নিজস্ব সংবাদদাতা: ঠিক ২০দিন আগেই এই রাজ্য সড়কের ওপর চলন্ত মারুতিকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছিল নির্মীয়মান বাড়ির রড। সেবার মারুতি গাড়ির চালক মারাত্মক আহত হলেও কোনও মতে জীবন বেঁচেছিল তাঁর কিন্তু এবার আর জীবন বাঁচলনা বাইক আরোহীর। বাড়ির নির্মাণকার্যে ব্যবহৃত বাঁশ এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল এক আলু ব্যবসায়ী বাইক আরোহীকে। জানা গেছে রাজ্য সড়কের ধারেই তৈরি হচ্ছিল পাকা বাড়ি। সেই কাজের জন্য প্রয়োজন হয়েছিল বাঁশের ভারা তৈরি করার। একটি স্থান থেকে সেই বাঁশ এনে জমা করা হচ্ছিল বাড়িটির সামনে। ঠিক সেই সময় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল একটি বাইক। মুহূর্তের অসতর্কতায় সেই বাঁশ এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে চলে গেল বাইক চালকের বুক।
পশ্চিম মেদিনীপুরে এই ভয়াবহ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে বুধবার বেলা ১০টা নাগাদ দাসপুর মেদিনীপুর রাজ্য সড়কের রামগড় নামক জায়গায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে ওই বাইক আরোহীর। পুলিশ জানিয়েছে মৃত ব্যক্তির নাম নিতাই মাইতি। ৪৫ বছরের নিতাই মাইতি একজন আলু ব্যবসায়ী। তাঁর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলারই ডেবরা থানার অন্তর্গত ভবানীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শ্যামসুন্দর পাটনা লাগোয়া সিঙ্গারগড় গ্রামে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিমাই মাইতি তাঁর একজন সঙ্গীকে নিয়ে দাসপুর থানার বৈকুণ্ঠপুরে গিয়েছিলেন। বৈকুণ্ঠপুরের একটি হিমঘরে আলু রাখার জন্য বন্ড জমা করে তারিখ নিতে গেছিলেন।
ওই ব্যবসায়ী আগামীকাল বৃহস্পতিবার ওই হিমঘরে আলু জমা করার তারিখ পান তাই আজ রাতের মধ্যেই তাঁকে লরিতে আলু বোঝাই করতে হবে মনে করে বৈকুণ্ঠপুর থেকে নাড়াজলের দিকে রওনা হন তিনি। নাড়াজল থেকে ফেরি পেরিয়ে ডেবরার ভবাণীপুর অঞ্চলে প্রবেশ করতে হয়। দুর্ঘটনা ঘটে রামগড় চাতাল পেরিয়ে রামগড় গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময়। রামগড় গ্রামের বাসিন্দা অসিত মাঝির একটি বাড়ি তৈরি হচ্ছিল। সেই বাড়ির প্লাস্টার করার জন্য ভারা বাঁধার বাঁশ জড়ো করা হচ্ছিল অন্য স্থান থেকে এনে। একটি লম্বা বাঁশ রাস্তার ওপর দিয়েই ঘোরানোর সময় বাইক নিয়ে চলে আসেন নিতাই মাইতি। আর বাঁশটির ছুঁচালো ডগা সোজা ঢুকে যায় তাঁর বুকের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায় পিঠের অংশ দিয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, যারা বাঁশ নিয়ে রাস্তার ওপর ঘোরাচ্ছিলেন তারা রাস্তার যানবাহনের দিকে নজর রাখেননি। অন্য দিকে নিতাই মাইতির বাইকটি গতিতে থাকার কারণে বাঁশ লাগার সঙ্গে সঙ্গে তা শরীর এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়। পেছনে থাকা নিতাইয়ের সঙ্গী বাইক থেকে ছিটকে পড়েন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটনাটি ঘটে যায়। আশেপাশের লোকেরা দৌড়ে এসে নিতাইয়ের সঙ্গীকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠান কিন্তু নিতাইয়ের জন্য আর কিছু করার ছিলনা। খবর পেয়েই ছুটে আসে দাসপুর থানার পুলিশ। মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
এই ঘটনায় মারাত্মক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্যান্য বাইক আরোহী সহ রাজ্য সড়ক ব্যবহারকারী মানুষজন। গত ৩০শে জুন এই রাজ্য সড়কেরই সুরানারায়নপুর এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় নির্মীয়মান বাড়ির রডের গুচ্ছ একটি মারুতি গাড়ির একদিক দিয়ে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। সেবার মারুতি গাড়ির ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি মারুতি চালকের মুখমন্ডল রক্তাক্ত হয়ে যায়। অল্পের জন্য বেঁচে যায় তাঁর চোখ। এই রাস্তার দুধারেই জমা হয়ে থাকা অজস্র নির্মাণসামগ্রী বারংবার দুর্ঘটনা ঘটিয়েই চলেছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই রাস্তা ব্যবহারকারীরা। আজ তারই মাশুল জীবন দিয়ে দিতে হল এক ব্যবসায়ীকে।
ডেবরা ভবানীপুর অঞ্চলের উপপ্রধান জগন্নাথ মুলা বলেন, নিতাইবাবুরা যৌথপরিবার। তাঁর আরও চারভাই ছাড়াও স্ত্রী ও দুই কন্যা বর্তমান। একটি মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, অন্যজন স্কুলে পড়ে। দাসপুর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুধাকর মন্ডল বলেন নিতাই মাইতি আমাদেরই ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য উনার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোক প্রকাশ করছি এছাড়াও বাড়ির লোকের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি উনি আরো বলেন নিতাই মাইতির পরিবারের যদি কোনরকম সাহায্য লাগে আমরা সেই সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে। ময়নাতদন্তের পর বুধবার বিকালে নিতাই মাইতির দেহ এসে পৌঁছায় কেপি কোল্ড স্টোরেজ প্রাঙ্গনে। ওই কোল্ডস্টোরেজ ছাড়াও মালবিকা কোল্ডস্টোরেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মরদেহে মাল্যদান করার পর দেহ ডেবরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ঘটনায় এখনও অবধি কেউ গ্রেফতার হয়নি।