নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুর টাউন থানার প্রাক্তন আইসি রাজা মুখার্জীর বাসভবনে হানা দিল রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকরা। বুধবার বিকালের দিকে খড়গপুর শহরের প্রেমবাজার সংলগ্ন হিজলী-কো-অপারেটিভ সোসাইটির একটি বিলাসবহুল বাড়িতে হানা দেন দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকদের একটি দল।
জানা এক মহিলা পুলিশ আধিকারিক সহ মোট চারজনের একটি দল হানা দেয় ওই বাড়িতে। পরে জানা যায় ওই বাড়িটি রাজা মুখার্জীর। এই তল্লাশি চলে কয়েক ঘন্টা ধরে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে যায়। রাতের দিকে বেশকিছু নথি, নগদ টাকা ও সোনার গহনা বাজেয়াপ্ত করেছেন। যদিও এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি পুলিশ বা তল্লাশি চালানো আধিকারিকরা।
খড়গপুর শহরে শাসকদলের অত্যন্ত ঘনিষ্ট হিসাবে পরিচিত এই প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিকের বাড়িতে তল্লাশিতে কার্যত হতবাক হয়ে গেছে রাজনৈতিক মহল থেকে পুলিশ ও প্রশাসনিক মহল। খড়গপুরের বেতাজ বাদশা খড়গপুরের প্রাক্তন বিধায়ক এবং চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকারের সঙ্গে নজির বিহীন ঘনিষ্ঠতা ছিল রাজার। সেই রাজা মুখার্জীর বাড়িতে রাজ্যেরই দুর্নীতি শাখার আধিকারিকরা হানা দেওয়ায় সবাই এটা অনুভব করছেন যে, প্রয়োজনে কাউকেই ছাড়বেনা রাজ্য।
খড়গপুর শহরে দাপটে শাসন করা রাজা মুখার্জী বর্তমানে কোচবিহারে তুলনায় অত্যন্ত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন। ধরেই নেওয়া হয় যে দক্ষিনবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ থেকে যদি কাউকে পাঠানো হয় সেটা শাস্তিমূলক বদলি । রাজার বদলি সেই ইঙ্গিত দিয়েছিল। ২০১৯ খড়গপুর শহর বিধানসভার উপনির্বাচনের প্রাক্কালে আনা হয়েছিল রাজাকে। উপনির্বাচনের দায়িত্বে থাকা তৎকালীন তৃনমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ইচ্ছায় আনা হয় রাজা মুখার্জীকে। উদ্দেশ্য প্রদীপ সরকারকে জেতানো। মাত্র কয়েকমাস আগে জয়ী বিজেপিকে ২৫ হাজার ভোটে হারিয়ে জয়ী হন প্রদীপ সরকার। রাজার তখন জয় জয়কার। তখন তৃণমূলে উঠতে রাজা, বসতে রাজা। শাসক ঘনিষ্ট রাজা তখন পাত্তাও দিতেন না খড়গপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বা SDPOকেও।
কিন্তু পাশা বদলে যায় এই বিধানসভা নির্বাচনে। তৃনমূলের হৈ হৈ করে জেতার বাজারেও লজ্জাজনক পরাজয় তৃনমূলের তথা প্রদীপ সরকারের। শুভেন্দু অধিকারী তখন বিজেপিতে! এক মাসের মধ্যেই বদলি হয় রাজা মুখার্জী। তৃনমূলের হারার সমস্ত দায় বর্তায় সম্ভবতঃ রাজার ওপর।এর পরেই তাঁর কোচবিহারে বদলি। জানা গেছে আয়ের থেকে বেশি সম্পত্তি রাখার অভিযোগ তোলা হয়েছে রাজা মুখার্জির বিরুদ্ধে আর এই অভিযোগের তদন্ত করতে তাঁর বাড়িতে এসেছিলেন দুর্নীতি দমন শাখার পুলিশ ।
রাজার বাড়িতে তল্লাশির খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলেও, বিশেষ করে খড়গপুর টাউন থানায় কর্মরত শীর্ষ প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিকদের মধ্যে। ‘KGP বাংলার’ দপ্তরে ফোন করে জানতে চান কি হয়েছে খড়গপুরে।’