শশাঙ্ক প্রধান: শেষ অবধি ৪ মাস পরে খোঁজ মিলল পর পুরুষের সাথে সন্তান সহ ফেরার হয়ে যাওয়া পিংলার গৃহবধূ পায়েল ভৌমিকের। গৃহবধূর সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছেন তাঁর প্রেমিক। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মঙ্গলবার কলকাতার দত্ত পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ওই গৃহবধূকে। একই সঙ্গে কিডন্যাপিংয়ের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে গৃহবধূর সঙ্গে থাকা যুবক সেক এসারুলকে।
যদিও খোঁজ মেলেনি সেই ৩ বছরের শিশুপুত্রটির যাকে নিয়ে বাড়ির জানলা কেটে পালিয়ে গেছিলেন ২২ বছরের পায়েল। তাঁদের শিশু সন্তানটিকে খুন করা হয়েছে বলে বুধবারই পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন সন্তানের পিতা তথা পায়েলের স্বামী সোমনাথ ভৌমিক।
গত ৯ই ডিসেম্বর রাতে পিংলা থানার করকাই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার জগন্নাথপুর গ্রামের বাড়ির বাঁশের জানলা ভেঙে নিজের ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যানপায়েল। ১০ই ডিসেম্বর পিংলা থানায় একটি অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন স্বামী সোমনাথ। সোমনাথ জানিয়েছেন, সাড়ে চার বছর আগে ডেবরা থানার মাড়োতলা এলাকার পায়েলের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। তাঁদের তিন বছরের পুত্র সন্তান ছিল। তিনবছর ধরে হায়দ্রাবাদে রাজমিস্ত্রির পেশায় কর্মরত সে। মাঝেমধ্যে বাড়ি আসত। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে পায়েল ছেলের জন্ম নথি আনার জন্য মাড়োতলা গিয়েছিল। ছিল ১৭দিন। সেই সময় বাপের বাড়ির কাছে একটি মেলাও চলছিল। সেখানেই আলাপ হয়েছিল ময়না থানার গোকুলনগরের সেক এসারুলের সাথে। নভেম্বর মাসের শেষে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে আসে পায়েল। কিন্তু এসারুলের সঙ্গে ফোন মারফৎ কথাবার্তা চলত। এরপর ৯ ডিসেম্বর রাতে ছেলেকে নিয়ে পালায় সে। সোমনাথের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি অপহরণের মামলা দায়ের করে পুলিশ।
সোমনাথ জানিয়েছেন, গত ৯ই ডিসেম্বর পায়েল নিখোঁজ হওয়ার মাস ছয়েক আগেও এক যুবকের সাথে পালিয়েছিল পায়েল। খোঁজ খবর করে কয়েকদিনের মধ্যে ফেরৎ আনা হয়। বাড়ির তরফে পায়েলকে কোনও মোবাইল ফোন কিনে দেওয়া না হলেও সে একটি মোবাইল ফোন লুকিয়ে ব্যবহার করত। সম্ভবতঃ তার প্রেমিকই পায়েলকে ফোনটি দিয়েছিল। সোমনাথের প্রতিবেশীরা তাকে জানিয়েছিল ৯ই ডিসেম্বর রাতে একটি চারচাকার গাড়ি দেখা গিয়েছিল বাড়ির আশেপাশে। সেই গাড়িতেই পায়েল ও তাঁর সন্তানকে নিয়ে পালায় এসারুল। দরজা খুললে পাছে শব্দ হয় এই কারনে বাড়ির পেছনের দিকে বাঁশের জানলা ভেঙে সম্ভবতঃ নিয়ে যাওয়া হয় পায়েল ও তাঁর সন্তানকে।
এই ঘটনার খবর পেয়ে হায়দ্রাবাদ থেকে চলে আসে সোমনাথ। নিজের ফেসবুক পেজে স্ত্রী ও পুত্রের ছবি সহ একটি নিখোঁজ সংবাদও পোষ্ট করে সে। বলে, তাদের সন্ধান দিলে ৫হাজার পুরস্কার দেওয়া হবে। গরিব রাজমিস্ত্রির এরচেয়ে আর বেশি সম্বল কোথায়? তারপর থেকে দারুন দুশ্চিন্তায় ছিল সোমনাথ ও তাঁর পরিবার। এখন পায়েলকে পাওয়া গেলেও সন্তান কোথায় গেল তাই নিয়ে দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে পরিবারের। সন্তানটি মারা গেছেই বলে মনে করছে পুলিশ কিন্তু কী করে মারা গেল তা পুলিশের কাছে খোলসা করে বলেনি পায়েল বা এসারুল। পুলিশ এসারুলকে আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এসে আরও জেরা করতে চায়। আদালতে আলাদা করে হাজির করা হয়েছে পায়েলকেও। পুলিশ তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে। সোমনাথ জানিয়েছেন, ‘সন্তানকে নিয়ে আমি খুব উদ্বিগ্ন! আমার দুধের শিশুকে খুন করে দেয়নি তো?’ পুলিশ দুজনকেই ৭দিনের জন্য নিজস্ব হেফাজতে নিয়েছে।