নিজস্ব সংবাদদাতাঃ পুরীতে জগন্নাথ মন্দির রয়েছে তাই দিঘাতেও জগন্নাথ মন্দির চাই, এমনই ইচ্ছা মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে তাই সরকারি উদ্যোগে জগন্নাথ মন্দির গড়ার গড়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জোর কদমে। সরকারের মন্দির গড়ায় দেশের আইন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে তাই আইনি বাধা এড়াতে যার নাম দেওয়া হয়েছে জগন্নাথধাম সংস্কৃতি কেন্দ্র!
১২৮ কোটি টাকার এই প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে ২৫একর জায়গা জুড়ে যার পুরোটাই বালিয়াড়ি। এরফলে অদূর ভবিষ্যতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি তো রয়েইছে কিন্তু এখুনি সর্বনাশের মুখে পড়েছেন ওই এলাকায় দশকের পর দশক জুড়ে বসবাস করছেন এমন ভূমিহীন গরীব দিনমজুর পরিবারগুলি। দিঘার ভগীব্রহ্মপুর গ্রামের ওই ভূমিহীন পরিবারগুলি দাবি করেছেন কোনও নোটিস ছাড়াই তাঁদের উচ্ছেদের ফতোয়া জারি করেছে প্রশাসন। এই ফতোয়ায় দিশেহারা ১৮ থেকে ২০টি পরিবার।
ভগীব্রাহ্মপুর মৌজার গ্রামীন ঢালাই রাস্তার দক্ষিণ অংশে যেখানে প্রকল্পটি গড়ে উঠতে চলেছে সেখানকার অধিবাসীদের অভিযোগ, পুনর্বাসন ছাড়া ওই অংশে বসবাসকারী পরিবারগুলিকে দ্রুত জায়গা খালি করে দিতে বলেছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। উচ্ছেদ নোটিশ ছাড়াই দিনকয়েক আগে পর্ষদ কর্মীরা এসে জানিয়ে যান সে কথা। তারপর থেকেই অজানা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মাথায় হাত পড়েছে পরিবারগুলির। আশঙ্কিত গজেন্দ্র পাত্র, হরিপদ পাত্র, কবিতা শর্মা, শকুন্তলা মান্নারা জানিয়েছেন, কেউ ২৫ বছর, কেউ ৩০বছর ধরে বাস করছেন। এই অবস্থায় তাঁদের উঠে যেতে হলে কোথায় যাবেন বউ বাচ্চা পরিবার নিয়ে?
ওই পরিবারগুলি আরও জানিয়েছেন, বর্তমান মূখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিলেন, জায়গা রায়ত হোক অথবা দখল, পুনর্বাসন ছাড়া কাউকেই উৎখাত করা যাবেনা। এমনকি আগের বাম সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনও করেছেন তিনি। তাহলে এখন তারই সরকারের অধীন উন্নয়ন পর্ষদ পুনর্বাসন ঘোষণা না করে কেন উচ্ছেদ করতে চাইছে? কেনই বা কোনও নোটিস ছাড়া এই উচ্ছেদ হুমকি? বিষয়টি বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাম দল সিপিএম।
বৃহস্পতিবার পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদের বিরুদ্ধে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের প্রশাসক মানস কুমারের মন্ডলের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য আশিস প্রামাণিক, জেলা কমিটির সদস্য রমাপতি মিশ্র, রামনগর এরিয়া কমিটির সদস্য উৎপল মাইতি , নিউ দিঘা শাখা সিপিএমের সম্পাদক বিমল কৃষ্ণ পাত্র সহ একগুচ্ছ নেতা ও কর্মী আশঙ্কিত পরিবারগুলিকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন দিঘার পর্ষদ কার্যালয়ে। সেখানেই তাঁরা জানিয়েছেন, সরকার মন্দির বানাক কিংবা অন্য কিছু কিন্তু ওইখানকার গরীব মানুষকে পুনর্বাসন দিয়েই তা করতে হবে। আশিস প্রামানিক বলেন, ‘কোটি কোটি টাকার বরাদ্দ হচ্ছে দিঘার উন্নয়নে, হচ্ছে ব্যাপক দুর্নীতিও। দিঘার উন্নয়ন হোক কিন্তু এখানকার মানুষকে যেন পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করা না হয়। সেরকম চেষ্টা হলে এখানকার সাধারণ মানুষকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামব আমরা।’
সিপিএমের তরফে দাবি করা হয়েছে এর আগে অনেক উচ্ছেদ হয়েছে যাঁদের পুনর্বাসন হয়নি। এমনকি দিঘায় রেলপ্রকল্পের জন্য অধিগৃহীত জমির মালিকদের একাংশ এখনও টাকা পাননি। এক সিপিএম নেতা জানান, দিঘার প্রশাসক আমাদের জানিয়েছেন যে এঁদের বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যদি সেটা না হয় তবে আমরা এখান থেকে কাউকে সরাতে দেবনা। আমরা ঠিক করেছি জেলাশাসক, বিডিও এবং ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক ইত্যাদি বিভিন্ন স্তরে আগে দাবিপত্র পেশ করব। তারপর শুরু হবে উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলন।