শশাঙ্ক প্রধান: সূর্য ডুবলেই তড়িঘড়ি করে ঢুকে যেতে হয় ঘরে, বিশেষ করে যদি সঙ্গে মহিলা থাকে। মহিলাদের একা যাওয়ার তো প্রশ্নই নেই, যদি কোনও পুরুষ তাঁর সঙ্গী মহিলাকে নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানার আষাঢ়ী মোড় থেকে রাধামোহনপুরের দিকে যান তবে কথাই নেই। ইভটিজারদের খপ্পরে পড়তেই হবে। শুরু হয়ে যাবে মুখে দু-আঙুল ঢুকিয়ে সিটি মারা, কুৎসিত ইঙ্গিত, কদর্য কথন। সন্ধ্যা নামলে বাবার সাথে মেয়ে, মায়ের সাথে ছেলে কিংবা ভাই-বোনেরও যাওয়ার উপায় নেই এমনই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। অভিযোগ আরও যে পুলিশ কিংবা স্থানীয় নেতাদের জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। সন্ধ্যা হলেই তাই মেয়েরা এই রাস্তায় চলতেই পারেননা।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/05/Screenshot_20220501-230442_Video-Player.jpg)
কিন্তু বরাত সব সময় সঙ্গী হয়না। কোনও কোনও সময় কোনও জায়গা থেকে ফিরতে দেরি হয়ে যায়।
আষাঢ়ী ১৬ নম্বর হাওড়া-মুম্বাই জাতীয় সড়কের ওপর গুরুত্বপূর্ণ বাস স্টপেজ। অন্যদিকে রাধামোহনপুর রেলস্টেশন। দুটোই খুবই প্রয়োজনীয় জায়গা। ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যবর্তী স্থানে সুন্দরপুর, চন্দনপুর, পলাশীর মত বেশকিছু গ্রাম। স্থানীয়দের অভিযোগ এই দীর্ঘ রাস্তায় মাত্র একটি হাইমাস ও একটি মিনিমাস। বাকী রাস্তা অন্ধকার। কোনও কারনে ফিরতে দেরি হলে বাস থেকে নেমে কিংবা অন্য কোনও ভাবে যদি আষাঢ়ী থেকে দক্ষিণে যেতে হয় কিংবা ওপাশে রাধামোহনপুর থেকে আষাঢ়ীর দিকে আসতে হয় তখন মহিলাদের আতঙ্কের মধ্যে দিয়েই আসতে হয়। এই রাস্তাতেই কিছুদিন আগে এক মহিলার হার ছিনতাই হয়েছে সন্ধ্যা বেলায়। মহিলা টোটো করে যাচ্ছিলেন। দুস্কৃতিরা তার গলার হার ছিনিয়ে নেয়। তারও কয়েকমাস আগে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মীর কাছ থেকে আদায়িকৃত টাকা ছিনতাই হয়েছিল।
কিন্তু মহিলাদের তারও চেয়ে দুশ্চিন্তা সম্ভ্রম নিয়ে, ইজ্জ্বত নিয়ে যা কিনা ইভটিজারদের উৎপাতে রাখাই দায় হয়ে পড়েছে। সর্বদাই আতঙ্ক, এই বুঝি ইভটিজিং শুরু হল। ওই রাস্তার ওপরেই রয়েছে লাইসেন্স প্রাপ্ত মদের দোকান। সেখান থেকে মদ কিনে কেউ কেউ রাস্তার ধারে বসেই মদ খায়। বিভিন্ন চটিতে বসে চটুল আড্ডায় মেতে থাকে উঠতি তরুনের দল। তাদের কাছে যেন মা-মাসির হিসাব নেই, এমনটাই জানালেন স্থানীয়রা। কখনও কখনও বাইকের পেছনে বসে থাকা তরুণী কিংবা কিশোরীর পিছু ধাওয়া করে বাইক নিয়েও। যেমনটা ঘটে গেল রবিবার।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সন্ধ্যা তখন মাত্র সাড়ে ৬টা। একটি বাইকের পেছনে বসিয়ে এক তরুণীকে নিয়ে আষাঢ়ী থেকে রাধামোহনপুরের দিকে যাচ্ছিলেন এক যুবক। আষাঢ়ীর কিছুটা পর থেকেই দুটি বাইকে তিনজন পিছু নেয় তরুণীকে নিয়ে যাওয়া যুবকের বাইকটির। চলতে থাকে টোন টিটকিরি, কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি ও অশ্লীল বাক্য বান। যুবকটি বাইকের গতি যত বাড়ায় তত গতি বাড়ায় ইভটিজার। কখনও যেন বাইকের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে ইভটিজারদের বাইক দুটি। পলাশীর কিছুটা দুরে ভয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে যুবক। তখন তিন ইভটিজার তাঁদের ঘিরে ধরে। দুজনের সম্পর্ককে ঘিরে নোংরা কথা বলতে থাকে। হঠাৎই এক যুবক তরুণীর ওড়না ধরে টানতে থাকে। ওই সময় যুবক ও তরুণী বাঁচাও, বাঁচাও চিৎকার করতে থাকে।
মহিলার আর্তকন্ঠের চিৎকার শুনে দুরে থাকা কিছু মানুষজন হৈ হৈ করতে করতে ছুটে আসলে দুটি বাইক নিয়ে ওই তিন দুস্কৃতি অন্ধকারের মধ্যে একটি গলি রাস্তায় ঢুকে পড়ে। তাদের পেছনে ধাওয়া করে কয়েকজন মানুষ। কিছুটা দুরে গিয়ে ওই রাস্তাটি ফের এই রাস্তারই পলাশীর মোড়ে এসে পড়ায় এবং জায়গাটি আলোকিত থাকায় ওদের ঘিরে ফেলে ওই রাস্তার মোড়ে থাকা লোকজনেরা। কিন্তু একটি বাইক সমতে ২জন পালিয়ে যায়। ১জন ধরা পড়ে যায়। তাকে উত্তম মধ্যম দিতে থাকে জনতা। খবর পেয়ে ডেবরা থানার পুলিশ ছুটে এলে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন জনতা। তাঁরা বারংবার বলতে থাকেন পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও নেতাদের ভোটের রাজনীতির জন্য এদের বাড়বাড়ন্ত। অনেক কষ্টে ওই ইভটিজারকে উদ্ধার করে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। জনতা জানিয়ে দেয় যদি ওই যুবককে পুলিশ গ্রেফতার না করে তবে আগামীদিনে বড়সড় আন্দোলনে যাবেন তাঁরা।