শশাঙ্ক প্রধান: রক্ত ঝরলো পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার রামভদ্রপুরের মাটিতে।রক্ত দিয়েই ফের কৃষি জমি ধ্বংসের চেষ্টা রুখে দিলেন প্রান্তিক চাষিদের সংঘবদ্ধ জোট। মধ্যরাতেই প্রতিরোধ গড়ে তুলে ভেড়ি মাফিয়াদের রুখে দিলেন কিষান-কিষানীরা। কয়েক দিনের মধ্যেই এই নিয়ে দ্বিতীয়বার, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটা নাগাদ ২৫/৩০ টা ট্রাক্টর আর মাটি খোঁড়ার মেশিন নামিয়ে জোর করে দখল ভেড়ি তৈরি করতে নেমে পড়েছিল ভেড়ি মাফিয়ার দল। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে সেই সময়ে গ্রাম ভেঙে মহিলা পুরুষ সহ বাড়ীর ছোটোরাও প্রতিরোধে সামিল হয়। আন্দোলনের প্রথম থেকেই শপথ ছিলো রক্ত দিতে হয় দেবো, জীবন দিতে হলেও আমাদের তিন ফসলী চাষের জমিতে ভেড়ী করতে দিবো না। জনরোষের মুখে রাতেই শুরু হয় প্রতিরোধ। কয়েকটি ট্রাক্টর নিয়ে পিছু হঠে পালিয়ে যায় দূষ্কৃতি বাহিনী।
গত ২৯ মে মধ্য রাতেও পিছু হটতে বাধ্য হওয়ার পর থেকেই বোধহয় তৈরি হয়েই এসেছিল ভেড়ি মাফিয়ার দল। তাই প্রথম দিকে যখন ভেড়ি বিরোধীদের অল্প সংখ্যক মানুষ প্রতিরোধ করতে মাঠে নামেন তখন আক্রমন নামিয়ে আনা হয়। ভেড়ি বিরোধী আক্রান্ত কৃষকদের অভিযোগ, “মাঠে যখন ওরা ট্রাক্টর আর মেশিন নামিয়ে জমি খোঁড়ার কাজ শুরু করে তখন গ্রামের মধ্যে লুকিয়ে ছিল সশস্ত্র বাইক বাহিনী। আমরা কয়েকজন মাঠে নেমে ওদের বাধা দিতে গেলে মাঠে থাকা ভেড়ি মাফিয়ার দল আমাদের সামনে থেকে আক্রমন করে আর পেছন দিক থেকে আক্রমণে নামে বাইক বাহিনীর লোকেরা। দু’পক্ষের মধ্যে পড়ে আমরা ব্যাপক মার খেতে থাকি। এরই মধ্যে গ্রামের বাকি লোকেরা খবর পেয়ে যায়। মহিলারা শাঁখ বাজাতে শুরু করে। জেগে ওঠে গোটা গ্রাম। আমাদের সাহায্যে নেমে আসেন মহিলা পুরুষ এমনকি কিশোরের দল। এরপরই শুরু হয় পাল্টা প্রতিরোধ। পিছু হটে দুর্বৃত্তরা।”
বৃহস্পতিবার বিকেল অবধি বেশ কিছু ট্রাক্টর জমিতে পড়ে রয়েছে। গ্রামের মানুষ সেগুলি অক্ষত অবস্থায় আটক করে রেখে পুলিশ কে খবর দিয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পুলিশ ও প্রসাশনের কোনো ব্যাক্তিই পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ। আহত কৃষকদের বেশ কয়েকজন সবং হাসপাতালে এসেছেন চিকিৎসার জন্য। আহত স্বপন মাইতি, গৌরী ঘাঁটা, মদন মোহন ঘাঁটা, গোপাল চৌধুরী, কালিপদ গাঁতাইতরা জানিয়ে দিয়েছেন, জীবন পন করে এ লড়াই চলবে। তাঁরা জানিয়েছেন, রক্ত যখন ঝরেছে তখন রক্তের বিনিময়েই চলবে পূর্ব পুরুষের কৃষিজমি রক্ষা।
তাঁরা বলেছেন, ” জমি আমাদের মায়ের মত। মা যেমন আমাদের বুকের দুধে বড় করেছে তেমনই এই জমি আমাদের যুগ যুগ ধরে ভাত জুগিয়ে এসেছে। এই মাকেও রক্ষা করতে লড়াই চালিয়ে যাব। কারন এই জমিই আমাদের সন্তান সন্ততিদের ভবিষ্যত।” কৃষকদের এই সংঘবদ্ধ প্রতিরোধকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সারা ভারত কৃষক সভার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মেঘনাদ ভূঁইয়া। ভূঁইয়া বলেছেন, রামভদ্রপুরের পাশে দাঁড়াতে আরও বৃহত্তর মঞ্চ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। ওখানকার ভেড়ি মাফিয়ারা চাইছে, বর্ষার আগেই জমি খুঁড়ে নষ্ট করতে যাতে কৃষকরা এই চাষ না করতে পারে। কৃষি জমির চরিত্র বদল না করেই এই ভেড়ি তৈরির চেষ্টা বেআইনি জেনেও মাফিয়াদের বিরুদ্ধে এফআইআর করছেননা ভূমি রাজস্ব আধিকারিক। আমরা সেই নিয়েও আন্দোলনে নামতে চলেছি।”