![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/04/Screenshot_20220415-132807_WhatsAppBusiness.jpg)
নিজস্ব সংবাদদাতা: জুয়ায় গাঁটের সমস্ত টাকা খোয়ানোর পর ফের বউয়ের গহনা বেচে সেই টাকা ফিরিয়ে আনার জুয়া খেলেছিল যুবক। শেষরক্ষা হয়নি, গচ্চা গেছে সেই হারও। তাই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শুরু হয় বচসা। সেই বচসার জেরেই আত্মহত্যা করল এক ২৫ বছরের যুবক। মৃত যুবকের নাম ব্যক্তির সমীর রানা। শুক্রবার, নববর্ষের প্রথম সকালেই পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়নগড় থানার কুনারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আহিরা গ্রাম থেকে উদ্ধার হয়েছে সমীরের দেহ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সমীর। মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে ৩ দিন ধরে আহিরা গ্রাম সংলগ্ন লক্ষণদা গ্রামে স্বপ্নেশ্বর শিবের গাজন উপলক্ষ্যে মেলা চলছে। মেলায় প্রধান আকর্ষণ জুয়া খেলা। হাব্বাডাব্বা বা স্থানীয় ভাষায় ডাব্বু, তিনপাতি, চরকি ইত্যাদি নানারকম জুয়ার আসর বসেছে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/04/Screenshot_20220415-132811_WhatsAppBusiness.jpg)
পাশাপাশি রাতভর এই জুয়ার আসরকে চাঙ্গা করতে চলছে হাঙ্গামা নামক নাচ গানের অনুষ্ঠান। উল্লেখ্য এই হাঙ্গামা নাচ আসলে চটুল গানের সাথে কিছু যুবতীর প্রায় বসনহীন নৃত্য। যা দেখতে উপচে পড়ে তরুনের দল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, জুয়া খেলার জন্য ভিড় উপচে পড়ছে তরুণদের। এখানেই জুয়া খেলা সর্বস্ব হারিয়ে ছিলেন সমীর রানা ওই যুবক।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/04/Screenshot_20220415-205738_Blur-Photo.jpg)
স্থানীয় সূত্র মারফৎ জানা গেছে, দুদিন ধরেই রাত্রে মেলা দেখতে বেরিয়ে যেত সমীর। দুদিনই জুয়া খেলেছে সে। দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালানো সমীর জুয়ায় তার সমস্ত উপার্জন হারিয়েছিল। এরপর একদিন গোপনে বউয়ের গলার হার সরিয়ে নিয়ে তা রেখে বন্ধক জুয়া খেলে এবং যথারীতি তাও হারায়। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই বাড়ি ছিলনা সে। বিকালে তাঁর স্ত্রী মেলায় যাওয়ার জন্য হার খুঁজতে গিয়ে দেখে নির্দিষ্ট স্থানে হার নেই। গভীর রাত অবধি মেলায় কাটিয়ে রাতভোরে বাড়ি ফিরে সে। এরপরই শুরু হয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া, এমনকি হাতাহাতি। ভোর রাতে উদ্ধার হয় সমীরের ঝুলন্ত দেহ।
এই পুরো ঘটনার জন্য মেলা উপলক্ষ্যে বসা জুয়া এবং হাঙ্গামা নাচকেই দায়ী করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের মতে চারদিনের এই জুয়ায় আহিরা, লক্ষণদা সহ আশেপাশের ২০/২২টি গ্রামের যুবকরা লক্ষ লক্ষ টাকা হারিয়েছে। এবং এই জুয়া ও হাঙ্গামা নাচ স্থানীয় পঞ্চায়েত ও তৃনমূল নেতৃত্বর অনুমতিতে সংগঠিত হয়েছে। ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষের বক্তব্য স্বপ্নেশ্বর গ্রামের এই গাজন মেলা বহুদিনের পুরানো। কিন্তু কোনও দিন এখানে জুয়ার আসর বসেনি। যেখানে আশেপাশের গাঁয়ের মানুষের সহযোগিতা নিয়ে যাত্রা, পালাগান ইত্যাদির আসর বসত সেখানে এবছরই প্রথম আমদানি করা হয়েছে জুয়া আর হাঙ্গামা নাচ। লক্ষাধিক টাকার বিনিময়েই জুয়াপার্টি এই অনুমতি নিয়েছে স্থানীয় পঞ্চায়েত ও তৃনমূল নেতাদের কাছ থেকে। কুনার গ্রামপঞ্চায়েতের এক তৃনমূল নেতা বলেছেন, ‘ লক্ষণদা গ্রামে মেলার নামে যা চলছে তাতে লজ্জ্বায় মাথা কাটা যাচ্ছে। চারদিনে সর্বস্বান্ত হয়েছে বহু পরিবার।’ উল্লেখ্য মৃত সমীরের একটি ২বছরের পুত্র সন্তান রয়েছে।