শশাঙ্ক প্রধান: পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় লুট ও গণধর্ষনের ঘটনায় ধৃত আরও দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। আর এই নিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় মোট ৯জন গ্রেফতার হল। ধৃতদের মধ্যে ৪জনকে ৬দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ। ধৃতদের প্রায় প্রত্যেকেই স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্য। সরকার অনুমোদিত এই ক্লাবটি রাজ্য সরকারের বিভিন্ন ধরনের আর্থিক অনুদান পেয়ে থাকত বলে জানা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের দুর্গাপূজা করার জন্য ক্লাবগুলিকে সরকারি অনুদান দেওয়ার ঘোষণা করার পরই রাজ্য জুড়ে ফের সমালোচনার ঝড় বইছে। আর সেই ঝড়ের মধ্যেই এই তথ্য আরও একবার ক্লাবগুলিকে লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ডেবরার ভরতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভগবানপুর নামক ওই গ্রামের ঘটনায় দুই তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার ভোর আড়াইটা থেকে পাঁচটা অবধি। দুই তরুণীকে প্রায় ১০জন ক্লাব সদস্য একের পর ধর্ষণ করে যায়। শুধু তাই নয় এর আগে ওই তরুণীর সঙ্গে থাকা ড্যান্স গ্রুপের দুই যুবককে ব্যাপক মারধর করার পর তাঁদের কাছে থাকা প্রায় ১১ হাজার টাকা জরিমানার নামে লুট করা হয়। গোটা ঘটনায় আতঙ্কিত ওই দুই যুবকের একজন জানিয়েছেন, ” এটাই আমাদের জীবিকা। নাচ-গান অর্কেস্ট্রা করে মানুষের মনোরঞ্জন করি। আমাদের হয়ত শিল্পী বলা যায়না কিন্তু চোর তো বলতে পারবেননা। আমরা খেটে খাই। রবিবার মহড়া দিতে দিতে রাত হয়ে যায় বলে আমরা আশ্রয় চেয়েছিলাম আমাদেরই এক পরিচিত দিদির ঘরে। উনি আশ্রয় দিয়েছিলেন মায়ের মত। আমরা তো সেই অর্থে ওই গ্রামেরই আশ্রিত ছিলাম। তার প্রতিদান এমন ভাবে দিল? ওটা ক্লাব নাকি শয়তানের আড্ডা? আমরা কোথাও গেলে এই ক্লাবগুলির ওপরই তো ভরসা করি? গ্রামের মানুষের কাছে, ওই এলাকার রাজনৈতিক দলের কাছে আমার আবেদন, ভেঙে গুঁড়িয়ে দিন ওই ক্লাব।”
উল্লেখ্য ওই ড্যান্স গ্রুপের মোট ৩ যুবতী ও ২ যুবক আশ্রয় নিয়েছিলেন ভগবানপুর গ্রামের এক পরিচিত বিধবার বাড়ি। খবর পেয়ে রাত ৯ টায় প্রথম শাসিয়ে যায় ওই ক্লাবের সদস্যরা। দাবি করে বের করে দিতে হবে ওই ৫ জনকে। কিন্ত অতরাতে আশ্রিতাদের বের করে দিতে রাজি হননি ওই গৃহবধূ। যে কারনে দ্বিতীয় দফায় ওই বিধবা গৃহবধূ তাঁর শ্বশুর ও সন্তানকে হেনস্থা ও মারধর করা হয়। তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ড্যান্সগ্রুপের ২ যুবককে। ক্লাবে নিয়ে গিয়ে তাঁদের মারধরের পর জরিমানা বাবদ ছিনিয়ে নেওয়া হয় ১১হাজার টাকা। এরপর ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁদের। রাত ১টা নাগাদ ফের হামলা চালানো হয় এবং এরপর তুলে আনা হয় ৩ যুবতীকে। খড়গপুর ও কেশিয়াড়ী এলাকার ওই যুবতীদের মধ্যে ১ জন কোনও মতে পালিয়ে সারারাত একটি ঝোপের আড়ালে কাটায়। মদ্যপ ক্লাব সদস্যরা তাকে খুঁজে বের করতে পারেনি। এরপরই দুই যুবতীর টানা যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা চলে সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে! অভিযুক্তরা অধিকাংশই ক্লাবের হোমড়া-চোমড়া সদস্য বলেও জানা গেছে। গোটা ঘটনায় ক্লাব সম্পর্কে ধারনাই বদলে গেছে ওই এলাকার সাধারণ মানুষের। মানুষের বিপদে যাঁদের থাকার কথা তারাই কিনা অসহায় দুই আশ্রিতা যুবতীকে ধর্ষণ করেছে? এমন ক্লাব রেখে কী হবে? প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষই।
ওই ক্লাব সদস্যদের মধ্যে আবার এলাকার দুটি রাজনৈতিক দলের কর্মীও রয়েছেন যার বেশিরভাগ আবার শাসকদলের কর্মী। যদিও ডেবরা ব্লকের তৃনমূল সভাপতি রাধাকান্ত মাইতি বলেছেন, ” এই নক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের পেছনে দল থাকছেনা। পুলিশ উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করুক প্রকৃত দোষীদের। এটা একটা সামাজিক অবক্ষয়, এখানে রাজনীতি গৌণ। দল এই ধরনের ঘটনায় কোনও সহানুভূতি দেখাবেনা।”