নিজস্ব সংবাদদাতা: দ্বিতীয় দফার জঙ্গলমহল সফরে গিয়ে ক্রোধে ফেটে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কিছুদিন আগে ঝাড়গ্রাম সফরের পর সোমবার পুরুলিয়া পৌঁছেছেন তিনি। সেখানেই প্রশাসনিক বৈঠক (Administrative Review Meeting of Purulia District) চলাকালীনই তৃনমূলের এক স্থানীয় নেতা মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগ করেন যে ইটভাটার রাজস্ব চলে যাচ্ছে সরকারি কর্মীদের পকেটে। এই কথা শোনার পরই কার্যত রাগে ফেটে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দেন এই ঘটনা যদি তাঁর দলীয় কর্মীরা করতেন তাহলে টেনে চার থাপ্পড় মারতেন তিনি।
সোমবার শুরু থেকেই পুরুলিয়ার প্রশাসনিক সভায় একের পর দুর্নীতির (Corruption) প্রসঙ্গ উঠে আসায় মুখ্যমন্ত্রীর মেজাজ অল্প অল্প করে চড়ছিল। এরই মধ্যে এক স্থানীয় তৃনমূল নেতা বলেন, ইটভাটা থেকে পাওয়া রাজস্বের একাধিক হিসেব মিলছে না বলে সামনে এসেছে অভিযোগ। অভিযোগ, সেই সব টাকা সরকারি কর্মচারীদের ‘পকেটে’ চলে যাচ্ছে একাংশ। এরপরই কার্যত ক্রোধে ফেটে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। জেলাশাসক (District Magistrate) রাহুল মজুমদারের ওপরই যেন সমস্ত ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি পুরুলিয়ার জেলাশাসকের উদ্দেশে মমতা বলেন, “ডিএম শুনতে পাচ্ছো? এগুলো কিন্তু তৃণমূল করেনি। করছে প্রশাসনের নীচের তলার কর্মীরা।” পাশাপাশি এও জানিয়ে দেন,
জেলাশাসকের প্রতি তাঁর ধারণাই বদলে গেল। তার সঙ্গে সঙ্গে আরও ক্ষোভ উগরে দেন তিনি।
শুক্রবার জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে তৃণমূলের নেতার ওই বক্তব্য শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসককে প্রশ্ন করেন, “নিজেরা টাকাটা নেয়, নিজেরাই খেয়ে নেয়! কী জেলা চালাচ্ছো তুমি? এতদিন জেলায় আছ। আমার ধারণাই বদলে গেল! এত কিছু দিচ্ছি মানুষকে, তবু কয়েক জন এত লোভী কেন হয়ে গিয়েছে! আর কত চাই? আমার পার্টির লোক হলে আমি টেনে চারটে থাপ্পড় মারতাম। তাঁদের আমি সবসময় শাসন করি।”
তারপরই জেলাশাসক রাহুল মজুমদারকে মুখ্যমন্ত্রী মমতার কড়া নির্দেশ দিয়ে বলেন, “আমি কথা বলছি, তোমার পুলিশ যাবে, তদন্ত করবে। একে বলে প্রশাসন, একে বলে কাজ। গরিব মানুষ যখন একটা কমপ্লেন করে, আমি নিতে পারি না। সে যে-ই হোক!” এদিন জেলাশাসকের উপর মমতার ক্ষোভ সরকারি মহলে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, ” প্রশাসনিক বৈঠকে নিম্নপদস্থ কর্মচারী এবং জনপ্রতিনিধিদের সামনে জেলাশাসককে এই ভাবে ভর্ৎসনা করায় উচ্চপদস্থ কর্মীদের মনোবল মারাত্মক ধাক্কা খাবে। কাজের স্পৃহা নষ্ট হয়ে যাবে।” কারও কারও মতে, মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসককে কথাটা বললেও তাঁর লক্ষ্য ছিল সরকারি অর্থের তছরুপকারী নিচু তলার কর্মীদের প্রতি।