নিজস্ব সংবাদদাতা: আইআইটি খড়গপুরের( IIT Kharagpur) ঝাঁ চকচকে ক্যাম্পাসে নয়, আসল দেশ রয়েছে রুখু সুখু জঙ্গলের ঊষর প্রান্তরে। দেশ মানে সুন্দর প্রকৃতি আবার দেশ মানে দুমুঠো খাওয়ার জন্য কঠিন কঠোর লড়াই। বন্ধু মানে ইংলিশ মিডিয়াম ক্লাসের টানটান ইউনিফর্ম পরা বৃন্দা, সোমদত্তা, রাসেলিয়ারাই নয়, চলো দেখি আসি কেমন আছে কেমন আছে জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম জেলার প্রান্তিক প্রান্তরে থাকা টিকারামপুর প্রাইমারী স্কুলের সালমা, দেবিকা, লক্ষ্মীমনিরা? আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসের বাসিন্দা আর্যা ও তোর্ষারএবারের জন্মদিন পালন হল ঝাড়গ্রাম জেলার জঙ্গলঘেরা গ্রাম টিকারামপুরেই।
তোর্ষা আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসে অবস্থিত সেন্ট আ্যগনেস (St. Agnes) স্কুলের তৃতীয় শ্রেণী আর আর্যাও ওই ক্যাম্পাসেরই ডিএভি স্কুলের(DAV) তৃতীয় শ্রেণী। তোর্ষার মা ডঃ শিখা হোতা আইআইটি খড়গপুরের ‘Department of Aerospace Engineering ‘ এর অধ্যাপিকা আর আরিয়ার মা ডঃমৌসুমী মন্ডল ওই প্রতিষ্ঠানেরই গণিতের অধ্যাপিকা। দুই কন্যাকে নিয়ে তাঁরা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন টিকারামপুরের সবুজ শ্যমলিমায়। সঙ্গে আরিয়ার বাবা আব্দুল্লা সরদার এবং তোর্ষার বাবা নির্মল গায়েন ছিলেন। আর্যার বাবা ব্যাঙ্কের উচ্চপদ ছেড়ে এখন শিক্ষা বিস্তারে কাজ করছেন আর তোর্ষার বাবা রয়েছেন Airports Authority of India তে।
বাবা মা আর টিকারামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫০ পড়ুয়ার উপস্থিতিতে জন্মদিনের কেক কাটল দুই বান্ধবী তোর্ষা ও আর্যা। জন্মদিনের আনন্দ বিলিয়ে দিতে প্রত্যেক পড়ুয়ার হাতে দু’জনে মিলে তুলে দিয়েছিল পঠন সামগ্রী। তারপর সব্বাই মিলে কব্জি ডুবিয়ে মাংস সহ নানা পদে মধ্যাহ্ন ভোজ। তোর্ষা ও আর্যার বাবা মা রাই নিয়েছিলেন পরিবেশনের দায়িত্ব। সবাই মিলে একটু খেলাধূলাও হল। একটা ছোটখাটো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিজেদের মত করে নাচ গান,কবিতা পরিবেশন করল টিকারামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সালমা হেমব্রম, দেবিকা চালক, লক্ষিমনি মাণ্ডিরা। তারাও খুব খুশি আর্যা ও তোর্ষাকে পেয়ে। অধ্যাপিকারা জানিয়েছেন, ” আমাদের মেয়েরাও এই পরিবেশ, এখানকার জীবন দেখে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে পরিচিত হোক। বাকিদের কষ্ট, লড়াইয়ে সহমর্মিতা দেখাক।আর সবার সাথে জীবনের আনন্দ ভাগ করতে শিখুক। আমাদের দেশ মানে যে আমরা সবাই এই বোধ গড়ে উঠুক আমাদের মত তথাকথিত উন্নত পরিবেশে থাকা মানুষদের শিশুদেরও।
তোর্ষা ও আরিয়ার মা-বাবাদের এই ইচ্ছাপূরণের সহায়ক হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি স্বেচ্ছাসবী সংগঠন ‘Simpatico’ বা সমমনস্ক। করোনা ও লকডাউন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিনে জেলার গন্ডি ছাড়িয়েও এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দাঁড়িয়েছেন প্রান্তিক মানুষদের পাশে। সংগঠনের পক্ষে এই অবাক জন্মদিন উদযাপনের স্থান নির্বাচন সহ বিভিন্ন সহযোগিতায় ছিলেন সুমণ কল্যাণ ধাড়া, তপন কুমার পাত্র ও দীনেশ দণ্ডপাট প্রমুখেরা। সুমনের কথায়, ” একই দেশের মধ্যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থানে রয়েছি আমরা। পাশাপাশি থেকেও আমাদের মধ্যে চেনা জানার বিস্তর ঘাটতি। এই জানাশোনা দুর থেকে, শুধু বইপত্তর, পত্রপত্রিকা পড়ে হয়না। এই অধ্যাপিকাদের মতই নৈকট্যর চাহিদা চাই। এভাবেই আরও অনেকে এগিয়ে আসবেন, ভবিষ্যতে সমাজের প্রান্তিক মানুষদের পাশে দাঁড়াবেন।কারণ সমাজের প্রতি আমাদের প্রত্যেকেরই দায়বদ্ধতা কিছুটা হলেও থেকে যায়।”