নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রায় ৫০ বছর পেরিয়ে দ্বিতীয় আরেকটি ফুট ব্রিজ পেল মেদিনীপুর স্টেশন। আরো আধুনিক ও নতুন সুবিধা যুক্ত এই ফুটব্রিজটি মেদিনীপুর স্টেশনের যাত্রী পরিষেবাকে আরও উন্নত করতে সহায়তা করবে বলে জানালেন দক্ষিণ পূর্ব রেলের (South Eastren Railway) এর খড়গপুর ডিভিশন (Kharagpur Rail Division) রেলওয়ে ম্যানেজার (DRM) মনোরঞ্জন প্রধান (Manoranjan Pradhan)। মেদিনীপুর স্টেশনে যে হারে যাত্রী বেড়েছে সেই ভার কার্যত সামাল দিতে সমস্যা হচ্ছিল পুরানো ওভার ব্রিজটির। স্টেশনে ট্রেন ঢুকলেই পুরানো সংকীর্ণ ওভারব্রিজটি এতটাই ভিড়ে ভরে যেত যে যাত্রীদের ওঠা নামায় অসুবিধা হত। তাছাড়া পুরানো ধাঁচের ব্রিজ হওয়ায় সেটির ধাপ গুলি খুব খাড়া, ফলে ওঠা নামায় অসুবিধা হত বয়স্কদের। নতুন ব্রিজটি সেই সব ত্রুটি কাটিয়ে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য দিতে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছেন মনোরঞ্জন প্রধান।
এই ব্রিজ উদ্বোধনের ঘটনাকে ঘিরে ব্যতিক্রমী দৃশ্যও নজরে পড়েছে। কেন্দ্রীয় এই প্রকল্পের উদ্বোধনে পাশাপাশি দেখা গেল মেদিনীপুর সাংসদ দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) ও মেদিনীপুর বিধায়ক জুন মালিয়াকে (June Malia)। শুধু তাই নয় কর্মীদের উত্তাপকে উপেক্ষা করেই দীর্ঘক্ষণ মঞ্চের আভিজাত্য উপভোগ করতে দেখা গেল দুজনকে। রবিবার মেদিনীপুরে স্টেশন ফুটওভার ব্রিজ উদ্বোধনে একই মঞ্চে দেখা গেল সাংসদ দিলীপ ঘোষ এবং বিধায়ক জুন মালিয়াকে। ফিতে কেটে এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন দু’জনে। তৃনমুল শাসনে রাজনৈতিক সৌজন্যের যে বাতাবরণ হারিয়ে গেছে তারই একটি ব্যতিক্রমী চিত্র ধরা পড়ল এদিন। যদিও দিলীপ ঘোষ খোঁচা দিয়ে বলেছেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্প বলেই এটা সম্ভব, রাজ্যের প্রকল্পের উদ্বোধনে, অনুষ্ঠানে বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের আমন্ত্রণের সৌজন্য এই সরকার অনেক দিনই শিকেয় তুলে দিয়েছে।
অন্যদিকে যেহেতু সাংসদ ও বিধায়ক দুটি ভিন্ন ভিন্ন দলের তাই স্টেশনে ফুটওভার ব্রিজ উদ্বোধনের মত অরাজনৈতিক সরকারি অনুষ্ঠানকে দলীয় রঙে ছড়িয়ে দেওয়ার কম কসুর করলেন না বিজেপি অথবা তৃনমূল কংগ্রেস কর্মীরা। সরকারি অনুষ্ঠানে তাঁদের নেতারা যে রাজনৈতিক পদাধিকার বলে নয়, জনপ্রতিনিধি বা সাংসদ ও বিধায়ক হিসাবেই আমন্ত্রিত তা ভুলে গিয়ে রেলের ওই অনুষ্ঠান মঞ্চে দিলীপ ঘোষ এবং জুন মালিয়া ওঠার আগে দুই দলের কর্মী-সমর্থকরা রাজনৈতিক স্লোগানে মাতিয়ে তুললেন স্টেশন চত্ত্বর। চলল ‘জয় বাংলা’ বনাম ‘জয় শ্রীরাম’ চিল চিৎকার। তারই মাঝে প্রদীপ জ্বালিয়ে, ফিতে কেটে উদ্বোধন করেন তাঁরা।
সাধারণভাবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের উদ্বোধন এড়িয়েই চলেন রাজ্যের শাসকদলের নেতানেত্রীরা। কিন্তু রবিবার জুন মালিয়ার উপস্থিতি একটু অবাকই করেছে। রেলপ্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে তৃণমূল বিধায়ক জুন মালিয়া বলেন, “উন্নয়নে যাতে বাধা না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখব। বাংলা, দেশের উন্নয়নমূলক কাজে রাজনীতি করা উচিত নয়। তাই রাজনীতির রং না দেখে সাংসদের সঙ্গে একই মঞ্চে এসেছি।” অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক স্লোগানের বিষয়ে মুখ খোলেন জুন। তিনি বলেন, “ সব কিছুকে গুরুত্ব দিতে নেই। আমি নিজে অন্ততঃ এই সব বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিই না।” অন্যদিকে বিধায়ক জুন মালিয়ার উপস্থিতিকে স্বাগত জানিয়েও ওই মঞ্চ থেকে রাজ্য সরকারকে কিছুটা খোঁচা দিতে ছাড়েননি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, “কেন্দ্র সরকারের অনুষ্ঠানে স্থানীয় বিধায়ক এবং সাংসদকে ডাকা হয় তা তিনি যে দলেরই হোন না কেন। রাজ্য সরকারের এটা দেখে শেখা উচিত। এখানকার সরকার বা পার্টি সেটা শিখতে চায় না।”
যদিও রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে রেলের এই নতুন পরিকল্পনায় খুবই খুশি সাধারণ মানুষ ও নিত্যযাত্রীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, ১নম্বর প্ল্যাটফর্মের বাইরে ট্রেন ঢুকলেই আতঙ্কে থাকতে হয়। অত খাড়া সিঁড়ি বেয়ে উঠত হয়। নতুন ব্রিজটির পরিসর চওড়া হওয়ায় অনেকটা জায়গাও পাওয়া যাবে। এটা খুবই দরকার ছিল।