নিজস্ব সংবাদদাতা: গত কয়েকদিন ধরে তীব্র দাবদাহের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সারা দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরও। প্রাণ আইঢাই গরমে ঘরে থাকা মানুষগুলিরই অবস্থা সঙ্গীন তো বাইরে থাকা মানুষদের অবস্থা কি? আবার সেই মানুষ যিনি কোনও এক সময় নিজের ঘরবাড়ি, সন্তান, আত্মীয়স্বজন ইত্যাদি হারিয়েছেন কোনও অজানা দুর্বিপাকে। তারও চেয়েও মারাত্মক অবস্থা তাঁদের যাঁরা বোধবুদ্ধি, নিজস্ব অস্থিত্ব হারিয়ে আজ নেহাৎই ভবঘুরে! এই প্রচন্ড দাবদাহের মধ্যেও সড়কের ওপর পড়ে বোধহীন, নির্বিকার। কিন্তু তাঁরা নির্বিকার বলে প্রকৃতিতো নির্বিকার নয়, ফলে জীবন সংশয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই সব ভবঘুরে পথবাসীদের। এমনই এক অসুস্থ ভবঘুরে মহিলাকে খোলা আকাশের নিচ থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালো পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন।
মঙ্গলবার এমনই অবাক দৃশ্যের স্বাক্ষী থাকলেন
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রাজ্য সড়কের ক্ষীরপাই অংশের হালদার দিঘী এলাকায় বসবাসকারী মানুষজন। ক্ষীরপাই ফাঁড়ির পুলিশ ও চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে উদ্ধার করা হল এক পথবাসী ভবঘুরে মহিলাকে। চন্দ্রকোনা ১ ব্লকের যুগ্ম বিডিও দেবাশিস গায়েন এবং ক্ষীরপাই ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক প্ৰশান্ত কীর্তনিয়ার উদ্যোগে দুপুর বেলায় এই উদ্ধার কার্য চলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বোধবুদ্ধি না থাকায় কিছুতেই ওই মহিলা পুলিশের গাড়িতে উঠতে রাজী হচ্ছিলনা। মানুষের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক না থাকায় অজানা ভীতি ও সন্দেহ হয়ত কাজ করেছিল তাঁর মধ্যে। নিজের মত করে জীবন যাপনে অভ্যস্ত ওই মহিলা সভ্য মানুষের এ হেন তৎপরতাকে মেনে নিতে পারছিলেননা। তীব্র বিরক্তি ও ক্রোধ ফুটে উঠতে দেখা যায় তাঁর মধ্যে। ফাঁড়ির মহিলা পুলিশ কর্মীরা অনেক বুঝিয়ে তাঁকে গাড়িতে তুললেও বারবার তাকিয়ে ছিলেন তাঁর ছেঁড়া জামা কাপড় পরিধান ইত্যাদির দিকে। যেন মনে করেছিলেন উচ্ছেদ করা হচ্ছিল তাঁকে। পরম মমতাভরে বারবার আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইছিলেন ফেলে যাওয়া ভাঙা থালা বাসনগুলিকে। তারপর দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় তাকে পুলিশ গাড়িতে তুলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ক্ষীরপাই হাসপাতালে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে যদিও ওই মহিলার শারীরিক অসুস্থতা এবং মানসিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার কারণে তাঁকে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতার কোনও ভালো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার। স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করে অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে পুলিশের তরফে ওই মহিলাকে আদালতে পেশ করে আদালতের অনুমতিক্রমে তাঁকে প্রয়োজনীয় স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। ক্ষীরপাই পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রশান্ত কীর্তনিয়া বলেন, ‘পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় দেখতে হয়। তাই হয়ত অনেক সময় কিছু বিষয় হয়ত আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। এই রকম কোথাও কোনো অসুস্থ, অসহায় মানুষ দেখলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করছি।’