Saturday, July 27, 2024

Keshpur: কাটমানি দিতে না পারায় আবাস যোজনার টাকা বরাদ্দ করা হল অন্যদের! জেলাশাসককে অভিযোগ কেশপুরের বাসিন্দাদের

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসার। ছাদহীন ফুটোফাটা দেওয়াল। সরকারি নিয়মে এঁদের জন্যই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা। সেই মত বরাদ্দও হয়েছে সরকারি প্রকল্প। কিন্তু স্থানীয় নেতাদের কাটমানি দিতে পারেনি তাঁরা। তাই তাঁদের প্রকল্প দিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্যদের, যাঁরা কাটমানি দিতে পেরেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর ব্লকের কলাগ্রামে এমন ৭৪ টি পরিবার থেকে এমনই অভিযোগ দায়ের হল জেলাশাসক সহ অন্যান্য দপ্তরে।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে
ঘর মেলেনা যাঁদের

জানা গেছে এই অভিযোগ দায়ের হয়েছে , কেশপুর ব্লকের কলাগ্রাম পঞ্চায়েতের কলাগ্রাম, কানাখালি, আমডুবি, উচাহার, বাঁশগেড়‍্যা মিলিয়ে ১০ টিরও বেশী গ্রাম থেকে। যেমন কানাখালি গ্রামের বাসিন্দা শীতল মল্লিক জানিয়েছেন, তিনি একটি ছিটে বেড়ার ঘরে বাস করেন। ২০১৭-১৮ সালে তাঁর নামে বাড়ি বরাদ্দ হলেও সেই বাড়ি তৈরির টাকা আজ পর্যন্ত পাননি তিনি। শীতলবাবুর অভিযোগ, তাঁর নামে যখন বাড়ি বরাদ্দ হয় তখন স্থানীয় নেতারা তাঁর থেকে ৩০হাজার টাকার দাবি করে। কিন্তু সেই টাকা দিতে না পারায় তাঁর বাড়ি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে অন্যজনকে। শীতলবাবু বলেন তপন মল্লিককে এই বাড়ি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।

কাটবে তো এই বর্ষা?

এই তপন মল্লিক স্বীকার করে নেন যে স্থানীয় এক নেতাকে ১০হাজার টাকা দেওয়াতেই তিনি এই বাড়ি পেয়েছেন। তাঁর অ্যাকাউন্ডে ১লক্ষ ৩০হাজার টাকা ঢুকেছে। একই অভিযোগ কলাগ্রামের বাসিন্দা আনন্দ দলুইয়ের। তাঁর নামেও ২০১৮-১৯ সালে বাড়ি তৈরির টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু আজও বাড়ি পাননি তিনি। বরং টাকা ঢুকেছে অন্যের অ্যাকাউন্টে। অভিযোগ, সবটাই হয়েছে তৎকালীন প্রধান হাবিবুর রহমানের মদতে। আবার হাবিবুরের দাবি বিডিও অফিসের কর্তাদের ভুলেই এমনটা হয়েছে।

সরকারি বাড়ি যে টাকার বিনিময়ে কিনেছেন এমন কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।
কিংকর মল্লিক নামে কলাগ্রামের ওই ব্যক্তি বলেছেন, তিনি কোনো দিনই আবাস যোজনার জন্য আবেদন করেন নি। কিন্তু কিছু নেতার কাছে প্রস্তাব পাওয়ার পর অগ্রিম ১০ হাজার টাকা স্থানীয় কলাগ্রাম তৃণমূল দপ্তরে জমা দিয়ে তিনি আবাস যোজনার টাকা পেয়েছেন। তাও পুরো টাকা পাননি।এক লক্ষ বাহাত্তর হাজার টাকার মধ্যে মাত্র এক লক্ষ তিরিশ হাজার টাকা পান। বাকী ৪২ হাজার সহ অগ্রিম ১০ হাজার টাকা তৃণমূল নেতারা নেয় বলে ক্যামেরার সামনেই স্বীকার করেছেন কিঙ্কর।

এদিকে বর্ষা আসায় ঘোর সঙ্কটে ওই ভয়ানক দরিদ্র পরিবারগুলি। কারোর বাড়ির মাটির দেওয়াল ধসে গিয়েছে, ঝড়ে কারোর বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে, কারোর বাড়ির দেওয়ালে আবার বড় বড় ফাটল, যেকোনও মুহূর্তে ধসে গিয়ে বিপদ ঘটতে পারে। গত বছর অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারনে সেই ভগ্ন ঘর গুলি আরও দূর্বল হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই চলতি বর্ষায় এইসব পরিবারের কপালে ফের দুশ্চিন্তায় ও আতংকে কপালে ভাঁজ পড়েছে। বাড়িগুলি যে মেরামত করবে, সেটুকুও অর্থ নেই তাঁদের কাছে। দিন মজুরী জুঠলে খাবার সংস্থান হয় এমন পরিবার গুলির। কয়েকটি বাঁশের খুঁটি পুঁতে ত্রিপল দিয়ে ঘিরে কোনওরকমে দিনযাপন করছেন তাঁরা। অথচ এঁদের প্রত্যেকের নামেই ২০১৬-১৭, ১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ সালের সময়সীমার বাংলা আবাস যোজনায় বাড়ি বরাদ্দ হয়েছিল!

কেশপুরের বিডিও দীপক কুমার ঘোষ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। বাকিটা তদন্ত করে দেখা হবে। সরকারি প্রকল্পে এধরনের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না বলে তিনি জানান। কেশপুরের তৃনমুল বিধায়ক ও পঞ্চায়েত দপ্তরের প্রতি মন্ত্রী শিউলী সাহা আবার জানিয়েছেন, এমন অভিযোগের প্রমান না মিললে মানহানির মামলা করা হবে। অবশ্য দোষী প্রমানিত হলেও শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

কিছুদিন আগে ঠিক এমনটাই অভিযোগ এসেছিল
গড়বেতা ১ ব্লকের সন্ধিপুর থেকে। অভিযোগ ৪২টি পরিবারের আবাস যোজনার বরাদ্দ টাকা কাটমানির বিনিময়ে পরিচিতদের পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনায় এক জন গ্রেপ্তার হয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন বারংবার দলের নেতাদের কাটমানির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন তখন সেই হুঁশিয়ারিতে থোড়াই কর্ণপাত করছে স্থানীয় নেতারা? গরিবের রক্তচুষে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেওয়াতেই ব্যস্ত তাঁরা।

- Advertisement -
Latest news
Related news