শশাঙ্ক প্রধান : নজির বিহীন ঘটনা! বিয়ের দিনই বেঁকে বসল কনে। জানিয়ে দিল এই পাত্রকে সে বিয়ে করবেনা। শনিবারই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল ওই ১৯ বছরের কনের। কনের বাড়ি সবং থানার মোহাড় এলাকা হলেও তার বিয়ের বাসর ঠিক করা হয়েছিল পিংলা থানার গোবর্ধনপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে। এই গোবর্ধনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিহারীচক গ্রামের সৌরভ মন্ডলের সঙ্গে। শনিবার সন্ধ্যায় ছিল বিয়ের লগ্ন। সেই মত বরের বাড়ি থেকে এসে পৌঁছে গেছিল গায়ে হলুদের তত্ত্বও। কিন্তু সেই হলুদ নিজের শরীরে মাখতে অস্বীকার করে জানিয়ে দেয় যে সে ভালোবাসে একজনকে। আর মনে মনে তাঁকেই বিয়ে করেছে সে। হিন্দু নারীর দু’বার বিয়ে হতে পারেনা। তাই এই বিয়ে সে করবেনা। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ।
জানা গেছে, কনে রাধারানী মন্ডলের সাথে দীর্ঘদিনের প্রেম ছিল পার্শ্ববর্তী পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না থানার অন্তর্গত বাকচা গ্রামের যুবক রঞ্জিত ভঞ্জের। যদিও এই ঘটনা বাড়ির লোকের কাছে খুলে বলেও ছিল রাধারানী। কিন্তু রাধারানীর দাপুটে বাবা সেই প্রেম মানতে চাননি। তিনি মেয়ের বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে থাকেন। পাত্র ঠিক হয় পিংলা থানার গোবর্ধনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বিহারীচক গ্রামের সৌরভ মন্ডলের সাথে। পাছে পাশের গ্রাম বাকচা থেকে প্রেমিক এসে গন্ডগোল করে তাই মেয়েকে নিজের গ্রাম মোহাড় থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে পাত্রের গ্রামের পাশাপাশি বিয়ের আয়োজন করা হয়।
সেই মত ছেলের বাড়ি থেকে গায়ে হলুদের তত্ত্ব এসে পৌঁছায় কনের আত্মীয় বাড়িতর বিবাহ বাসরে। কিন্তু গোল বাঁধে গায়ে সেই হলুদ মাখাতে যাওয়ার আগেই। হিন্দু মতে পাত্রের গায়ের হলুদ কনের গায়ে লাগার অর্থই হল অর্ধেক বিয়ে হয়ে যাওয়া। কন্যা তখন বাগদত্তা হয়ে যায়। আর সেটা ভেবেই সম্ভবতঃ সমস্ত সংকোচ, ভয় ভেঙে রাধারানী জানিয়ে দেন এই বিয়ে তিনি করবেননা। পাশাপাশি কনে ফোন করেন প্রেমিককে। বলে, এখুনি নিয়ে যাও আমাকে। বাড়িতেও জানিয়ে দেয় এই বিয়ে আমি করবনা।
এরপরই রাধারানীর প্রেমিক রঞ্জিত ভঞ্জ ও তার কয়েকজন বন্ধু হাজির হয়ে যায় গোবর্ধনপুরে, রাধারাণীর আত্মীয় বাড়িতে, বিয়ের আয়োজন হয়েছিল যেখানে। সেখানে তখন হাজির ছিল বিহারীচক থেকে গায়ে হলুদের তত্ত্ব নিয়ে হাজির থাকা পাত্রের পরিবারের লোকজন। রঞ্জিত মেয়ের বাবা গুরুপদ মন্ডলকে প্রশ্ন করে রাধারানী তাকে ভালোবাসে জানা স্বত্ত্বেও কেন তাঁর অন্যত্র বিয়ে ঠিক করা হচ্ছে? সেই রাধারানীকে বিয়ে করবে। কিন্তু এতে প্রতিবাদ জানায় পাত্র সৌরভ মন্ডলের পরিবার। তারা জানায় তাঁদের পাত্রের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর কেন রঞ্জিত বিয়ে করতে আসছে? শুরু হয় দু’পক্ষের কথা কাটাকাটি। এরপর মধ্যস্থ করতে হাজির হন গ্রামের মানুষজন, স্থানীয় পঞ্চায়েত। তাঁরাই উদ্যোগী হয়ে বিয়ে দেয় রাধারানী ও রঞ্জিতের। লেখাজোখা করেই সেই বিয়ে হয়।
অন্যদিকে ঘটনার পরই কোনও উপায় না থাকায় এবার সৌরভের জন্যও পাত্রী খোঁজা শুরু হয়েছে। শনিবার মধ্যরাতের মধ্যে সৌরভকে বিয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় পাত্রীর খোঁজ করছেন তাঁরা।