শশাঙ্ক প্রধান: বাসন্তী পুজোয় দিদির বাড়িতে গিয়ে এক প্রতিবন্ধী যুবতী ধর্ষিতা হয়েছে বলে দাবি করা হল পরিবারের তরফ থেকে। এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে তৃনমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে। পরিবারের আরও অভিযোগ এই বিষয়ে পিংলা থানায় অভিযোগ দায়ের করতে চাইলে তাঁদের থানায় যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের ভয়ে তাঁরা ওই যুবতীকে পিংলা হাসপাতালেও চিকিৎসা করাতে পারেননি এমনই অভিযোগ এনেছে পরিবার। বাধ্য হয়ে ওই যুবতীর পরিবার তাঁকে মঙ্গলবার সকালে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেছে এমনটাই জানিয়েছেন তাঁরা। ঘটনায় অভিযোগ আনা হয়েছে স্থানীয় তৃনমূল পঞ্চায়েত সদস্য অভিজিৎ মন্ডলের বিরুদ্ধে। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ওই পঞ্চায়েত সদস্য অভিজিৎ মন্ডল জানিয়েছেন, এই ঘটনা সর্বৈব মিথ্যা। তাঁকে ফাঁসানোর জন্যই বিরোধীরা এই ধরনের ঘৃণ্য চক্রান্ত করেছে।
নির্যাতিতা পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। সোমবারই সে বাসন্তী পূজা উপলক্ষ্যে নিজের বাড়ি থেকে দিদির বাড়ি কালুখাঁড়া গ্রামে গিয়েছিল। ওই গ্রামে পুজোর শেষ দিনে আনন্দ উৎসবের পাশাপাশি দেবীর বিসর্জনের পূর্বে সিঁদুর খেলা ইত্যাদিতেও অংশ নেয় সে। তারপর ফিরে আসে দিদির বাড়িতেই। জানা গেছে, রাতে খাওয়া দাওয়ার পর পরিবারের এঁটো বাসন ধুতে সে যখন পাশের পুকুরে গেছিল অন্য এক মহিলার সাথে। অন্য মহিলা যখন পুকুরে বাসন ধুচ্ছিল তখন ওই যুবতী হ্যারিকেন নিয়ে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়েছিল। যুবতী একা আছে মনে করেই তাঁকে ধরে ফেলে অভিজিৎ মন্ডল ও কয়েকজন। টেনে নিয়ে যায় পুকুর পাড়ের একপাশে। যুবতীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি চলে। তাঁকে ধর্ষণ করার পর মারধরও করা হয়। এরপরই ওই যুবতীর চিৎকার চেঁচামেচিতে সঙ্গে থাকা মহিলাও চিৎকার শুরু করে দিলে অন্যরা ছুটে আসে। পালিয়ে যায় দুস্কৃতিরা। পরে ওই পঞ্চায়েত সদস্য হুমকি দেয় যে ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আনলে তাঁকে মেরে ফেলা হবে বলে।
পরিবারের অভিযোগ ওই যুবতী প্রতিবন্ধী। কথা বলার ক্ষেত্রে তাঁর কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। খুবই কষ্ট করে ধীরে ধীরে তাঁকে কথা বলতে হয়। যে কারনে ৩১ বছর বয়স্ক এই যুবতীর বিয়ে হয়নি। যুবতীর ধস্ত শরীর এবং শরীরে কিছু চিহ্ন দেখে বাড়ির সদস্যরা তার কারণ জানতে চাইলে যুবতী তা ধীরে ধীরে খুলে বলে। এরপরই পরিবার পিংলা থানায় অভিযোগ জানাতে চাইলে স্থানীয় তৃনমূল নেতারা তাঁদের জোর করে গ্রামে সালিসি সভা বসিয়ে মীমাংসা করাতে চায়। তারা যুবতীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যাবেনা বলেও পরিষ্কার জানিয়ে দেয়। পরিবারটি বিজেপি সমর্থক হওয়ায় গ্রামের এক বিজেপি কর্মী বিষয়টি জানায় বিজেপি নেতৃত্বকে। এরপরই বিজেপির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার সকালেই ওই যুবতী এবং তার পরিবারকে নিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষার পাশাপাশি চিকিৎসা চলছে বলে জানা গেছে।
এরপর বিষয়টি লিখিত অভিযোগ আকারে জানানো হয় মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায়। বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক সভাপতি তন্ময় দাস বলেন, “যেভাবে শাসকদলের পক্ষ থেকে রাজ্যজুড়ে ঘটে চলা খুন ধর্ষণের মামলা গুলিকে আড়াল করা হচ্ছে তাতে পুলিশের কাছে ন্যায় বিচার আশা করা বৃথা তাই আমরা পরিবারের কে নিয়ে সরাসরি আদালতের কাছেই নালিশ জানাতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম তদন্ত হোক আদালতের পর্যবেক্ষণে। কিন্তু পুলিশ সেটা জানতে পেরেই পরিবারকে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করায়।” পুলিশের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে যেহেতু ওই যুবতীর ধর্ষণ জনিত ডাক্তারি পরীক্ষা কোতোয়ালি থানার অধীন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হয়েছে তাই স্বাভাবিক নিয়মেই তারা এই থানায় অভিযোগ করতে পারেন।
এদিকে ঘটনার খবর জানতে পেরেই ওই পঞ্চায়েত সদস্য অভিজিৎ মন্ডলকে আটক করেছে পিংলা পুলিশ। ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছেন খড়গপুর মহকুমার দায়িত্বে থাকা পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ (Adl. SP) সুপার রানা মুখার্জী, ডেবরার SDPO গোবিন্দ সিকদার। পিংলা থানার OC সুদীপ ঘোষাল সহ পুলিশের ওই পদস্থ আধিকারিকরা পঞ্চায়েত সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। পিংলার বিধায়ক তথা জেলার তৃনমূল নেতা অজিত মাইতি জানিয়েছেন, পুলিশ রঙ না দেখে তদন্ত করুক। যদি কেউ দোষি সব্যস্ত হয় তবে শাস্তি পাক। দল এধরনের ঘটনা বরদাস্ত করবেনা।