নিজস্ব সংবাদদাতা: চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারনার অভিযোগে এক মহিলাকে সম্মেলন স্থল থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কোমরের দড়ি বেঁধে ঘোরানোর পর ব্যাপক মারধরের অভিযোগ উঠল বিজেপি সমর্থিত সংগঠনের সদস্যাদের বিরুদ্ধে। ঘটনাচক্রে ওই মহিলাও ওই সংগঠনের সদস্য বলে জানা গেছে। গোটা ঘটনাই ঘটল দলের সর্ব ভারতীয় সহ-সভাপতির দিলীপ ঘোষের সামনে। বৃহস্পতিবার এমনই ঘটনায় সরগরম হয়ে উঠল খড়গপুর শহরের গোলবাজার এলাকা। পুলিশ এই ঘটনায় কয়েকজন মহিলার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ব্যবস্থা নিতে চলেছে বলে জানা গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা নাগাদ খড়গপুর শহরের গোলবাজার এলাকায় রবীন্দ্র ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়াম মঞ্চে। মঞ্চে সেই সময় উপস্থিত ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ স্বয়ং। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় রেলওয়ে মাল গুদাম শ্রমিক সংঘের সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক অরুন কুমার পাশোয়ান সহ রাজ্য নেতারা।
জানা গেছে সম্মেলন সবেমাত্র শুরু হয়েছে। তারই মধ্যে হঠাৎ দেখা যায় কয়েকজন মহিলা প্রতিনিধি আসন থেকে এক মহিলাকে টেনে হিঁচরে বের করছে। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়েছে। তারপরেই মহিলার কোমড়ে দড়ি বাঁধা হয়। দুটো হাত বেঁধে দেওয়া হয় গামছা দিয়ে। তারপর ওই মহিলাকে সম্মেলন স্থল থেকে বের করে নিয়ে গোল বাজারের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হতে থাকে। সঙ্গে শুরু চড় কিল লাথি ঘুঁষি। মহিলাকে কার্যত লাথি মারতে মারতে এগুতে থাকে মহিলাদের একটি দল। তাঁদের দাবি চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন ওই মহিলা। ব্যাপক হট্টগোলের মধ্যে সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি করে সম্মেলনের কাজ শেষ করে ফিরে যান। যাওয়ার আগে দিলীপ ঘোষ বলেন ” আমি জানি না বিষয়টি। ইউনিয়নের নেতারা বলতে পারবেন।”
এদিকে মহিলাদের মারমুখী আচরণে রীতিমতো রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে রেলনগরী খড়গপুর শহরের গোলবাজার এলাকায় রবীন্দ্র ইনস্টিটিউট চত্বর। এখানেই সম্মেলন হয়েছে। ক্ষুব্ধ মহিলারা ওই মহিলাকে দড়ি বাঁধা অবস্থায় টেনে হিঁচরে রবীন্দ্র ইনস্টিটিউট চত্বর থেকে বাইরে বেশ কিছুটা নিয়ে যান। তাঁরা দাবি করতে থাকেন এই মহিলাকে তাঁদের কাছে ছেড়ে দিতে। ক্ষুব্ধ মহিলারা জানিয়েছেন এই মহিলা তাঁদের কাছ থেকে রেলের গুডস শেডে কাজের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত একজনকেও কাজ করিয়ে দিতে পারেন নি। এমনকি গত ছয় মাস ধরে গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন বলে অভিযোগ। যদিও শেফালী রায় নামে এই মহিলা বলেছেন ” আমিও চাকরি প্রার্থী। আমাকেও তিন লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে। আমার ভাইকেও দিতে হয়েছে। আমি কোনও টাকা নিই নি।”
এই পরিস্থিতিতে সংগঠনের কয়েকজন এই মহিলাকে সেই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করে খড়গপুর গ্ৰামীণ থানার চৌরঙ্গী এলাকায় একটি হোটেলে নিয়ে চলে যান। জানা গিয়েছে অভিযুক্ত ও ক্ষুব্ধ মহিলারা প্রত্যেকে মালদহ জেলার গাজোল এলাকার বাসিন্দা। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে দুপুর আড়াইটা নাগাদ খড়গপুর টাউন থানার পুলিশ ওই হোটেলে অভিযান চালায়। সেরকম কিছু না পেয়ে ফিরেই যাচ্ছিল পুলিশের দল। কিন্তু হোটেলের এক নিরাপত্তা রক্ষীর কাছ থেকে তথ্য পেয়ে পুলিশ ফের হোটেলে ঢোকে। সেখানে একটি শৌচালয় থেকে মহিলাকে উদ্ধার করা হয়। তারসাথে আটক করা হয় পাঁচ মহিলা সহ দুইজন পুরুষ ও হোটেল মালিকের ছেলেকে। পুলিশ জানিয়েছে সকলকে আটক করা হয়েছে। তবে ওই মহিলাকে মারধর করা ও দড়ি বেঁধে ঘোরানোর অভিযোগে পাঁচ মহিলা ও দুইজন পুরুষের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।