শশাঙ্ক প্রধান: বৃহস্পতিবার আশ্চর্য জনক ভাবেই উদ্ধার হল এক মহিলার গলিত দেহাবশেষ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানার অন্তর্গত তেমাথানি বাজারের অনতি দূরেই একটি জলাশয়ের পাশ থেকে ওই গলিত দেহাবশেষ উদ্ধার হয়েছে। প্রাপ্ত দেহাবশেষ এতটাই গলিত যে তা ময়নাতদন্ত করা সম্ভব নয়। পুলিশ ফরেনসিক তদন্তের জন্য দেহাবশেষ সংগ্ৰহ করেছে। এই ঘটনায় পুলিশ কাঞ্চন সরেন নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে গ্রেফতার করাও হতে পারে কাঞ্চনকে। পুলিশের অনুমান মৃতদেহটি মালা সরেন নামে ৩৫ বছর বয়স্ক এক মহিলার যে কিনা কাঞ্চনের সঙ্গেই থাকত এবং তেমাথানি বাজার এলাকায় ঝাড়ুদারের কাজ করত।
তেমাথানি বাজার এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রায় দিন ১০ আগেই হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যায় মালা এবং কাঞ্চন। তারা কোথায় গেল সেই খোঁজ দিতে পারেনি কাঞ্চন এবং মালার সঙ্গে তেমাথানি বাজারের ঝুপড়িতে খাকা কাঞ্চনের বৃদ্ধ বাবাও। বৃহস্পতিবার তেমাথানি বাজারের ওপর দিয়ে যাওয়া ডেবরা-পটাশপুর রাজ্য সড়কের পাশে একটি জলাশয়ের কাছে হঠাৎই ঘোরা ফেরা করতে দেখা যায় কাঞ্চনকে। যেহেতু কাঞ্চনকে সবাই চিনত তাই তাকে কয়েকজন জিজ্ঞাসাবাদ করে। সে কোথায় গেছিল, কেন গেছিল, মালা কোথায় ইত্যাদি ইত্যাদি। এই প্রশ্নের মুখে কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি কাঞ্চন। তার কথাবার্তা শুনে মানুষজনের মনে হয় মালার সঙ্গে কিছু একটা খারাপ ঘটনা ঘটেছে। তারা পুলিশকে খবর দেয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরই পুলিশ বুঝতে পারে কাঞ্চন যেখানে ঘোরা ফেরা করছিল রাজ্যসড়কের পাশে একটি পানা ভর্তি জলাশয় লাগোয়া ময়লা ফেলার জায়গায় মালার দেহ লুকিয়ে রাখা আছে। পুলিশ লোকজন জোগাড় করে সেই জায়গা তল্লাশি করে একটি মাথার খুলি সহ হাড়গোড় উদ্ধার করে। কাঞ্চন ও আরও ২জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। যেখান থেকে মনে করা হচ্ছে কাঞ্চন ও মালা যেদিন থেকে নিখোঁজ হয়েছিল তার আগের দিন রাতে কোনও বচসার জেরে মালাকে কাঞ্চন মারধর করলে মালার মৃত্যু হয়। এরপর ভোর বেলা বাজারের ময়লা ফেলার গাড়িতে ময়লা আবর্জনা সাথে মালার মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে ওই স্থানে ফেলে তা ভালো করে চাপা দিয়ে দিয়েছিল কাঞ্চন। কচুরিপানা,জল আর ময়লায় সেই মৃতদেহ এমন ভাবে চাপা পড়ে যায় যে তেমন করে দুর্গন্ধ টের পায়নি আশেপাশের জনতা অথবা সামান্য দুর্গন্ধ পেলেও তা ময়লা ফেলার জায়গায় মৃত কুকুর বেড়ালের দুর্গন্ধ বলে মানুষ উপেক্ষা করে গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে পিংলা থানার মুন্ডুমারী সংলগ্ন ফতেপুর এলাকার গৃহবধূ নিজের ঘর ছেড়ে কাঞ্চনের সঙ্গে থাকত গত কয়েকবছর ধরেই। পুলিশ কাঞ্চনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে। কী অবস্থায় কেন মালাকে মারধর করা হয়েছিল তা জানতে চায় পুলিশ। প্রয়োজনে ঘটনার পুনঃনির্মাণ করানো হতে পারে কাঞ্চনকে দিয়ে। গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত তেমাথানি বাজার এলাকার মানুষ জন।