নিজস্ব সংবাদদাতা: মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল পশ্চিম মেদিনীপুরের এক আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ও তাঁর স্ত্রীর। দুর্ঘটনাগ্রস্ত অভিশপ্ত গাড়িটি থেকেই মারাত্মক আহত তাঁদের নাবালিকা কন্যাটি বাবা-মাকে হারিয়ে অনাথ হয়ে গেল চিরতরে। বুধবার প্রায় মধ্য রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির গোঘাট থানা এলাকার হাজীপুরে, রামজীবনপুর-আরামবাগ রাজ্যসড়কে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃতরা হলেন মৃত্যুঞ্জয় কর(৪০) ও বন্দনা কর(৩০)। ওঁদের বাড়ি চন্দ্রকোনা থানার রামজীবনপুরে। নিজের এলাকায় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বাবু।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে বুধবার বাড়ি থেকে হুগলি জেলায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রীতিভোজে সপরিবারে যোগ দিতে গিয়েছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বাবু। নিজের প্রাইভেট কারে করেই গিয়েছিলেন তাঁরা। দুর্ঘটনা ঘটে অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে ফেরার সময়। গাড়ি চালাচ্ছিলেন নিজেই। পাশেই বসেছিলেন স্ত্রী। মেয়ে ছিল পেছনের আসনে। হাজিপুরের কাছে রাস্তার ওপর একটি দাঁড়িয়ে থাকা লরিকে পাশ কাটানোর সময় উল্টো দিক থেকে আসা অপর একটি লরির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সম্ভবতঃ দুটি গাড়িই জোরালো গতিতে ছিল। সংঘর্ষের অভিঘাতে দুমড়ে মুচড়ে যায় চিকিৎসক দম্পতির প্রাইভেট কারটি। ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে মৃত্যুঞ্জয় বাবু ও তার স্ত্রী ও মেয়ে।
খবর পেয়েই ছুটে হুগলির গোঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা। তাঁরাই তিনজনকে উদ্ধার করে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক মৃত্যুঞ্জয়বাবুর স্ত্রীকে মৃত ঘোষণা করে,পরে চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় মৃত্যুঞ্জয় বাবুরও।গুরুতর জখম অবস্থায় তাদের নাবালিকা মেয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।বৃহস্পতিবার গোঘাট থানার পুলিশ চিকিৎসক দম্পতির দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।মর্মান্তিক এই পথদূর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীর একসাথে মৃত্যুর ঘটনায় রীতিমতো শোকের ছায়া নেমে এসেছে চন্দ্রকোনার রামজীবনপুরে ওই চিকিৎসক দম্পতির বাড়িতে। বৃহস্পতিবার বিকেলে দুটি মৃতদেহ রামজীবনপুরের বাড়িতে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবার ও পরিজনরা। এলাকায় চিকিৎসক ছাড়াও সামাজিক কাজকর্মে জড়িত থাকায় গোটা রামজীবনপুরই শোকস্তব্ধ।
চিকিৎসক মৃত্যুঞ্জয় করের মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকস্তব্ধ আয়ুর্বেদ জগৎও। পশ্চিমবঙ্গ আয়ুর্বেদ পরিষদ সূত্রে জানা গেছে ১৯৯৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন আয়ুর্বেদাচার্য (B.A.M.S) বা আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে স্নাতক হন তিনি। বাংলার আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের একটি সংগঠনের নেতৃত্ব তথা বাঁকুড়া পাত্রসায়র ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ডাঃ সুমিত সুর বলেছেন, ‘ মৃত্যঞ্জয় করের মৃত্যুতে আমরা আয়ুর্বেদের একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও কৃতি সন্তানকে হারালাম।’