নিজস্ব সংবাদদাতা: ১১ দিন গড়ালোনা ফের পশ্চিম মেদিনীপুরে আত্মহত্যা করলেন আরেক আলু চাষী। গত ২৬ফেব্রুয়ারী ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন জেলার গোয়ালতোড় থানার লক্ষনপুর গ্রামের দেবাশিস মান্না। এবার সেই তালিকায় নাম উঠল চন্দ্রকোনা থানা এলাকার যদুপুর গ্রামের রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর। পরিবার সূত্রে জানা গেছে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরও বাড়ি না ফেরায় তাঁর খোঁজ শুরু করেছিল পরিবারের লোকজন। পরে দেখা যায় বাড়ির অদূরেই রাস্তার এক পাশে পড়ে যন্ত্রনায় ছটফট করছেন তিনি। সাথে সাথে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে প্রথমে ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ও পরে স্থানান্তরিত করা হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি তাতেও। চিকিৎসারত অবস্থাতেই বুধবার ভোরে মৃত্যু হয় চক্রবর্তীর।
পরিবার দাবি করেছে, গত ২৪শে ফেব্রুয়ারী জেলার গড়বেতা, গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা এলাকা যা কিনা সবজি ও আলু চাষের ভান্ডার সেই জায়গাগুলোতে রাত ভর শিলা বৃষ্টি হয়েছিল।সেই শিলার স্তর এক দেড় ফুট উচ্চতায় আলু সহ পিঁয়াজ সবজি চাষের জমিতে জমাট বাঁধে। তাতেই ব্যাপক ক্ষতি হয় কৃষকদের। তার আগে চট চলদি আলু লাগানোর সাথে সাথে অতিবৃষ্টিতে সেই চাষ সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়। পরিবার সহ গ্রামের মানুষরা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ব্যাঙ্কের ঋণ মুকুব করার নোটীশ এসেছে গত ১০ দিনে দুবার। তার উপর মহাজনী তাগাদা। কিন্তু আলুর বেহাল দশায় ঋণ পরিশোধের উপায় খুঁজে না পেয়েই আত্মহনন করছেন রবীন্দ্রনাথ।
ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। সূত্রের খবর, বুধবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত হবে আত্মঘাতী কৃষকের। আত্মহত্যার পেছনে ঋণের বোঝা নাকি অন্য কোনো কারণ তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কৃষক মৃত্যুর কথা গ্রামে পৌঁছতেই রীতিমতো শোকের ছায়া গোটা গ্রাম জুড়ে।মৃত কৃষকের বৃদ্ধ মা সহ স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। ছোটো ছেলে প্রতিবন্ধী। তার চিকিৎসা খরচ করাতে গিয়েও ঋণ করতে হয়। বড় ছেলের বিএড পড়াতেও জমি বিক্রি করেন। গত চার বছর বিএড করে গৃহবন্দী। ফলে একটা বিরাট অংকের ঋণের বোঝা। তার উপর পরপর তিন বছরে চার বার ফসলের ক্ষতি হওয়ায় সর্বশান্ত হওয়া এমন কৃষক শেষ পর্যন্ত ঋণের বোঝায় এবং সরকারী ভাবে ক্ষতিপূরনের কোনো আশ্বাস না থাকায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলেন।
এদিকে এই ঘটনাকে ধরে গত ৩মাসে চারজন কৃষক শুধু চন্দ্রকোনাতেই আত্মহত্যা করলেন বলে জানা গেছে। গত ডিসেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের জেরে ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই সব এলাকা। ওই সময় একই দিনে চন্দ্রকোনা থানা এলাকার দুই আলুচাষি আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁরা হলেন ধান্যঝাটি গ্রামের ভোলানাথ বায়েন ও আগরপাড়া গ্রামের উত্তম খান। ওই সময় আরও এক কৃষক আত্মহত্যা করেছিলেন বলে জানা গেছিল। বুধবার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর মৃত্যুর সাথে যা চারজনে গিয়ে দাঁড়ালো। কৃষকরা জানাচ্ছেন, শুরুতে সমবায়গুলিকে ঘিরে ঋণমুকুবের জন্য আন্দোলন শুরু হলেও বর্তমান তা ধামাচাপা পড়ে গেছে। কৃষকদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। সরকার কোনও উদ্যোগ না নিলে এই অবস্থা চলতে থাকবেই, আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।