নিজস্ব সংবাদদাতা: একদিন এই রুটেই ট্রেন ছুটিয়েছেন তিনি কিন্তু সেই রাস্তাই ভুল করে বসলেন রেলের প্রাক্তন চালক। যাওয়ার কথা খুড়দা রোড কিন্তু চলে এলেন খড়গপুরে! ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার চন্দনপুর গড়বেড়িয়ার সেই ৭৩ বছরের বৃদ্ধকে শেষ অবধি বাড়ি ফিরতে সাহায্য করে এক মানবিক দৃষ্টান্ত রাখলেন খড়গপুর শহরের ইন্দা এলাকার যুবক।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/Screenshot_20220311-195453_WhatsAppBusiness.jpg)
বৃদ্ধকে ফিরে পেয়ে খুশি নগদ বেশ কিছু টাকাও দিতে চেয়েছিলেন ওড়িশা থেকে আসা বৃদ্ধের পরিবারের সদস্যরাও কিন্তু বিনয়ের সাথে তাও প্রত্যাখ্যান করলেন চাউমিন বিক্রেতা। খড়গপুর শহরের ইন্দা ট্রাফিক মোড় লাগোয়া সূর্যসেন মার্কেটের পাশাপাশি গ্যাংখুলির ঘটনায় পাড়ার ছেলের জন্য গর্বিত এলাকাবাসী।
জানা গেছে বুধবার রাতে নিজের ফার্স্টফুডের গুমটির ঝাঁপ বন্ধ করে গ্যাংখুলির বস্তিতে ফিরছিলেন চাউমিন বিক্রেতা বাবলু প্রধান। ওই সময় তাঁর বাড়ির ভেতর এক বৃদ্ধকে ঢুকে যেতে দেখেন তিনি। বাবলু তাঁর পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে কিছুই বলতে পারছিলনা ওই বৃদ্ধ। শুধু বলছিল তাঁর খুব ঘুম পেয়েছে, তিনি একটু ঘুমাতে চান। বাবলু বস্তিবাসী। তাঁর নিজেরই সামান্য একটু ঘর।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/IMG-20220311-WA0017.jpg)
তিনি বৃদ্ধকে সামনে একটি আচ্ছাদন ওয়ালা জায়গা দেখিয়ে দেন। বৃদ্ধ সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন। বৃহস্পতিবার সকালে উঠে বাবলু বৃদ্ধের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেন বৃদ্ধ নেই। পরিবর্তে পড়ে রয়েছে তাঁর দুটি কাপড়ের ব্যাগ। ব্যাগ দুটি খুলে বাবলু দেখেন একটি ব্যাগে জামাকাপড়, অন্য ব্যাগে পেনশনের কাগজপত্র, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পাশবই এবং নগদ তিন হাজার টাকা।
বাবলু প্রধান জানান, ‘ পেনশনের কাগজপত্র, পাশবইয়ের সাথে আধারকার্ডও ছিল। যা দেখে আমি বুঝতে পারি এই বৃদ্ধ নেহাতই কোনও ভিখিরি বা ভবঘুরে নন। ঠিকানা ছিল ওড়িশা। পাশ বই, আধারকার্ড দেখে আমি বুঝতে পারি এঁর কোথাও পরিবার রয়েছে। আমি পাশবইয়ে দেওয়া ফোননম্বরে ফোন করি কিন্তু ফোন লাগছিলনা। এরপরই আমি সাহায্য নেই আমার এক বন্ধুর যিনি ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের খড়গপুর শাখায় কাজ করেন। ওই বন্ধুটি এবার ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ওড়িশা শাখায় যোগাযোগ করে বিকল্প একটি ফোন নম্বর জোগাড় করেন। এরপরই আমরা ওই বৃদ্ধের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং তখনই জানতে পারি বৃদ্ধ এক সময় দক্ষিণপূর্ব রেলেরই ট্রেনের চালক ছিলেন।”
বাবলু জানিয়েছেন, “এরপরই আমরা খোঁজ চালাই ওই বৃদ্ধের। ইন্দা এলাকা থেকেই উদ্ধার করে ফিরিয়ে নিয়ে আসি তাঁকে। জানতে পারি গত ২দিন ধরে এই বাজার এলাকাতেই ঘোরাফেরা করছেন বৃদ্ধ। ওঁর আধারকার্ড দেখে জানতে পারি ৭৩ বছরের ওই বৃদ্ধের নাম কায়লু মাঝি। অবসর গ্রহণ করার পর বৃদ্ধ থাকেন তাঁর দেশের বাড়ি ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার চন্দনপুরের অন্তর্গত গড়বেড়িয়ায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে এসে খুড়দা রোড থেকে এসে পৌঁছান বৃদ্ধের ছোট ছেলে। বৃদ্ধ ছেলেকে দেখেই চিনতে পারেন। এরপর তাঁর হাতেই তুলে দেই বৃদ্ধকে।”
বৃদ্ধের ছেলে রঘুনাথ নিজেও রেলের চালক। কর্মসূত্রে থাকেন খুড়দারোডের রেল আবাসনে। জানা যায় ছেলের কাছেই আসছিলেন বৃদ্ধ। ময়ূরভঞ্জ রোড স্টেশন থেকে খুড়দা রোড স্টেশনের দূরত্ব ২৭০ কিলোমিটার আর খুড়দা রোড থেকে খড়গপুরের দূরত্ব ৩৭৬কিলোমিটার। একদিন এই ট্র্যাকেই ট্রেন ছুটিয়েছেন বৃদ্ধ কিন্তু আজ আ্যলঝাইমার কেড়ে নিচ্ছে স্মৃতি! রঘুনাথ জানিয়েছেন, “বাবার সামান্য সমস্যা ছিল কিন্তু তা যে এতটা বেড়েছে বুঝতে পারিনি। তিনদিন ধরে আমরাও আত্মীয় স্বজনদের কাছে খোঁজ নিচ্ছিলাম, এরপর থানায় যাব ভাবছিলাম। তার আগেই খোঁজ পেলাম। ধন্যবাদ খড়গপুরবাসীকে।” বাবলুকে দু’হাজার টাকা দিতে চেয়েছিলেন রঘুনাথ। কিন্তু বাবলু বলেছেন,” উনি আমার বাবার মত, বাবাকে ছেলের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে টাকা নেব ভাবতেই পারিনা।”