নিজস্ব সংবাদদাতা: তৃনমূলের স্বর্ণযুগ, সর্বত্রই তৃনমূল। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত ভবানীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭জন পঞ্চায়েত সদস্যর ১৭ই জন তৃনমূল। অন্ততঃ তাঁরা এমনটাই দাবি করে এবং ডেবরা তৃনমূলও তাই বলে থাকে। তবুও সেই ১৭জনের কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্য প্রধান এবং উপপ্রধানের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানিয়ে প্রতিবাদ সভা করল গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের সামনেই।
দাবি করা হল সরকারের নির্দেশিকা অমান্য করেই রাতের অন্ধকারে লক্ষ্মীর ভান্ডারের ফর্ম বিক্রী করেছে প্রধান সহ কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্য। শনিবার এমনই অভিযোগ তুলে গ্রামপঞ্চায়েত অফিসের সামনে রীতিমত সভা করলেন কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্য। এই ধিক্কার সভা থেকে দাবি করা হয়েছে গত ২৪তারিখ ভবানীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে দুয়ারে সরকার শিবির অনুষ্ঠিত হয় যেখানে লক্ষ্মীর ভান্ডারের ফর্ম বিলি ও জমা নেওয়ার কথা। নিয়ম অনুযায়ী ফর্ম বিলি হবে শিবির থেকেই কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ওইদিন সকালে শিবির শুরুর আগেই বেশ কিছু মহিলা প্রধানের সই করা ফর্ম নিয়ে হাজির হন। সেই ফর্ম নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়।
ওই ফর্ম আসলে প্রধান বিক্রি করেছেন এমনই দাবি করা হয় শনিবারের ধিক্কার সভা থেকে। গন্ডগোলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন ডেবরার বিডিও। তিনি আগে বন্টন হওয়া সমস্ত ফর্ম বাতিল করে ফের নতুন করে শিবির থেকে ফর্ম বন্টনের নির্দেশ দেন। এই ধিক্কার সভা থেকে আরও দাবি করা হয়েছে যে, প্রধান এবং উপপ্রধান সহ মোট ৯জন পঞ্চায়েত সদস্য একের পর এক দুর্নীতি করে যাচ্ছে। এই দুর্নীতি পাছে ধরা পড়ে যায় তাই বাকি ৮জন পঞ্চায়েত সদস্যকে পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকতেই দেয়না।
ধিক্কার সভায় অংশ নেওয়া এক তৃনমূল পঞ্চায়েত সদস্য তমাল কান্তি রায় বলেন, ‘পাহাড় প্রমান লুট চলছে ভবানীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে। দুয়ারে সরকার বা লক্ষ্মীর ভান্ডারের ফর্ম বিক্রি করে যেমন টাকা আদায় করা হয়েছে তেমনি বিভিন্ন প্রকল্পে ভুয়ো মাস্টার রোল তৈরি করা, সরকারি প্রকল্পে কলাগাছ লাগানোর নাম করে টাকা চুরি করা, ঢালাই রাস্তা, সাবমার্সিবল পাম্প বসানো ইত্যাদি নানা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত প্রধান ও উপপ্রধান গোষ্ঠী। আর এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় প্রকৃত তৃনমূলের হয়ে নির্বাচিত হওয়ার পরও আমাদের ৮জন সদস্যকে কোন ঠাসা করে রাখা হয়েছে। এরই প্রতিবাদে ধিক্কার জানিয়ে সভা করেছি আমরা।”
যদিও এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে ভাবনীপুর গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান বলেছেন,” পুরোপুরি মিথ্যা অভিযোগ আনছেন ওই সদস্যরা। দুয়ারে সরকার কর্মসূচি সুষ্ঠ ভাবে রূপায়ন করার জন্য সমস্ত পঞ্চায়েত সদস্যকে নিয়েই সভা আহ্বান করা হয়েছিল কিন্তু ওই ৮জন আসেই নি। উল্টে কর্মসূচি ভণ্ডুল করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ফর্ম বিক্রির ভুয়ো অভিযোগ তুলে।”
গ্রামপঞ্চায়েত উপপ্রধান জগন্নাথ মুলা বলেন, ” কোথাও ফর্ম বিক্রি করা হয়নি। প্রচুর মহিলা যার মধ্যে কেউ কেউ কোলের সন্তান নিয়ে লাইনে দাঁড়াবেন ঘন্টার পর ঘন্টা এটা অনুমান করেই হয়ত কাউকে কাউকে ফর্ম দেওয়া হয়েছিল কিন্তু বিডিও ম্যাডাম সেই ফর্ম বাতিল করেছেন। ওটা অজ্ঞতার জন্য হয়েছে, মানুষের উপকার করতে গিয়ে হয়ত ভুল হয়েছে।” মুলা আরও অভিযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা তৃনমূলের টিকিটেই জিতেছিলেন ঠিকই কিন্তু বর্তমানে তাঁরা দলবিরোধী আচরণ করছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে এরা বিজেপিকে জেতানোর জন্যই কাজ করেছিলেন। বিজেপি না জেতার ফলে আবার তৃণমূলে ঘেঁষতে চাইছে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে। দল এদের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।”
উল্লেখ্য ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের নির্দেশ অমান্য করেই এই গ্রামপঞ্চায়েতের ১৭টি আসনের ১৭টিতেই প্রার্থী দিয়েছিলেন এই এলাকার অবিসংবাদিত তৃনমূল নেতা জগন্নাথ মুলা। ঘটনাক্রমে তাঁর নেতৃত্বেই ৯টি আসনে জয় পায় নির্দল সদস্যরা। যার মধ্যে কয়েকজন সিপিএম সমর্থিত ছিল। বোর্ড গঠনের আগেই তৃনমূলের উদ্যোগে জগন্নাথ মুলা সহ ওই ৯জনকেই দলীয় পতাকা তুলে দেন তৃনমূল নেতৃত্ব। তারপর থেকেই এই গোষ্ঠীই হয়ে যায় অফিসিয়াল তৃনমূল আর ব্যাকফুটে চলে যায় দলের প্রতীকে জেতা ৮জন। সেই থেকেই এই সংঘাত চলে আসছে যার আরও একবার বহিঃপ্রকাশ হল শনিবার। তৃনমূলের ওই নেতাদের আফসোস, “দলের প্রতীক নিয়ে লড়াই করে বলি হলাম আমরা আর বিশ্বাসঘাতকরা পেল পুরস্কার!”