নিজস্ব সংবাদদাতা: শনিবার কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরীতে পুরভোটে জয়ী ৬৩ জন কাউন্সিলরকে শনিবার সম্বর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য বিজেপি। সেই সম্বর্ধনায় যাচ্ছেননা খড়গপুরের বিধায়ক তথা সদ্য খড়গপুর পুরভোটে জয়ী হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় (Hiranmay Chatterjee) বা অভিনেতা হিরণ (Actore Hiran)। বিজেপির তরফ থেকে ওই সম্বর্ধনা সভায় উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল খড়গপুর পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী কাউন্সিলর হিরণ কে কিন্তু দলকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এখুনি খড়গপুর ছাড়ছেননা তিনি। হিরণ দলকে জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে দলের কর্মীরা আক্রান্ত তাই তাঁদের পাশেই থাকবেন তিনি। তাই এখন খড়গপুর ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। যদিও হিরণের এই দাবির পেছনে তাঁর দল ছাড়ার সম্ভবনাই আরও প্রকট হচ্ছে।
হিরণ শুধু যে দলের ডাকা সম্বর্ধনা সভায় হাজির হচ্ছেননা তাই নয় তারই সঙ্গে তিনি আরও এক ইঙ্গিতপূর্ন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে তিনি একটি সাংবাদিক সম্মেলন করবেন এবং সেখানেই তিনি জানাবেন যে খড়গপুর পৌরসভা নির্বাচনে তাঁকে হারানোর জন্য দলের তরফে কারা কারা ষড়যন্ত্র করেছিল। একটি সংবাদ মাধ্যমকে ক্রুদ্ধ হিরণ বলেছেন, ‘‘এই নির্বাচনে আমাকে হারানোর জন্য কারা কারা ষড়যন্ত্র করেছেন তার সব প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সেই সব প্রমাণ সামনে নিয়ে আসব। সাংবাদিক বৈঠক করে জানাব কে কী ভাবে আমাকে হারানোর চেষ্টা করেছেন।’’
যদিও হিরণের ওই ঘোষিত সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্য দিয়েই হিরণ বিজেপি ছাড়তে চলেছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। যদি খড়গপুরের বিজেপি নেতারা তাঁকে হারানোর চেষ্টা করেই থাকেন তবে কেন তিনি রাজ্য কমিটির ডাকা সম্বর্ধনা সভায় হাজির হবেননা? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আসলে অনেকেরই মনে হচ্ছে হিরণ বিজেপি ছাড়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছেন এবং সেই কারণে এই পুরভোটে যে সমস্ত বিজেপি কর্মী তাঁর হয়ে কাজ করেছে তাঁদেরকে তিনি নিজের দল ছাড়ার সমর্থনে নিয়ে আসার জন্যই খড়গপুরে পড়ে রয়েছেন। পাশাপাশি ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন দল ছাড়ার।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিনই ‘KGP বাংলা’ প্রকাশ করেছিল যে সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে হিরণকে চেয়ারম্যান করেই তৃনমূলের রাজ্য কমিটি খড়গপুর পুরসভার বোর্ড গঠন করতে চলেছে। সেই খবর প্রকাশ হবার পরই তোলপাড় শুরু হয়। তার ২দিন পরে আরও দুটি সংবাদপত্র সেই একই খবর প্রকাশ করে। হিরণ নিজেও কখনওই সরাসরি বলছেননা যে তিনি দল ছাড়বেননা। বরং ইনিয়ে বিনিয়ে সেই সম্ভবনাকে জিইয়ে রাখছেন। পুরভোটের ফল ঘোষণার পর ৪৮ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে বোর্ড গঠন নিয়ে রাজ্য তৃনমূলেরও কোনও বক্তব্য নেই। তাঁরাও হিসাব করছেন কোথায় কাকে চেয়ারম্যান করা হয়। এরই মধ্যে KGP বাংলা সরাসরি কথা বলেছিল রাজ্য তৃনমূলের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে। তিনিও নাকচ করে দিতে পারেননি হিরণ প্রসঙ্গ। শুধু জানিয়েছেন, এখনও সেরকম কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
অর্থাৎ না হিরণ, না তৃনমুল কোনও তরফেই হিরণের চেয়ারম্যান হওয়ার সম্ভবনাকে নাকচ করা হয়নি। এরই মধ্যে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে হিরণের সাংবাদিক সম্মেলন ডাকার হুঁশিয়ারি দেখে মনে হচ্ছে খুবই চাপে রয়েছেন হিরণ। সেই চাপ কী তবে তৃনমূলের? কারন বোর্ড গঠনের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজ্য তৃনমূলকে। কিন্তু হিরণ এত সময় নিচ্ছেন কেন? একটি সূত্র বলছে কর্মীদের নিজের দলত্যাগের স্বপক্ষে আনার পাশাপাশি আরও একটি কৌশল রয়েছে হিরণের এবং সেটি হল দল এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বিশেষ করে দিলীপ ঘোষের মত নেতাদের তীব্র ও খোলাখুলি আক্রমন করা। যাতে বিজেপি তাঁকে বহিস্কার করে। যদি বিজেপি হিরণকে বহিস্কার করে তবে তাঁর বিধায়ক পদ থেকে যাবে। তার আগে অন্য দলের যোগ দিলে বা চেয়ারম্যান হলে তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ হয়ে যেতে পারে। সব মিলিয়ে খড়গপুরবাসীকে আরও কয়েকঘন্টা সাসপেন্সে থাকতে হচ্ছে।