শশাঙ্ক প্রধান: আর ঘন্টা খানেকের মধ্যেই বাড়ি পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। আর মায়ের কাছে সেই খবর পেয়েই আনন্দে লাফিয়ে উঠেছিল ৬ বছরের মেয়ে। দক্ষিণপূর্ব রেলের খড়গপুর-হাওড়া শাখার হাউর স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে নেমেই স্ত্রীকে ফোন করে জানিয়েও দিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর পিংলা থানার উপলদা গ্রামের বাসিন্দা ৩২ বছরের বিশ্বজিৎ পড়্যা। সঙ্গে ছিল দু’তিনটি ব্যাগ। একটি ব্যাগে স্ত্রী আর মেয়ের জন্য শাড়ি আর কিছু খেলনা। আরেকটা ব্যাগে মা বাবার জন্য টুকিটাকি।
ব্যাগ গুলো নিয়ে ওভারব্রিজ এড়িয়েই রেললাইন পেরিয়ে ১নম্বর প্ল্যাটফর্ম-এ উঠতে চেয়েছিল বিশ্বজিৎ। ১নম্বর প্ল্যাটফর্ম পেরুলেই ট্রেকার কিংবা অটো ধরে সোজা উপলদা। কিন্তু মনের মধ্যে চেপে থাকা স্ত্রী কন্যা কিংবা বাবা-মায়ের চিন্তা এমনই তাড়িয়ে বেড়িয়েছিল তাঁকে যে সে খেয়ালই করতে পারেনি একটি থ্রু ট্রেন তাঁর ঘাড়ে এসে পড়েছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই ট্রেন পিষে দিয়ে চলে গেল বিশ্বজিৎকে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা নাগাদ এমনই মর্মান্তিক ঘটনার স্বাক্ষী রইল পূর্ব মেদিনীপুরের হাউর স্টেশন।
ঘটনার খবর পৌঁছাতেই পিংলার উপলদা গ্রাম জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্থানীয় সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এদিন সুদূর মুম্বাই থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলার উপলদা গ্রামে নিজের বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন ওই পরিযায়ী যুবক। তিনি মুম্বাইয়ে একটি প্রখ্যাত মিষ্টির দোকানে কারিগর ছিলেন। বৃহস্পতিবার বেলা দশটা নাগাদ খড়গপুর স্টেশনে নেমে,ফের লোকাল ট্রেন ধরে হাউর স্টেশনে নেমে নিজের গ্রামের উদ্দেশ্যেই রওনা দিচ্ছিলেন। কিন্তু সেখানেই থেমে গেল তাঁর জীবন , ফেরা হলো না আর বাড়ি!
হাউর স্টেশনে সেই সময় থাকা ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, খড়গপুর-হাওড়া লোকালে তিনি হাউর স্টেশনে নেমেই কোন দিক না দেখেই আনমনা ভাবে লাইন পার হচ্ছিলেল, সেই সময় চোখের পলকেই ঘটে যায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। একটি ট্রেন তাঁকে ধাক্কা দিয়েই তার ওপর দিয়ে চলে যায়, ঘটনাস্থলেই যুবকের একটি হাত দেহ থেকে আলাদা হয়ে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। ‘ এদিকে ঘটনার খবর পেয়েই বিশ্বজিতের বাড়ির সামনে ভেঙে পড়েছে শোকস্তব্ধ গ্রামবাসীদের ভিড়। তমলুকে ময়নাতদন্তের পর গ্রামের যুবকরা বিশ্বজিতের দেহ নিয়ে রওনা দিয়েছেন উপলদার উদ্দেশ্যে। স্থানীয় পিন্ডরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কৃষ্ণপ্রসাদ বেরা জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু সাহায্য করার তার সবটুকুই যাতে ওই পরিবার দ্রুত পেতে পারে সেই ব্যাপারে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব।