নিজস্ব সংবাদদাতা : অসহ্য হয়ে উঠেছে পুলিশের তোলা যন্ত্রনা, রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে তোলা আদায়ের জন্য ঘটছে একের পর এক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। এমনই অভিযোগ তুলে উত্তাল হয়ে উঠল পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি। জনতার ক্রোধে জ্বলল পুলিশ গাড়ি।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/IMG-20220305-WA0014.jpg)
জনতার গনপিটুনির জেরে পুকুরে লাফ দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে হল এক পুলিশ কর্মীকে। শুক্রবার সকালে এক মহিলার মৃত্যুর ঘটনার জেরে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল ১১৬ বি জাতীয় সড়কের ওপর কাঁথির দইসাই এলাকা। পুলিশ যদিও তোলা আদায়ের ঘটনা অস্বীকার করেছে। ঘটনায় এখনও অবধি গ্রেফতার হয়েছেন ৫ ব্যক্তি।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে মৃতার নাম পদ্মাবতী মাহারা। বছর পঞ্চাশের পদ্মাবতী ও তাঁর আরও কয়েকজন মহিলা সঙ্গিনী একটি অটোতে চেপে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। এঁরা সবাই স্থানীয় বেতালিয়ার একটি পরচুলা কারখানার শ্রমিক। কামরদা এবং পশ্চিম কামরদা এলাকা থেকে দুর্ঘটনাগ্রস্থ অটোতে করে যাচ্ছিলেন তাঁরা।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/IMG-20220305-WA0013-1.jpg)
সকাল সাড়ে ৭ টা ঘটে দুর্ঘটনাটি। পুলিশ জানিয়েছে, কাঁথির দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী বাসটি সামনে থাকা ডাম্পারকে ওভারটেক করতে গিয়ে কাঁথিগামী যাত্রীবাহী অটোর সামনে ধাক্কা মারে। তার জেরেই ঘটে দুর্ঘটনা। ঘটনাস্থলেই মারা যান পদ্মাবতী। আহত হয়েছেন ৭ মহিলা সহ ৮ জন অটো আরোহী। তাঁদের মধ্যে অটোচালক মৃগাঙ্ক মণ্ডল সহ ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কাঁথি হাসপাতাল থেকে কলকাতায় স্থানান্তর করা হয়েছে তাঁদের। পুলিশের পক্ষ থেকে তোলা আদায়ের ঘটনা অস্বীকার করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে নেহাৎই একটি দুর্ঘটনা এটি। বাস চালক কোনও কারনে নিয়ন্ত্রণ হারানোতেই এই ঘটনা।
যদিও জনতার দাবি পুলিশের উল্টো। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ঘটনাস্থল লাগোয়া জাতীয় সড়কের ওপর একটি পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। বড় বড় লরি, ডাম্পার দাঁড় করিয়ে তোলা তুলছিল পুলিশ। সেই সময় কাঁথির দিক থেকে আসছিল বালিবোঝাই ডাম্পার ও যাত্রীবাহী বাসটি। দুজনে একে অপরকে টেক্কা দিচ্ছিল কিন্তু পুলিশের গাড়ি দেখে ডাম্পারটি গতি বাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এবং তখনই উল্টো দিক থেকে আসা অটোটি পড়ে যায় বাস ও ডাম্পারের মাঝে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/IMG-20220305-WA0015.jpg)
ধাক্কা খেয়ে কার্যত দলা পাকিয়ে যায় অটোটি। চোখের সামনেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ও মৃত্যু দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়ে জনতা। প্রথমেই তাঁরা ঘিরে ধরে পুলিশ ভ্যানটিকে। জনতার রণমূর্তি দেখেই পুলিশ ভ্যানটিকে ফেলেই এলাকা ছাড়ে। কিন্তু একজন পুলিশ কর্মী ধরা পড়ে যান জনতার হাতে। জনতার দাবি মদের নেশায় আচ্ছন্ন ছিলেন ওই পুলিশ কর্মী।
পুলিশ কর্মীকে নেশাগ্রস্ত দেখে আরও ক্ষেপে ওঠে জনতা। মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে মারতে থাকেন ওই পুলিশ কর্মীকে। জনতার হাত থেকে বাঁচতে ছুটতে থাকেন ওই পুলিশ কর্মী। পেছন পেছন জনতাও। ছুটতে ছুটতে বেশ কয়েকবার পড়েও যান তিনি। ওই অবস্থাতেও চলতে থাকে জনতার কিল চড়, উর্দি ধরে টানাটানি। এক সময় জুতো খুলে দৌড়াতে দেখা যায় ওই পুলিশ কর্মীকে। কিন্তু তাতেও মুক্তি পাননি তিনি। অবশেষে বাজারের পেছন দিকে একটি বড় জলাশয়ে ঝাঁপ দেন তিনি।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/IMG-20220305-WA0016.jpg)
কিন্তু জনতার ঢিল পড়তে থাকে। এরপর কোনও ক্রমে ডুব সাঁতার দিতে দিতে ওপারে উঠে বাঁচান নিজেকে। খবর পেয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ নিয়ে হাজির হন পুলিশের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা। আগুন নেভাতে আসে দমকল। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জও করতে হয় পুলিশকে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/IMG-20220305-WA0020.jpg)
পুলিশের বিরুদ্ধে তোলা আদায়ের অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন কাঁথির মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সোমনাথ সাহা।পুলিশের কাজে বাধা ও গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার অপরাধে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ঘটনার পর বাস নিয়ে গিয়ে মারিশদা থানায় আত্মসমর্পণ করেন চালক। দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা ডাম্পারটিতে ভাঙচুর চালান উত্তেজিত জনতা।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/IMG-20220305-WA0019.jpg)
প্রায় কয়েকঘন্টার চেষ্টায় স্বাভাবিক হয় ওই জাতীয় সড়কে যান চলাচল। পুলিশকে আক্রমনের ঘটনার পেছনে কোনও পরিকল্পনা ছিল কিনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুলিশের এক আধিকারিক বলেছেন, স্বতঃস্ফূর্ত বলে চালিয়ে দেওয়া ঘটনার পেছনে অনেক সময় সমাজবিরোধী স্বার্থও কাজ করে থাকে। এখানে সেরকম কোনও যোগ ছিল কী না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।