নিজস্ব সংবাদদাতা: নিজেরা সিদ্ধান্ত করে গাছ কাটতে পারবেনা গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি। এমনকি বিদ্যালয়ের জমি থেকে গাছ কাটতে পারবেনা ম্যানেজিং কমিটিরও। মূলতঃ পঞ্চায়েতের হাত থেকে গাছ লুট আটকাতে এই কড়া সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিল পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ। ২০১১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধে গাছ লুটের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। লুটের পরিমান লাগাম ছাড়া হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়েছিল বনদপ্তরও কিন্তু কিছু বলার উপায় ছিলনা শাসকদলের এই মিনি কেউকেটাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু বালি, পাথর খাদান লুটের মতই গাছ লুটের কারবার মাত্রা ছড়ানোর পর রুখে দাঁড়াতে এবার বাধ্য হয়েছে সরকারও।
সম্প্রতি মেদিনীপুর সফরে এসে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তারপরই বনদপ্তর, জেলাপরিষদ ও পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মিটিংয়ে বসে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে পঞ্চায়েতের কোনও স্তরেই একক সিদ্ধান্ত নিয়ে গাছ কাটা যাবেনা। নিতে হবে সংশ্লিষ্ট বনদপ্তরের অনুমতি। বনদপ্তরের অনুমতি ব্যতিরেকে গাছ কাটলে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত কর্তার বিরুদ্ধে এফআইআর, আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি তাঁকে গ্রেফতার করতে পারে পুলিশ।
শুক্রবার নিজস্ব দপ্তরে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানিয়েছেন, ” বনদপ্তর, পুলিশের সঙ্গে যৌথ মিটিংয়ের মধ্যে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বনসংরক্ষণ আইন অনুযায়ী কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক একমাত্র রায়ত জমির মালিকই তাঁর নিজস্ব গাছ কাটতে পারবেন। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও গাছ কাটতে পারবেননা। নিজের প্রাঙ্গনে হলেও গাছ কাটতে পারবেনা স্কুল কর্তৃপক্ষ। কোনও সরকারি অফিসের প্রাঙ্গনে থাকা কোনও গাছ কাটতে পারবেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও। এইসব ক্ষেত্রে গাছ কাটতে হলে বনদপ্তরের সংশ্লিষ্ট রেঞ্জারের কাছে অনুমতি নিতে হবে। বন আধিকারিকরা সেই গাছ পরিদর্শন করবেন এবং অনুমতি দেবেন।
যদিও অনুমতি নিয়ে গাছ কাটার পর সেই গাছ অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যাবেনা। গাছ কাটার পর ফের তা ওই বন আধিকারিককে জানাতে হবে। বন আধিকারিক ফের সেখানে যাবেন এবং কেবলমাত্র অনুমতি প্রাপ্ত গাছই কাটা হয়েছে কিনা দেখবেন। তারপর তিনি পরিবহনের অনুমতি দেবেন। কাটা গাছের গায়ে একটি পরিবহন অনুমতি যোগ্য ছাপ দেবেন তবেই সেই গাছ স্থানান্তরিত করা যাবে। যদিও এরপরও পুলিশ সুপারের হুঁশিয়ারি, অনুমতি থাক আর নাই থাক কোনও গাছই সূর্যোদয়ের আগে এবং সূর্যাস্তের পরে কাটা ও পরিবহন করা যাবেনা। তা করলেও গ্রেফতার করতে পারে পুলিশ। সূর্যাস্তের পর কোনও গাছ পরিবহন করা হলে পুলিশ তা আটকাবে এবং সংশ্লিষ্ট বনদপ্তরের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। সেই বনদপ্তর যদি ছাড়পত্র দেয় তবেই সেই গাড়ি ছাড় পাবে।
উল্লেখ্য পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১০টি গাছ কাটার মামলায় এখনও অবধি ১৬জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন যার মধ্যে গড়বেতার ঘটনায় এক তৃনমূল প্রধানকে ওড়িশা থেকে গ্রেফতার করে। এখনও অবধি পুলিশ প্রায় পৌনে ৩ হাজার গাছ উদ্ধার করতে পেরেছে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, বনাঞ্চল নয় ( নন ফরেস্ট এরিয়া) এমন এলাকারও গাছের অভিভাকত্ব থাকছে বন আধিকারিকরাই। বেআইনি গাছ কাটা আটকাতে বনদপ্তরের পাশাপাশি পুলিশও নিজস্ব উদ্যোগে অভিযান চালাবে বলে জানানো হয়েছে।