নিজস্ব সংবাদদাতা: পড়ে রইল কাঠামো সহ সারিবদ্ধ প্রতিমাগুলি। আর মাত্র সপ্তাহ তিনেক পরেই ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর সহ সংলগ্ন প্রায় ১০টি মন্ডপে যে প্রতিমাগুলি শোভা পেত আর যা দেখতে ভিড় উপচে পড়তে দর্শনার্থীদের, আপাতত: অপূর্ণ হয়েই থেকে গেল সেগুলি। নিয়ম করে প্রতিবছর চতুর্থীর আগেই চক্ষুদান হত, সেরকমই প্রস্তুতি ছিল এবারও।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2021/09/IMG-20210924-WA0002.jpg)
কিন্তু না, মৃন্ময়ী মায়ের আর চিন্ময়ী হয়ে ওঠা হলনা বোধহয়। তার আগেই আত্মহত্যা করলেন মৃৎশিল্পী রবীন্দ্রনাথ দাস। শুক্রবার নিজেরই সেই গ্রামীন স্টুডিও থেকে কিছুটা দুরেই তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আর সেই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শোকের সাথে সাথে দুশ্চিন্তা ছড়িয়ে পড়েছেন ক্লাব কর্তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে ৬৭ বছরের রবীন্দ্রনাথ দাস প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক আগে পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি থানার হলুদবাড়ি থেকে ভাগ্যের অন্বেষণে এসে পৌঁছেছিলেন
গোপীবল্লভপুরে। তখন অবশ্য জেলা ভাগ হয়নি। পুরোটাই মেদিনীপুর। তারপর শ্রীপাট আশ্রিত হয়ে থেকে যান এই বৈষ্ণব জনপদেই। তাঁর হাতের কারুকার্য চমৎকৃত করে এখানকার মোহন্তদের। বানাতে শুরু করেন প্রতিমা। ক্রমে তাঁর নাম ডাক শুরু হয়। একসময় বরাত পান গোপীবল্লভপুর থানা সার্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির দুর্গা প্রতিমা বানানোর।
আর সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর জয়যাত্রার। গোপীবল্লভপুর থানা সার্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির পুজোর প্রতিমা ছাড়াও একে একে বরাত জোটে আরও পুজো কমিটির দুর্গা প্রতিমা বানানোর। সাথে বাঙালির ১৩ পার্বনের অন্যান্য দেবদেবীর প্রতিমা বানানো শুরু করেন। গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্ৰাম, বেলিয়াবেড়া এলাকায় প্রায় সমস্ত পুজোর প্রতিমা সিজিন অনুযায়ী তৈরি করে পুজো কমিটির মন্ডপ ভরিয়ে তুলতেন দীর্ঘদিন ধরে। যার মধ্যে গোপীবল্লভপুরের প্রাচীন পুজো কমিটি গোপীবল্লভপুর থানা সার্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির প্রতিমা তৈরি করে আসছেন দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে।
এবছর গোপীবল্লভপুর থানা সার্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির প্রতিমা ছাড়াও নয়াগ্ৰাম,ছাতিনাশোল,মহাপাল এর মতো বেশ কয়েকটি বড় দুর্গাপূজা কমিটির প্রতিমা তৈরির বরাত নিয়েছিলেন। কয়েকজন কারিগর নিয়ে শিল্পীর কাজও চলছিল দ্রুত গতিতে কিন্তু তার মধ্যেই ঘটে গেল এই অঘটন। খবর পাওয়া গেছে স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য, কথাকাটাকাটির জেরেই বৃহস্পতিবার রাতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। শুক্রবার সকালে গোপীবল্লভপুরে তার কাজের জায়গার কিছুটা দুরেই ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় রবীন্দ্রনাথ দাস এর মৃতদেহ। খবর পেয়ে গোপীবল্লভপুর থানার পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ঝাড়গ্ৰাম জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। শিল্পীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য তদন্ত শুরু করেছে গোপীবল্লভপুর থানার পুলিশ।
এদিকে হঠাৎ করে পুজোর মুখে মৃৎশিল্পী মৃত্যু হওয়াতে অনেকটাই বিড়ম্বনায় গোপীবল্লভপুর থানা সার্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির পুজো উদ্যোক্তারা।পুজো কমিটির সম্পাদক শুভেন্দু দে জানান, “দীর্ঘদিন সফলভাবে মুর্তি তৈরি করেছেন রবীন্দ্রনাথ বাবু। এবছরেরও মুর্তি তৈরির কাজও শেষ করে এনেছিলেন। এখন এই মুহূর্তে
তাঁর এই অসমাপ্ত কাজ কী ভাবে শেষ করব সেটাই চিন্তার।” শোনা যাচ্ছে খবর পাওয়ার পরই নতুন শিল্পীর খোঁজ শুরু করেছেন বিভিন্ন পূজা কমিটি গুলি। তবে সেই কাজ শেষ অবধি কতটা ফুটিয়ে তোলা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সবাই। “যতই হোক, যে শিল্পী কাজটা শুরু করেন তাঁর একটা নিজস্ব ভাবনা থাকে। সেই ভাবনাকে ধরে অন্য শিল্পীর পক্ষে কাজটা শেষ করা বেশ কঠিন হবে।” জানালেন এক কর্মকর্তা।