নিজস্ব সংবাদদাতা: এক আধ টাকা নয়, দশ হাজার টাকা কুড়িয়ে পেয়ে থানায় গিয়ে জমা দিয়ে নজিরবিহীন সততার নজির রাখল এক হত দরিদ্র পরিবারের খুদে পড়ুয়া। অভাব আর অনটনের সংসারে বেড়ে ওঠা এই সততা মুগ্ধ করেছে পুলিশকেও। যেখানে স্বচ্ছল অবস্থাপন্ন মানুষরা কুড়িয়ে পাওয়া টাকার লোভ সামলাতে ইতস্ততঃ বোধ করে সেখানে একটি দরিদ্র পরিবারের বাবা মার এই শিক্ষা সত্যি সত্যি প্রশংসনীয়। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার বেলার দিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থানা এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ঘাটাল যোগদা সৎসঙ্গ শ্রীযুক্তেশ্বর বিদ্যাপীঠ স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র অজয় মান্না আজ সকালে আজাদ হিন্দ ক্লাবের সামনে রাস্তায় একটি টাকা ভর্তি ব্যাগ কুড়িয়ে পায়। ব্যাগের মধ্যে ছিল কিছু নথিপত্র ও নগদ দশহাজার টাকা। এরপরই অজয় বাড়ি গিয়ে বিষয়টি জানায় তার পরিবারকে। ব্যাগের ভেতরে এত টাকা দেখে চমকে উঠে তার পরিবারও। অজয় পরিবারকে জানায় যে ওই টাকা সে ফেরৎ দিতে চায় যার টাকা তাকে। সেইমত অজয় তার বাবাকে নিয়ে পৌঁছে যায় ঘাটাল থানায়।
ঘাটাল থানার পুলিশ ব্যাগের ভেতরে থাকা নথিপত্র খতিয়ে দেখে জানতে পারে ওই টাকা সহ ব্যাগটি ঘাটাল থানা এলাকারই বলরামপুরের বাসিন্দা নান্টু ভূঁইয়ার। নান্টু ভূঁইয়া ছোটখাটো ব্যবসা করেন। ব্যবসার কাজে বেরিয়েই সকালে হারিয়ে ফেলেন তার টাকা ভর্তি ব্যাগটি। নান্টু তখন পাগলের মত ওই ব্যাগ খুঁজছিলেন এদিক ওদিক। জনে জনে জিজ্ঞাসা করে ব্যাগের সন্ধান করতে থাকেন। ইতিমধ্যে পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে হাজির হন থানায়। এরপর প্রমাণ দাখিল করে ওই স্কুলছাত্রের হাত থেকে ফিরিয়ে নেন কুড়িয়ে পেওয়া টাকা ভর্তি ব্যাগটি।
হারানো টাকা ফেরৎ দিয়ে চোখে জল নান্টু মান্নার।টাকা যে ফেরৎ পাওয়া যাবে স্বপ্নেই কল্পনা করেননি তিনি। নান্টু বলেন, ” জীবনভর শুধু মানুষের টাকা হারানোর গল্পই শুনেছি। হারানো টাকা ফেরৎ পেতে শুনিনি। সেই ঘটনা ঘটল আমার সঙ্গে। এই টাকাই আমার সর্বস্ব, আমার পুঁজি। ওই বাচ্চা ছেলেটা যেন দেবদূত। আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি ওর যেন মঙ্গল হয়। অনেক বড় মানুষ হয়।” এই সততার জন্য এদিন ঘাটাল থানার পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয় অজয়কে। দেওয়া হয় একটি স্কুল ব্যাগ। ঘাটাল থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক দেবাংশু ভৌমিক জানান, ‘ একটি কিশোরের এই সততা আমাদের সবাইকেই শিক্ষা দিল। কিশোর মনের সততা বাঁচিয়ে রাখতে পারলে আমাদের সমাজ আরও সুন্দর হয়ে উঠতে পারে।’