও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ( Narendra Modi) চিঠি লিখে প্রতিবাদ করেন। কারন ২০২১ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি প্ৰধানমন্ত্রী এই পরিবর্তিত নামেই হাসপাতালটি উদ্বোধন করার কথা ঘোষণা করা হয়। ওই বছর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের মুখে ভারতীয় জনতা পার্টির আরাধ্য শ্যামাপ্রসাদের নামে হঠাৎ করে এই নাম পরিবর্তন রাজনৈতিক মহলেও ঝড় তুলেছিল যথেষ্ট। ঘটনার দেড় বছর ফের মেডিক্যাল কলেজের নাম ডঃ বিধানচন্দ্র রায়ের নামেই ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইআইটি খড়গপুরের ডিরেক্টর অধ্যাপক বীরেন্দ্র কুমার তিওয়ারি। অবশ্য মেডিক্যাল কলেজটির নাম বিধান চন্দ্র রায়ের নামে ফিরিয়ে আনা হলেও হাসপাতালের নাম শ্যামাপ্রসাদের নামেই রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ডিরেক্টর অধ্যাপক তিওয়ারি জানিয়েছেন কেন্দ্র সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী হাসপাতাল ও কলেজকে বিভাজিত করে এই দুটি পৃথক নামে নামাঙ্কিত করার প্রক্রিয়া চলছে।
উল্লেখ্য ২০০৭ সালে প্রথম এই কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম। সেই ভিত্তি প্রস্তরে নাম ছিল ডঃ বি সি রায় ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (Dr B.C. Roy Institute of Medical Sciences and Research)। আইআইটির প্রাক্তন অধ্যাপক ও বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (BESU) কলেজের উপাচার্য অজয় রায় ছিলেন এর উদ্যোক্তা। এরপর দীর্ঘকাল পেরিয়ে যায়। পরবর্তীকালে ফের প্রক্রিয়া শুরু হয়। মেডিক্যাল কলেজের কাজ এগিয়ে যায় এবং সম্পূর্ণ হয়। এরপর আইআইটি খড়গপুরের ৬৬ তম সমাবর্তনের প্রাক্কালে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এক মধ্যরাতে আইআইটি ডিরেক্টর অধ্যাপক তিওয়ারি তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করেন যে ২৩ফেব্রুয়ারি সমাবর্তনের দিন হাসপাতালের “শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স এন্ড রিসার্চ (Dr Syama Prasad Mookerjee Institute of Medical Sciences and Research)” নামে মেডিক্যাল কলেজের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করবেন প্রধান মন্ত্রী।
এরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায় রাজ্য এবং দেশ জুড়ে। আইআইটি খড়গপুরের কিছু প্রাক্তনী ব্যঙ্গ করে ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ” এরপর এঁরা আজাদ হলের নামও পাল্টে দেবে। উল্লেখ্য আজাদ হল আসলে মৌলানা আবুল কালাম।আজাদ নামাঙ্কিত একটি ছাত্রাবাসের নাম। এরপরই অজ্ঞাত এক কারনে প্রধানমন্ত্রী ওই হাসপাতাল উদ্বোধন করা থেকে বিরত থাকেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠান স্থগিত হয়ে যায়। রাতারাতি সাদা কাপড়ে মুড়ে দেওয়া হয় বাংলা, হিন্দি, ইংরাজি এবং সংস্কৃতে লেখা হাসপাতালের নামাঙ্কন। আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন অনিবার্য কারনে উদ্বোধন স্থগিত থাকল। যদিও পরবর্তীকালে শ্যামা প্রসাদ মুখার্জীর নামেই হাসপাতাল চালু হয়। বর্তমানে ২৬০ শয্যার ওই হাসপাতালের বহির্বিভাগ বা আউটডোর চালু হয়েছে।
দেশ জোড়া প্রাক্তনীদের কাছে রাখা নিজের রিপোর্ট কার্ডে অধ্যাপক তিওয়ারি বলেছেন, কেন্দ্র সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী হাসপাতালটি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর নামে এবং কলেজটি ডঃ বি সি রায় মাল্টি ফেসিলিটি মেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার (Dr. B.C Roy multifacility Research Center)
নামেই অভিহিত হবে। আমরা সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছি। তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ” আমরা ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ এমবিবিএস কোর্স চালু করতে ব্যর্থ হয়েছি তবে আগামীবর্ষ অর্থাৎ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে এই কোর্স চালু করতে পারব এই আশা করছি। ১০০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে এই কোর্স চালু করা হবে।