নিজস্ব সংবাদদাতা: মাত্র আধ ঘন্টা আগেই এক বাইক চালকের সাথে মহিলাকে গল্প করতে দেখেছিলেন পথচারী এক ব্যক্তি। বাইকটি পাশে দাঁড় করানো। মহিলার মুখে সলাজ হাসি। ব্যক্তির মাথায় চাপানো হেলমেট। হেসে হেসে কথা বলছিলেন তাঁরা। কিছুক্ষণ পরেই খবর আসে ঘটনাস্থলে পড়ে রয়েছে এক মহিলার মৃতদেহ, গলার নলি কাটা! হলদিয়ার ভবানীপুর থানা এলাকার বাঁশখানা গ্রামে
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/04/Screenshot_20220421-214021_Blur-Photo.jpg)
বুধবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ হলদি নদী পাড়ের সাধনা ইটভাটা সংলগ্ন ঢালাই রাস্তার ওপর ম উপুড় পড়ে থাকা সেই দেহ দেখেই চমকে ওঠেন সেই পথচারী!এ তো সেই মেয়েটি! ঘটনার প্রায় ২৪ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও পরিচয় জানা যায়নি। কিন্তু পুলিশের ধারণা খুব দুরে কোথাও নয়, হলদিয়ার আশেপাশের এলাকা থেকেই মহিলাকে বাইকে চাপিয়ে নিয়ে এসেছিল আততায়ী।
বুধবার রাতের পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই
খুনের ক্লু খুঁজে পেতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন হলদিয়ার দায়িত্বে থাকা পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিস সুপার পার্থ ঘোষ এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিক। আশেপাশের গ্রামগুলিতে চষে বেড়িয়েছেন ভবানীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক, এসডিপিও হলদিয়া। পুলিশের বিশ্বাস দ্রুত কিনারা করা যাবে এই খুনের। আশেপাশের থানা এলাকায় বার্তা পাঠানো হয়েছে মহিলার সন্ধান চেয়ে। ঘটনাস্থলে ঠিক ওই সময়ে আ্যক্টিভ থাকা মোবাইল নম্বরগুলির সন্ধান চালানো হচ্ছে। ফলে জাল কেটে পালানোর উপায় নেই খুনির, এমনটাই মনে করছে পুলিশ।
যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে সেটি স্থানীয় ভাবে বাঁশখানার সোনারগাঁও বলে পরিচিত। অদূরেই হলদি সংলগ্ন নির্জন এলাকা জুড়ে ইউক্যালিপটাসের জঙ্গল। ঘটনাক্রমে ওই সময় বেশ কিছুক্ষণ লোডশেডিং ছিল। এমনই সময় ওই ঢালাই কংক্রিটের রাস্তা দিয়ে আসার সময় এক শাড়ি পরিহিতা মহিলা এবং এক বাইক আরোহী পুরুষকে দেখতে পেয়েছিলেন। তখন কাছাকাছি রাত ৮ টা।৪৫মিনিট পরে খবর পান ওই জঙ্গলের কাছে রাস্তার উপর এক মহিলা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। খবর পেয়েই কয়েকজনকে ছুটে আসেন। দুর্ঘটনা ভেবে হাতে করে একটি জলের বোতলও নিয়ে আসেন তিনি। ওই ব্যক্তি পুলিশকে জানান, বাইকের আলোতে ওই মহিলাকেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু পুরুষটির মাথায় হেলমেট থাকায় বোঝা যায়নি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিভিন্ন রাস্তার মুখে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের উপর জোর দেয় পুলিস। মহিলার পরণে নীল রঙের তাঁতের শাড়ি ও লাল রঙের ব্লাউজ ছিল। তাঁর হাতে সোনা বাঁধানো পলা ছিল। সব ঠিকঠাক ছিল। অর্থাৎ লুট বা চুরি মহিলাকে খুনের উদ্দেশ্য নয়। বছর তিরিশের ওই মহিলাকে আনা হয়েছিল গল্প করার ছলেই। পরিচিত জনের সঙ্গে আপত্তিও করেননি মহিলা। বিবাহবহির্ভূত কোনও সম্পর্ক, কোনো আত্মীয় বিবাদ? তবে একটা বিষয় নিশ্চিত খুনি পেশাদারি। নিখুঁত পরিকল্পনা আর খুনের হাতযশ খুনির। ঘটনাস্থল থেকে মিলেছে বেশকিছু রক্তমাখা টিস্যু পেপার। মনে হচ্ছে খুনের অস্ত্র তাই দিয়ে মুছে তা সঙ্গে করেই নিয়ে গেছে পুলিশ। তবে ঘটনার নৃশংসতা চমকে দিয়েছে হলদিয়াকে। এলাকায় আতঙ্কও ছড়িয়েছে বেশ কিছুটা।