নিজস্ব সংবাদদাতা: ফের সেই মেদিনীপুর রেলস্টেশন! ফের প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনের লাইনে গলে নিশ্চিত মৃত্যুর নাগালে চলে যাওয়া যাত্রীর জীবন বাঁচালেন রেল সুরক্ষা বাহিনী বা আরপিএফ (RPF) জওয়ানরা। এই নিয়ে গত কয়েক বছরে অন্ততঃ ৩যাত্রীর প্রাণ বাঁচানোর নজির গড়ল মেদিনীপুর স্টেশনের আরপিএফ বাহিনী। তবে পার্থক্য এটাই যে এবার সেই কৃতিত্বের অধিকারী দুই সাহসিনী। রবিবার মধ্যরাতের এই ঘটনাটি ঘটেছে মেদিনীপুর স্টেশনের ২নম্বর প্ল্যাটফর্মে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/01/Screenshot_20220130-195104_PicsArt.jpg)
রাত তখন পৌনে ৩টা, স্টেশনে প্রবেশ করছিল হাওড়া থেকে আসা চক্রধরপুরগামী এক্সপ্রেস (18011 Howrah- Chakradharpur exp.). স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় ট্রেনটির গতি কিছুটা কমেছে। সেই সময় ট্রেনের একটি কামরা থেকে এক ব্যক্তি প্ল্যাটফর্মে নামার চেষ্টা করছেন। কামরার দরজা ধরে প্ল্যাটফর্মে পা রাখতেই ওই ব্যক্তি গতির টানে গড়িয়ে ঢুকে যেতে থাকেন ট্রেনের তলায়।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/01/Screenshot_20220130-182735_WhatsAppBusiness.jpg)
বিষয়টি দেখতে পেয়েই ছুটে আসেন আরপিএফের দুই মহিলা কনস্টেবল সুপ্রিয়া গড়াই ও শোভা সিং। তাঁরা ওই ব্যক্তিকে আটকে ফেলেন ট্রেন লাইনে গলে যাওয়া থেকে। ওই সময় প্ল্যাটফর্মে কর্মরত আরপিএফের আ্যসিস্টেন্ট সাব ইন্সপেক্টর বি.কে মিশ্রও ছুটে গেছিলেন মহিলা কনস্টেবলদের পেছনে। ৩ জনে মিলে টেনে প্ল্যাটফর্মের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসেন ওই ব্যক্তিকে।
আরপিএফের মেদিনীপুর আধিকারিক বীজেন্দ্র কুমার জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির নাম আত্মারাম নামদেও বোর্দে। মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ জেলার নিবাসী ৫৫বছরের ওই ব্যক্তি পুরুলিয়া যাচ্ছিলেন। মেদিনীপুর স্টেশনে ঢোকার আগেই তাঁর জলতৃষ্ণা পেয়েছিল। সেই কারণে তিনি ট্রেনটি ধীরে হওয়ার সাথে সাথে নামতে চেয়েছিলেন যাতে ট্রেনটি ছাড়ার আগেই জল খেয়ে উঠে যেতে পারেন।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/01/Screenshot_20220130-183227_WhatsAppBusiness.jpg)
কিন্তু ট্রেনের গতির সঙ্গে সামঞ্জস্য না রাখতে পেরে ট্রেনের তলায় গড়িয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ওই সময়ে আরপিএফের ‘মাই সহেলী টিম’ সক্রিয় ছিল যাঁদের কাজ হল মহিলা ট্রেন যাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাহায্য করা। সেই টিমেরই দুই সদস্যা সুপ্রিয়া ও শোভা ওই ব্যক্তির জীবন বাঁচান। এঁদের সহযোগিতা করেন এএসআই মিশ্র।
আত্মারাম জানিয়েছেন, ‘ প্ল্যাটফর্মে নামার মুখেই আমার মাথা ঘুরিয়ে যায়। ফলে আমি ভারসাম্য রাখতে পারিনি। ওই দুই মহিলা পুলিশকে ধন্যবাদ। আমি সারা জীবন ওঁদের ঋণ শোধ করতে পারবনা।’ আরপিএফের তরফে অবশ্য তখুনি ছেড়ে দেওয়া হয়নি আত্মারামকে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/01/Screenshot_20220130-183221_WhatsAppBusiness.jpg)
তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করার পর চা এবং জল খাবার খাইয়ে পুরুলিয়ার অন্য ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য ২০২০ সালে খড়গপুরের বারবেটিয়ার বাসিন্দা সুজয় ঘোষকে ঠিক একই ভাবে বাঁচিয়ে ছিলেন মেদিনীপুর স্টেশনের RPF কনস্টেবল ধর্মেন্দ্র যাদব। সুজয় খড়গপুর আসানসোল প্যাসেঞ্জারে উঠতে গিয়ে তলিয়ে যাচ্ছিলেন রেল লাইনের তলায়। ২০২১ সালেও ঠিক এরকমই আরেকটি নজির রেখেছিলেন এই স্টেশনের আরপিএফ কর্মীরা।