নিজস্ব সংবাদদাতা: “ছেলে অনেকদিনই রাজনীতি করা ছেড়ে দিয়েছিল কিন্ত গত পুরসভা নির্বাচনে খড়গপুর পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকারই পুলিশকে দিয়ে বাধ্য করায় তাঁর হয়ে ভোটের প্রচারে নামতে।” পুলিশ আর শাসকের এমনই ‘জয়েন্ট ভেঞ্চার’ এর কথা বললেন দুস্কৃতীদের হাতে নিহত প্রসাদ রাও-এর বাবা আনন্দ রাও। রাও আরও বলেন, এই হচ্ছে তৃনমূল দল। কাজের সময় কাজ করিয়ে নিয়ে এখন নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। রাওয়ের আরও অভিযোগ পুলিশ তাঁর ছেলের হত্যারহস্য নিয়ে কাজের কাজ না করে শুধুই আই-ওয়াশ করছে। বুধবার খড়গপুরে নিজেরই বাড়িতে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে এমনই অভিযোগ করেন আনন্দ। এই সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির ছিলেন নিহত প্রসাদ রাওয়ের ছেলে সাগরও। দাদুর সুরে সুর মিলিয়ে সাগরও দাবি করেছেন, তদন্তের নামে আইওয়াশ করছে পুলিশ। আসল অপরাধীদের না ধরে অন্যদের ধরছে।
আনন্দ রাও বলেন, ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনের পর তৎকালীন শ্রীনু নাইডুর সাথেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন প্রসাদ রাও। প্রসাদ তখন শ্রীনুর সাকরেদ। ২০১৭ সালে শ্রীনু হত্যার পরই তৃনমূল ছেড়ে দেয় প্রসাদ। সে নিজের ব্যবসা নিয়েই থাকত। এরপর নির্বাচন এলেই প্রদীপ সরকার তাঁকে তৃনমূলের হয়ে কাজ করার জন্য চাপ দিত। আনন্দ রাও জানিয়েছেন, “গত পৌর নির্বাচনেও প্রদীপ সরকার পুলিশকে দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে তাঁর হয়ে কাজ করতে। আমার ছেলে রাজি হয়নি বলে পুলিশ বেশ কয়েকবার তাঁকে হাজতে ভরে রাখে, হেনস্থা করে। কিন্তু তারপরও আমার ছেলেকে রাজি করানো যায়নি। এরপর আমাদের এলাকার মাতাপূজার জন্য অনুমতি চাইতে পুলিশের কাছে গেলে প্রদীপ সরকার ও পুলিশ মিলে থানায় বসেই আমার ছেলেকে ফের নির্বাচনে কাজ করতে বলে। তারা এও বলে যে এই শেষবারের মত অন্ততঃ প্রদীপ সরকারের হয়ে কাজ করে দিক সে। তারপরই আমার ছেলে তৃনমূলের হয়ে কাজ করে। প্রাসাদের জন্যই তৃনমূল ১৮, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী হয়।”
অন্যদিকে নিহত প্রসাদের ছেলে একটি পলেটেকনিক কলেজের পড়ুয়া সাগর রাও বলেন, ” পুলিশ যাদের ধরেছে তারা আদৌ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে কিনা নিশ্চিত নই। এমনকি পুলিশ এই ব্যাপারে কোনও কিছু নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। তাই আমরা গোটা ঘটনার কিনারায় সিআইডি তদন্তের দাবি করছি।” উল্লেখ্য গত ২৭জুন প্রসাদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ ৩জনকে গ্রেফতার করে। এঁদের মধ্যে ২ জন রেলকর্মী। মৃত প্রসাদের বাবা আনন্দ রাও রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন ” ধৃত ৩ জনের মধ্যে শুভম সোনার ঘটনার পর হাসপাতালে উপস্থিত ছিল। এমনকি শেষকৃত্যের সময় শ্মশানে উপস্থিত ছিল। আর বাকি দুজন রেলকর্মী। এই তিনজন কি করে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে বুঝতে পারছি না। আমি চাই ন্যায় বিচার। গোটা ঘটনার মূল মাথাকে ধরতে হবে।”
আনন্দ রাওয়ের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পুলিশের কোনও মন্তব্য পাওয়া না গেলে খড়গপুর পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেছেন ” প্রসাদকে জোর করে তৃণমূলে আনা হয় নি। তিনি নিজের আগ্ৰহেই এবারে পুরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব নিয়ে তিনটি ওয়ার্ডে কাজ করেছেন। কেন তাঁর পরিবার এই কথা বলছেন বুঝতে পারছি না। আর তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না করলেও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়েছে। প্রতিদিন প্রসাদ খুনের ঘটনায় অগ্ৰগতির খবর নেওয়া হচ্ছে। এমনকি ঠিক করা হয়েছে শীঘ্রই টাউন থানার আইসির সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের আলোচনার একটি ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। যাতে তাঁদের বিভ্রান্তি কেটে যায়।”