নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কাকে বিশ্বাস করবে মানুষ! যে মানুষটা প্রতিদিন বাড়িতে এসে রুটি দিয়ে যায় তারই আস্তিনের তলায় লুকানো ছুরি! সন্তানসন্ততিরা দুরে থাকে। বাড়িতে প্রৌঢ় স্বামী-স্ত্রী। রোজ রুটি ফেরি করতে আসা মানুষটিকে সন্তানসম ভেবে বসা কী ভুল? সম্প্রতি দাসপুরের এক হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে যে তথ্য উঠে এসেছে তাই থেকেই উঠে আসছে প্রশ্নগুলি। বুধবার সাতসকালে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার কলোড়া সংলগ্ন কংসবতী নদী থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক মহিলার বস্তাবন্দি গলাকাটা মৃতদেহ। সেই মৃতদেহকে নিজের স্ত্রী উর্মিলা দাসের মৃতদেহ বলে সনাক্ত করেন নবীন মানুয়া গ্রামের চিত্তরঞ্জন দাস। আর তারপর তাঁর একটাই প্রশ্ন মানুষকে বিশ্বাস করা কী পাপ?
৬২ বছরের চিত্তরঞ্জন দাস জানিয়েছেন, তাঁর এবং তাঁর স্ত্রী ঊর্মিলা (৫৮)র তিন সন্তান। ছেলে সোনার কাজের সূত্রে স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে প্রবাসে থাকেন। দুই মেয়ে বিবাহসূত্রে শ্বশুরবাড়িতে। প্রৌঢ় দম্পত্তি নিঃসঙ্গ, থাকেন দাসপুরের নবীন মানুয়া গ্রামে। সেই বাড়িতেই রুটি, কেক দিতে আসত এক ফেরিওয়ালা। নিত্যদিনের যাতায়তে আলাপ থেকে একটু একটু করে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। চিত্তরঞ্জন বলেছেন, ‘ ছেলেটিকে আমার স্ত্রী এতটাই ভালোবাসতেন যে তাঁর কাছ থেকে পাঁচ টাকার জিনিস কিনলে তাকে ২৫টাকা খাওয়াতো। চা, টিফিন, কখনও সখনও ভাতও। সেই ছেলেকেই আমাদের নাতনির (মেয়ের মেয়ে) জন্য একটি সুপাত্র খুঁজে দিতে আবদার করেছিল আমার স্ত্রী। আমার স্ত্রীর একটু গহনা পরার শখ ছিল। বাড়িতেও টুকিটাকি গহনা পরে থাকত। আমার ছেলে যেহেতু সোনার কারিগর তাই মায়ের শখ মেটাতো মাঝে মধ্যে গহনা দিয়ে। কী করে জানব বলুন যাকে আমরা নিজের ছেলের মতই ভেবেছিলাম সেই আমার স্ত্রীকে খুন করবে ওই গহনার জন্য?”
মঙ্গলবার উর্মিলাদেবীকে নিয়ে নাতনির জন্য পাত্র দেখাতে নিয়ে গেছিল ওই রুটি বিক্রেতা। আশা যে মহিলা ঘরেই সোনার গয়না পরে থাকে সে নাতনির পাত্র দেখতে গেলে আরও কত গহনা পরবে! পরেও ছিলেন উর্মিলা। তারপর বেরিয়ে যান রুটিওয়ালার সাথে। তারপর আর ফেরেননি। বুধবার দাসপুরের কোলোড়া এলাকায় কংসাবতী নদী থেকে এক মহিলার বস্তাবন্দি গলাকাটা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
খবর ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। মহিলার ছবি ও শাড়ি দেখে তার স্বামী চিত্তরঞ্জন দাস শনাক্ত করেন যে, ওই মহিলা তাঁরই স্ত্রী ঊর্মিলা। চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। শুক্রবার মাঝ রাতে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। ঊর্মিলার প্রতিবেশীরা বলছেন, ওই ফেরিওয়ালা প্রায়ই আসত গ্রামে। ফেরিওয়ালা বলত, তার বাড়ি কেশপুরে। দাসপুর এলাকাতেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। সূত্রের খবর, ধৃত তিন জনের মধ্যে বাকি দু’জনের বাড়ি কেশপুর এলাকায়। ঘটানার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, ‘ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একটি ভজালি এবং কিছু সোনার গহনা উদ্ধার করা গেছে। ধৃতদের নাম সাগর খান, সেখ মহিবুল ইসলাম এবং সামিম আহম্মেদ। এদের মধ্যে সাগরের বাড়ি মেদিনীপুরের ধর্মাতে। তদন্তের স্বার্থে বাকি দু’জনের ঠিকানা এখনই বলা হচ্ছে না। প্রাথমিক ভাবে জানাগেছে, মহিলার শরীরে থাকা গহনা হাতানো ছিল মূল উদ্দেশ্য। পুলিশ সুপার বলেন, আমাদের পুরো টিম দ্রুততার সঙ্গে এই খুনের কিনারা করেছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিকদের ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করা হবে।’