শশাঙ্ক প্রধান: দিনের পর দিন ডামাডোল চলছে স্কুলে, পঠনপাঠন শিকেয়। খোদ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধেই শ্লীলতাহানির অভিযোগ, দুই শিক্ষক-শিক্ষিকার রসালাপের অডিও ফাঁস কিন্তু থানায় কোনও অভিযোগ করেননা অভিভাবকরা। এলাকা জুড়ে পোস্টার পড়ে, দিনের পর দিন মিটিং চলে অথচ গোটা ব্যাপারটাই প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/08/Screenshot_20220825-210930_WhatsAppBusiness.jpg)
পুলিশ এবং প্রশাসনকে দিনের পর দিন অন্ধকারে রেখে হঠাৎ করেই বৃহস্পতিবার দিনভর স্কুল আর প্রধানশিক্ষকের বাসভবন ঘেরাও করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হতেই ছুটে যায় পুলিশ। এরপর মাইক হাতে নিয়ে জনতার উদ্দেশ্যে পুলিশের স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, দু’মিনিটের মধ্যে এলাকা খালি না করলে শুরু হবে গ্রেফতার করা। ব্যস্! সাথে সাথে জনতার বিপ্লব শেষ, পড়ি কি মরি করে জায়গা খালি করে পালাতে ব্যস্ত জনতা। পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা বাজারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলায় এমনই ঘটনা ঘটতে দেখা গেল।
ঘটনা মাস খানেক আগের। ডেবরা আলোক কেন্দ্র স্কুলেরই এক শিক্ষক ও শিক্ষিকার মধ্যে ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপ সূত্রে জানা যায় প্রধান শিক্ষক নাকি কয়েকজন নাবালিকা ছাত্রীর সঙ্গে অভব্য আচরণ করে থাকেন। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায়। এলাকায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ও দুই শিক্ষক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে এলাকায় পোস্টার পড়েছিল। ঘটনার পর দফায় দফায় মিটিং হতে থাকে। পুলিশের অভিযোগ বিষয়টি নিয়ে স্কুলের অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এমনকি এলাকার সাধারণ মানুষকেও বারংবার জানানো হয়েছিল কোনও অভিযোগ থাকলে পুলিশকে জানানো হোক। কিন্তু কোনও তরফেই পুলিশকে কোনো কিছুই জানানো হয়নি। অথচ দিনের পর দিন বিভিন্ন ভাবে এলাকায় একটি অস্থিরতার পরিবেশ জিইয়ে রাখার পরিকল্পনা চলছে। বৃহস্পতিবার তারই অঙ্গ হিসাবে প্রথমে স্কুলের সামনে এবং বিকালের পরে প্রধান শিক্ষকের বাড়ির সামনে জমায়েত করা হতে থাকে।
বৃহস্পতিবার বিক্ষুব্ধ জনতা অভিযোগ করতে থাকেন যে প্রধান শিক্ষক নিখিল মণ্ডল স্কুলের ৯ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোর্টে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এবং তাঁদের হেনস্থা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ ওই ঘটনার জন্য স্কুলের পঠনপাঠন চুলোয় উঠেছে। বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষক এবং এলাকাবাসী সহ পড়ুয়ারা আলোককেন্দ্র হাই স্কুলে সকাল থেকেই বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন,ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ৯জন শিক্ষককে মিথ্যে কেসের মামলায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর বিরুদ্ধে স্কুল চত্বরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
তারপর সন্ধ্যের সময় ফের ওই প্রধান শিক্ষকের বাসভবনে সামনে মিথ্যে মামলা দায়ের করার অভিযোগে ওই সমস্ত শিক্ষক এবং স্থানীয় গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভে সামিল হন।শেষমেষ চাপে পড়ে আলোককেন্দ্র হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিখিল মণ্ডল ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ তুলে নেবেন বলে একটি মুচলেকা দেন। ঘটনার জেরে বেশ কয়েক ঘন্টা এলাকা ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ঘটনার খবর পেয়ে ডেবরা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পুলিশ বহুভাবে বুঝিয়ে জনতাকে এলাকা ছাড়তে বলে কিন্তু অনড় জনতা এলাকা ছাড়তে না চাওয়ায় ডেবরা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রণব পাত্র হাতে মাইক তুলে নেন। তারপর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আপনাদের বারবার পুলিশের কাছে নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছিল কিন্তু আপনারা তা না করে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করতে চাইছেন। আপনাদের দু’মিনিট সময় দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে এলাকা না ছাড়লে আমরা গ্রেফতার করা শুরু করব।” এরপরই পিঠ টান দেয় জনতা।