নিজস্ব সংবাদদাতা: লকডাউনে পড়ুয়াদের মধ্যে কী পরিমাণ স্মার্টফোন নির্ভরতা বেড়েছে তারই প্রমাণ পাওয়া গেল পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানা এলাকার আলোক কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ের দুই ছাত্র আবাসন থেকে পালিয়ে গিয়ে খড়গপুরের একটি হোটেলে কাজ নিয়েছে শুধুমাত্র পয়সা জমিয়ে মোবাইল কিনবে বলে। বুধবার হোস্টেল থেকে জামা কাপড় সেলাই করার নাম করে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়দুই নবমশ্রেণীর পড়ুয়া
গোপীনাথ কুইলা ও বিদ্যুৎ মন্ডল। গোপীনাথের বাড়ি ডেবরা থানারই ডুঁয়া অঞ্চলে এবং বিদ্যুৎ কেশপুর এলাকার আনন্দপুরের বাসিন্দা। দুজনে একই রুমে থাকত। মঙ্গলবার দুজনেই বাড়ি থেকে হোস্টেলে এসেছিল। স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বেগ ছড়ায় হোস্টেল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের মধ্যে। বিভিন্ন আত্মীয় বাড়িতে খোঁজ খবর করার পরও তাদের না পেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকরা।
পুলিশ জানায় ২৪ ঘন্টা আরও নিবিড় খোঁজ করতে। প্রায় ১৮ ঘন্টা পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে গোপীনাথ একটি অজানা নম্বর থেকে ফোন করে তার মা কে জানায়, বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশ না করার জন্য। তারা এও জানায় যে, খড়গপুরে একটি হোটেলে কাজ নিয়েছে তারা। ওই হোটেল ভালো বেতন দেবে বলেছে। সেই টাকা জমিয়ে মোবাইল কিনে বাড়ি ফিরবে তারা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিখিল মন্ডল জানিয়েছেন, ছেলে দুটি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই আমরা বলেছিলাম লকডাউন পড়ুয়াদের মধ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। তাদের পড়ার মনোযোগ কমে গিয়েছে, চঞ্চলতা বেড়েছে আর বেড়েছে স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রবণতা। এই ঘটনা সেটাই প্রমান করে দিল।
উল্লেখ্য কয়েকদিনের ছুটি কাটিয়ে মঙ্গলবারই হোস্টেলে ফেরে দুই ছাত্র। তারপর বুধবার বিকালে জামা কাপড় সেলাই করার নামে ওই দুই পড়ুয়া বেরিয়ে গেছিলেন স্থানীয় আলোককেন্দ্র বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাজারে তারপর আর তাদের আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। স্কুল এবং হোস্টেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন ওই দুই ছাত্রের নাম গোপীনাথ কুইলা ও বিদ্যুৎ মন্ডল। গোপীনাথের বাড়ি ডেবরা থানারই ডুঁয়া অঞ্চলে এবং বিদ্যুৎ কেশপুর এলাকার আনন্দপুরের বাসিন্দা। দুজনে একই রুমে থাকত। খবর পেয়েই ছুটে এসেছেন ডুঁয়ার পপন এলাকার নিখোঁজ ছাত্র গোপীনাথের মা দ্বীপ্তি কুইলা। তিনি বলেছেন, ‘বাড়িতে কোনও গন্ডগোল হয়নি। গ্রামের একটি পূজা উপলক্ষ্যে বাড়ি গিয়েছিল গোপীনাথ এবং মঙ্গলবার বিকালেই আমরা তাকে হোস্টেলে ছেড়ে দিয়ে গেছি। এরপর হোস্টেলে কিছু হয়েছে কীনা আমরা বুঝতে পারছিনা।’
গোপীনাথের এক আত্মীয় জানান, “ওরা যে সাইকেলে করে আলোককেন্দ্র বাজারে গিয়েছিল সেই সাইকেলটি বাজারেই ছিল। আমরা জানতে পেরেছি ওই দুজন বিকাল সাড়ে পাঁচটার পর একটা বাস ধরে ডেবরার দিকে গিয়েছিল। কিন্তু ডেবরা থেকে কোথায় গেছে তার হদিস পাওয়া যাচ্ছেনা। এখন বোঝা যাচ্ছে ওরা খড়গপুরেই চলে গেছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই ছাত্র দুটি কী আগে থেকেই পরিকল্পনা করে এসেছিল হোটেলে যাওয়ার জন্য, তারা কী আগে থেকেই হোটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল নাকি গতকালই তারা হোটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ জোগাড় করেছে।
হোস্টেল সুপার ভূঁইয়া বলছেন, ‘লকডাউনের পর থেকেই পড়ুয়াদের মধ্যে একটা অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে যারমধ্যে যেটা প্রকট হয়ে উঠছে তা হল অনেকেরই পড়ার অভ্যাসটাই নষ্ট হয়ে গেছে। খুবই চঞ্চলতা, পড়াশুনায় অনাগ্রহ গ্রাস করেছে। সেই প্রবণতা থেকেই হোস্টেলের বদ্ধজীবন কাটাতে এটা করল কী না বুঝতে পারছিনা।” ছাত্রদের অভিভাবক ও শিক্ষকরা খড়গপুরের ওই হোটেলের দিকে রওনা দিয়েছেন।