নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুর এলাকার আতঙ্ক বলে কুখ্যাতি রয়েছে যে স্পঞ্জ কাম পিগ আয়রন কারখানাটির সেই রেশমি মেটালিক্সে ফের এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক ক্রেন অপারেটরের। ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও এক শ্রমিক। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার বিকাল বেলা ৬ টা নাগাদ খড়গপুর গ্রামীণ থানার অন্তর্গত রেশমির সবচেয়ে পুরানো ইউনিট হাওড়া- মুম্বাই জাতীয় সড়ক লাগোয়া এক নম্বর প্ল্যান্টে। ওই দুর্ঘটনায় মৃত ব্যাক্তির শ্র্র নাম চন্দ্রশেখর বেহেরা(৪০)। তাঁর বাড়ি বিহার প্রদেশে বলে জানা গেছে। শুক্রবার গভীর রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। আরও এক শ্রমিক রমেশ রায় এই ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন। তিনি এই মুহুর্তে চিকিৎসাধীন বলে জানা গিয়েছে।
সূত্র মারফত জানা গেছে ঘটনাটি ঘটেছে সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ প্ল্যান্ট ইলেকট্রিক ওভার হেড বা ইওটি ক্রেনটিতে। এই ইওটি ক্রেনের কাজ হল কারখানার উপরের অংশে থাকা বিদ্যুৎ সংযোগ এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ গুলিতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা। যে কারনে ক্রেনটি কারখানার ৪০ ফুট ওপরে এদিক ওদিক যতায়ত করে। ওই কারনে ওই ইওটি ক্রেনটির মধ্যে একটি কেবিন থাকে। সেই কেবিনে থেকেই ক্রেনটি অপারেট করেন একজন অপারেটর।
মৃত চন্দ্রশেখর ছিলেন সেই অপারেটর তাঁকে সাহায্য করার জন্য ছিলেন রমেশ। কারখানার একটি সূত্র জানিয়েছে চন্দ্রশেখর একটি প্রয়োজনে ক্রেনটিকে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তখুনি কেবল ছিঁড়ে তাঁদের নিয়েই প্রায় ৪০ ফুট নিচে মেঝেতে পড়ে যায় ক্রেনটি।
ঘটনার সাথে সাথে ওই জায়গাটি কর্ডন করে ঘিরে ফেলে কারখানা কর্তৃপক্ষ। কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয় এই সময় কোনও ধরেনের মোবাইল ফোন যাতে ব্যবহার না করা হয়। অপারেটর ও তাঁর সঙ্গীকে তুলে নিয়ে দ্রুত মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। যদিও ক্রেন ভেঙে পড়ার এই ঘটনা তীব্র আতঙ্কও সৃষ্টি করেছে কর্মীদের মধ্যে। এক কর্মী বলেছেন, ওই ইওটি ক্রেন কোনও সাধারন ক্রেন নয় যে কেবল ছিঁড়ে পড়ে যাবে। ওই ক্রেন বিভিন্ন অংশে লক পদ্ধতি ব্যবহার করে ধরে রাখা হয়। সেই সমস্ত লক ব্যর্থ হল কী করে এটা ভাবা দরকার। আমাদের মনে হচ্ছে কারখানা কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট পরিমাণে গুরুত্ব দিয়ে যন্ত্রাংশ গুলির দেখভাল, সময়মত মেরামত করেননা। আর তার মাশুল বারবার শ্রমিক কর্মচারীদের দিতে হচ্ছে।
শ্রমিকদের অভিযোগ রেশমি মেটালিকসের বিভিন্ন ইউনিটে দিনের পর দিন দুর্ঘটনা ও শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও তা নিয়ে সরকারের তরফে কিংবা স্থানীয় নেতাদের কোনও মাথা ব্যাথা নেই কারন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মুখ বন্ধ রাখেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। সরকারের সেফটি সিকিউরিটি দেখার লোকজন, ইউনিয়নের নেতারা কিছুই ব্যবস্থা নেয়। স্থানীয় এলাকাটি খড়গপুর গ্রামীণ বিধায়ক দীনেন রায়কে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ” আমি বিষয়টি শুনেছি। ঠিক কী হয়েছিল খোঁজ খবর নিচ্ছি। তবে এখন ওই কারখানা কোনও রাজনৈতিক দল বা ইউনিয়ন দেখেনা। সরাসরি ডিএম নেতৃত্বাধীন কমিটি দেখে। ” কারখানার এক ম্যানেজার নিজের নাম গোপন রাখার শর্তে বলেছেন, ওই অপারেটর একজন ঠিকাদারের অধীনে কাজ করছিলেন। দূর্ঘটনার পর কোম্পানি সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিয়েছে চিকিৎসার জন্য। সেফটি সিকিউরিটির ক্ষেত্রে কারখানা সরকারের নিয়ম মেনে চলে। এরপরও দুর্ঘটনা ঘটে যায়।”