নিজস্ব সংবাদদাতা: বিছানাটা যেন রাজধানী কিয়েভ আর তারই দখল নিয়ে চলছে ইউক্রেন আর রাশিয়ার লড়াই! সাত সকালেই ঘরের মধ্যে মিসাইলের হিসাহিসানি লড়াই, ফোঁস ফোঁসানির তর্জন গর্জন শুনে ছুটে যান বাড়ির গৃহকর্তা। আর ঘটনা দেখেই চক্ষু চড়কগাছ তাঁর। বিছানার উপর দুই বিষধর সাপের লড়াই চলছে। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি নয়।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/IMG-20220307-WA0013.jpg)
সুযোগ পেলেই একে অপরের শরীরে ছোবল মেরেই চলেছে। একজন এগিয়ে আসে তো অন্যজন পেছায়। ফের দম নিয়ে অন্যজন এগিয়ে আসে। সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থানার খড়ার পৌরসভা এলাকার এই ঘটনার খবর পেয়েই জুটে যায় শয়ে শয়ে মানুষ। আতঙ্কিত গৃহকর্তা অবশেষে খবর দেন বনদপ্তরে। সাপ দুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান তাঁরা। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন গৃহস্থ।
খড়ারের বাসিন্দা অরুপ পারিয়াল যাঁর বিছানার মধ্যেই এই লড়াই হয়েছিল জানিয়েছেন, ‘ সাপের জোড় বা শঙ্খ লাগা বলতে আমরা যা দেখেছি এ জিনিস তা’নয়। দুটি বিশাল, প্রমান আকারের ফনাধর একে উপরের ওপর প্রবল আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। যেন কেউ কারও জায়গা ছাড়তে রাজি নয়। আমার মনে হচ্ছে খরিশ ও গোখরো সাপের মধ্যে লড়াই লেগেছিল জায়গার দখল নিয়ে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/IMG-20220307-WA0015-1.jpg)
দীর্ঘক্ষন এই লড়াই চলেছে। পরে স্থানীয় মানুষদের ভিড় জমতে শুরু করে। চিৎকার-চেঁচামেচিতে বাড়ির ভেতরেই থাকা একটি গর্তের মধ্যে প্রবেশ করে সাপ দুটি। এরপর খবর পাঠানো হয় দাসপুর সুলতাননগরে খবর পেয়ে দাসপুরের সুলতাননগর অবস্থিত বনদপ্তরের বিট অফিসে। ওখানকার কর্মীরা এসে সাপ দুটি উদ্ধার করে নিয়ে যান।
কিন্তু সাপের লড়াই নাকি সাপের মিলন বা শঙ্খলাগার ঘটনা এটি? বনদপ্তরের রিকভারি টিমের সদস্য মলয় ঘোষের মতে, এটি লড়াই। তিনি বলেন,” এখন মেটিং বা সঙ্গমের সময় নয়। সাধারণ ভাবে প্রাক বর্ষা বা বর্ষায় সাপেদের মেটিং হয়ে থাকে। দুটি সাপের শরীরেই আমরা বেশকিছু আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি। অর্থাৎ একে অপরকে প্রবল আক্রোশে দংশন করেছে। মনে হচ্ছে একটি সাপ এই বাড়িতে বা আশেপাশেই থাকত যেখানে ইঁদুর কিংবা অন্যকিছুর অস্তিত্ব পেয়ে অন্য একটি সাপ ঢুকে পড়েছে। আর অন্যজন সেটা মানতে রাজি নয়। আমরা আহত সাপদুটির ক্ষত নিরাময় করেই নিকটবর্তী কোনও জঙ্গলে ছেড়ে দেব। ” বনকর্মীদের মতে সাপদুটি (Naja kaouthia, monocled cobra) কেউটে বা গোখরা প্রজাতির সাপ যা স্থানীয় ভাবে খরিস বলেও পরিচিত।
বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, সাধারণভাবে জুন জুলাই মাস সাপের মিলনের আদর্শ সময়। মেটিংয়ের সময় সাপেরা তর্জন গর্জন করেনা। তারা একে অপরকে জড়িয়ে জননাঙ্গ প্রতিস্থাপন করে। কখনও দুজনেই মাটিতে জড়িয়ে থাকে আবার কখনও একে অপরের ভরে উঠে দাঁড়ায়। মৃদু হিসাহিসানি শব্দ হয় শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া বা ছাড়ার জন্য। শীত কমে যাওয়ায় মাস খানেক হল শীতঘুম বা হাইবারনেশন (Hibernation) থেকে বেরিয়ে এসেছে সাপ। এই সময় খাওয়ার পাশাপাশি সাপেদের শরীরে প্রোটিনের চাহিদাও বেড়ে যায়। যে কারনে মারাত্মক হয়ে ওঠে সাপের দল। এই সময় নিজের বিচরণ এলাকা নিয়ে সাপ প্রতিষ্পর্ধি হয়ে উঠতেই পারে।”
সাপেদের যাই হোকনা কেন ঘটনায় একটা জিনিস পরিস্কার যে বড় বাঁচা বেঁচে গেছেন গৃহস্থের পরিবার। মাটির বাড়ির দেওয়াল ও মেঝেতে ইঁদুরের করে রাখা গর্তে কখন যে দুটি বিষধর ঠাঁই নিয়েছে বা নেওয়ার চেষ্টা করেছিল তা টেরই পাননি পারিয়াল পরিবার। অসাবধানতায় একবার সাপের গায়ে পা পড়ে গেলে জীবন নিয়ে টানাটানি হতে পারত। লড়াইয়ের নেশায় সাপদুটি নিজেদের অস্তিত্ব না জানান দিলে বোঝা মুশকিল ছিল। অন্ততঃ একটি সাপ তো ঘরে বা ঘরের আনাচে কানাচে থাকতই। দুটি সাপই পূর্ণবয়স্ক ফলে যথেষ্ট পরিমাণ বিষ ধারণ করে আছে তারা যা মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট।