নিজস্ব সংবাদদাতা: মঙ্গলবার হাতি ঢুকেছিল খড়গপুরের কলাইকুন্ডা এলাকায়। বুধবার ভোরে জাতীয় সড়ক পেরিয়ে কলাইকুন্ডা এলাকা থেকে হাতি ঢুকে গেল খড়গপুরের হরিয়াতাড়া এলাকায়। বনদপ্তর সূত্রে জানা গেছে বর্তমানে সাঁকরাইল থানার সীমান্ত থেকে ৫কিলোমিটার দুরে বাঁশপতরির জঙ্গলে অবস্থান করছে ১৫ থেকে ১৮টি হাতির দল। ফলে চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে বাঁশপতরি, ধ-ঢেমনা, মাকড়বিন্দা, নেকড়াশুলি, হরিয়াতাড়া, গেড়িয়াশুলি, শাকপাড়া ইত্যাদি এলাকার মানুষজনের। ফসলের ক্ষয়ক্ষতিতো আছেই তার সঙ্গে মাটি হতে বসেছে কালীপূজা আর গ্রামবাংলার সাধের পার্বন ভাইফোঁটাও।
স্থানীয় গ্রামগুলির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই সময় একের পর এক উৎসব পার্বন চলতে থাকে তাঁদের এলাকায়। বাঁধনা, কালীপূজা, ভাইফোঁটা বা ভাই দ্বিতীয়া কিন্তু যে ভাবে হঠাৎ করেই এলাকায় হাতির পাল এসে পড়েছে তাতে মাথায় উঠেছে উৎসব পার্বন। কালীপূজা বা বাঁধনার প্রথম দুদিন উৎসব রাতের। কিছু গ্রামে কালীপূজা হয়না তারা আশেপাশের গ্রামে যান পূজা দেখতে কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে গ্রামের রাস্তায় চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে কারন সন্ধ্যের পরই হাতি জঙ্গল ছেড়ে গ্রামের লাগোয়া ক্ষেতগুলিতে আসতে শুরু করে ফসল খাওয়ার জন্য।
গৃহবধূদের মনখারাপ হাতি এলাকায় ঢুকে পড়ার খবরে। গেড়িয়াশুলির প্রতিমা ঘোষ কিংবা নেকড়াশুলির অপর্ণা পালেরা জানিয়েছেন, এই সময় ভাইরা আসে বোনের বাড়িতে ভাইফোঁটা নেওয়ার জন্য। এখন সবাই ব্যস্ত মানুষ। হয়ত সকালে এসে বিকালে ফিরে যায়। কেউ কাজকম্ম সেরে আগের দিন সন্ধ্যায় আসে ফোঁটা নিয়ে সকালে বা দুপুরে ফিরে যায়। হাতি ঢোকার খবর পেয়ে অনেকের ভাই আসতেই চায়না। তাছাড়া আমরাই বা তাদের আসতে বলি কী করে যেখানে নিজের বাড়ির ছেলে মেয়েদের হাতির ভয়ে বিকালের পরে বাইরে যেতে বারণ করছি। ফলে আমাদের খুবই মন খারাপ। গতবছর করোনার জন্য উৎসব পার্বন সেভাবে পালন করতে পারিনি। এবছরও বোধহয় তাই হতে চলেছে। বছরে একটা মাত্র উৎসব আমাদের তাও যদি বছর বছর মার খায়!
ওদিকে বনদপ্তরের একটা আশঙ্কা রয়েছে যে হাতির পালকে খুব বেশিদিন একটা এলাকায় থাকতে দেওয়া যায়না। একই এলাকায় কিছুদিন হাতি থেকে গেলে ওই এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকে। এরফলে ওই এলাকায় ক্ষোভ, জনরোষ বাড়তে থাকে। তাই বনদপ্তর চায় হাতি এক এলাকা ছেড়ে যত দ্রুত সম্ভব অন্য এলাকায় যাক, ক্ষতি ভাগাভাগি হয়ে যাক। কিন্তু খড়গপুর বনবিভাগের এলাকায় হাতি তাড়ানো বা অন্যান্য কাজে নিয়োজিত অস্থায়ী বনকর্মীরা নানা বিষয়ে ক্ষুব্ধ বনদপ্তরের। তাঁদের দাবি তাঁদের পাওনা বকেয়া রয়েছে দীর্ঘদিনের। তাছাড়া তাঁদের সারাবছর নির্দিষ্টভাবে কাজ করানো হয়না, যখন তখন বসিয়ে দেওয়া হয়। এই সব দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন তাঁরা। তাই তারাও ঠিক করেছেন তাঁদের দাবি না মানলে হাতি তাড়ানোর কাজে অংশ নেবেননা তাঁরা। ফলে হাতি যদি বেশিদিন থেকে যায় তাহলে মুশকিলে পড়বে খড়গপুর বনবিভাগ।