নিজস্ব সংবাদদাতা: হাতে গোনা আর কয়েকদিন পরীক্ষার। অনলাইন নয়, পরীক্ষা হবে অফলাইনে। তাই মেয়েকে আরও একটু সিরিয়াস হতে বলেছিলেন বাবা-মা। কিন্তু মেয়ে তারপরও সিরিয়াস নয়, বন্ধুদের সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প। বাধা দিতে গেলে তর্ক। রাগের মাথায় একটা চড় মেরেছিলেন মা।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/Screenshot_20220324-143102_PicsArt.jpg)
তাতেই গোঁসাঘরে খিল তুলে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ল মেয়ে, মা-বাবার একমাত্র সন্তান। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদা বাজারের এই ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন বাবা মা সহ পরিবার সদস্যরা। দেওয়ালে মাথা ঠুকতে যেন নিজের অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করছেন মা। বারংবার শুধু একটাই প্রশ্ন, সন্তানকে শাসন করা কী পাপ?
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মৃতা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীনীর নাম সোহিনী জানা। সবে ১৮ পেরিয়ে আসা সোহিনী বেলদা গঙ্গাধর একাডেমির কলা বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। এবার পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ৪ঠা এপ্রিল, হোম সেন্টারেই পরীক্ষা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় বেলদা বাজারেই এক গৃহশিক্ষকের কাছে প্রাইভেট টিউশনি পড়তে যাওয়ার কথা ছিল সোহিনীর। সময় গড়িয়ে যাচ্ছিল অথচ সে বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে গল্প করছিল দেখে তার মা একবার ডাক দিয়ে যান। ‘এই যাচ্ছি’ বলে ফের গল্পে মেতে ওঠে সে। দ্বিতীয়বার মা যখন এসে দেখেন যে তখনও সোহিনী গল্প করছে তখন কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করেন মা। এবার মাকে পাল্টা জবাব দেয় সোহিনী। মুখের ওপর তর্ক করায় বন্ধুদের সামনেই মেয়ের গালে একটি চড় মারেন মা। মেয়ে রেগে ঘরে ঢুকে যায়।
ওদিকে মেয়ে এবার টিউশন যাবে ভেবে মা ও নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই মা এবং পিসির খেয়াল হয় যে মেয়ের ঘর ভেতর থেকে বন্ধ। ততক্ষণে মায়েরও মনে হয় তাঁর চড় খেয়ে হয়ত মেয়ের অভিমান হয়েছে। মা এবং পিসি মিলে ডাকাডাকি করেন বেশ কিছুক্ষণ কিন্তু কোনও সাড়া না মেলায় উদ্বিগ হন। সোহিনীর বাবা প্রভাত জানা একজন পরিবহন ব্যবসায়ী। পরিবারের একমাত্র সন্তান ও মেয়ে অন্তপ্রাণ প্রভাতবাবুর ডাকাডাকিতে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। জানলার শিক ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখা যায় একটি শাড়িকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে ঝুলে রয়েছে মেয়ে। পরনে টিউশনি যাওয়ার পোশাক। তড়িঘড়ি সোহিনীকে নিয়ে যাওয়া হয় বেলদা হাসপাতালে কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। হতবাক শোকসন্তপ্ত বাবা মার একটাই প্রশ্ন শুধু ঘুরে বেড়াচ্ছে সন্তানকে শাসন করা কী এতটাই অপরাধের? জীবনভর সেই অপরাধের শাস্তি বয়ে বেড়ানোর কী বোঝা চাপিয়ে দিয়ে গেল একমাত্র প্রিয় সন্তান!