নিজস্ব সংবাদদাতা: যে সে কেউ নয়, খোদ ওয়ার্ড সভাপতির মা ই লড়াই করছেন দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে। তাঁকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে দল। সভাপতি পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন মা র মনোনয়ন তিনি প্রত্যাহার করাতে পারেন কিন্তু মা যদি প্রত্যাহারের অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন তার দায়িত্ব কী দল নেবে? বলাবাহুল্য এই ঘটনার পর দায়িত্ব নেয়নি দল। সভাপতির মা নির্দল হয়েই লড়াইয়ে নেমেছেন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আর দলের একটা অংশের কর্মীরাও নেমে পড়েছেন সভাপতির মায়ের হয়ে প্রচারে। ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষীরপাই পৌরসভা এলাকার।
রাজ্যের ১০৮টি পৌরসভার সাথে পশ্চিম মেদিনীপুরের ৭টি পৌরসভায় নির্বাচন হতে চলেছে আগামী ২৭শে ফেব্রুয়ারি। সেই ৭ পৌরসভার মধ্যে আবার ঘাটাল মহকুমাতেই হতে চলেছে ৫টি পৌরসভার নির্বাচন। ব্রিটিশ আমলে ঘটিত এই পৌরসভাগুলি আয়তনে অত্যন্ত ছোট যার মধ্যে ক্ষীরপাই পৌরসভা মাত্র ১০টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এই পৌরসভারই ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃনমূল সভাপতি মনোজ হালদারের মা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দলীয় প্রতীক নিয়ে লড়াইয়ে নামা প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে।
ঘটনার খবর পেয়েই তড়িঘড়ি তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। ১২ই ফেব্রুয়ারি ছিল সেই মনোনয়ন প্রত্যাহারের সর্বোচ্চ সীমা কিন্তু এক অদ্ভুদ শর্ত শুনে ফিরে আসতে হয়েছে সেই নেতৃত্বকে। সভাপতি মনোজ দলের নেতাদের বলেছেন, মা কে দিয়ে আমি মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতেই পারি কিন্তু তারপর মা যদি অপমানে আত্নহত্যা করে বসেন তাঁর দায়িত্ব দল নেবে কী? বলাবাহুল্য এরপর আর এগুতে পারেনি দল। এখন অফিসিয়াল আর আন-অফিসিয়াল তৃনমূল প্রার্থীর লড়াই জমে পুরো ক্ষীর!
উল্লেখ্য এই ওয়ার্ড থেকে দল টিকিট দিয়েছে অন্তরা সাহাকে। টিকিট পাওয়ার পরের দিন থেকেই প্রচারে নেমে পড়েছেন অন্তরা। দেওয়াল লিখনের পাশাপাশি শুরু করেছেন বাড়ি বাড়ি প্রচারও। কিন্তু প্রার্থী ঘোষণার পরের দিনই রাস্তায় নেমে পড়তে দেখা গেছে ওয়ার্ড সভাপতি মনোজ হালদারের মা সুনিতা হালদারকেও। চলছে তাঁর নামেও দেওয়াল লিখন। অন্তরার সাথে তিনিও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এরপর একাধিকবার জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব দের অনুরোধে নির্দল প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় অস্বস্তিতে তৃণমূল শিবির। মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে , তাই তৃণমূল কর্মীদের দেওয়া নির্দল প্রার্থী কে সরিয়ে কিভাবে তৃণমূলের সিম্বল পাওয়া প্রার্থী কে জয়লাভ করানো যায় এই নিয়ে বিপাকে তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
তৃণমূলের ওয়ার্ড সভাপতি মনোজ হালদার এর অভিযোগ” ওয়ার্ড থেকে প্রথমে সুনিতা হালদারের নাম ঠিক করে প্রার্থী তালিকা পাঠানো হয় জেলা নেতৃত্বকে, কিন্তু যখন নাম প্রকাশ হয় সেখানে দেখা যায় যে প্রার্থী তে নাম আছে অন্তরা সাহার, যাকে ওয়ার্ডের কেউ চেনেন না বলেই দাবি এই তৃণমূল নেতার। আর এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। তারাই মা কে জোর করে দাঁড় করিয়েছে।” ওয়ার্ড সভাপতির অনুগামীরা যেমন সভাপতির মা সুনিতা হালদার কে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন তেমনই দলের প্রার্থী অন্তরাকে নিয়ে শুরু করেছেন লড়াই। আর গোটা ক্ষীরপাই জুড়েই এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে দলেরই ‘এ’ টিম বনাম ‘বি’ টিমের লড়াইয়ে।
তৃনমূলের ঘাটাল সংগঠনিক জেলার সভাপতি আশিষ হুদাইত বলেন, ‘ চেষ্টা করা হয়েছিল ওনার প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করানোর জন্য। যদিও তা সম্ভব হয়নি। এখন তো আর সেটা সম্ভব নয়। আমরা এরপরও একটি প্রস্তাব দিয়েছি যে আগামী দু’দিনের মধ্যে হ্যান্ডবিল ছড়িয়ে জনসাধারণকে জানাতে পারেন যে তাঁরা লড়াই প্রত্যাহার করছেন এবং আবেদন করবেন দলীয় প্রার্থীকেই ভোট দেওয়ার জন্য। নচেৎ বিষয়টি আমরা জেলার নির্বাচনী পরিচালন সংক্রান্ত আহ্বায়কদের কাছে জানাবো। তারপর তাঁরা যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেই মত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।