নিজস্ব সংবাদদাতা : মামার সংগে সমুদ্র স্নানে রেখে তলিয়ে গেল সদ্য মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া এক ছাত্র। অভিযোগ বেশ কিছুক্ষণ ওই কিশোর জলে ডুবছিল ও উঠছিল। বারবার সাহায্য চেয়েও সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি স্থানীয় পুলিশ বা জনগন। উল্টে আসর জমিয়ে মদ্যপান করতে দেখা গেছে মানুষকে। সেই সময়ে সমুদ্র সৈকতে ছিলনা কোনও নুলিয়াও। গোটা ঘটনায় প্রশ্নের মুখে উঠে গিয়েছে দিঘা লাগোয়া আরও একটি জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত উদয়পুর। শুধু তাই নয় মৃত ছাত্রের পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে ওড়িশা পুলিশের বিরুদ্ধে। শুক্রবার এমনই ঘটনা ঘটেছে উদয়পুর সমুদ্র সৈকতে। পরিবারের অভিযোগ সামান্য সাহায্য পাওয়া গেল বেঁচে যেতেও পারত ওই ছাত্রটি। দিঘা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মৃত ছাত্রের নাম সাগর ঢালি (১৬)। কল্যাণীর সেন্ট্রাল পার্ক এলাকার বাসিন্দা সুমন সিবিএসসি বোর্ডের নারায়না স্কুলের ছাত্র।
জানা গেছে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর মামা এবং মামীমার সঙ্গে দিঘায় বেড়াতে এসেছিল সুমন। নিউ দিঘার একটি হোটেলে শুক্রবার সকালেই উঠেছিলেন তাঁরা। তারপর নিউ দিঘার সৈকত এড়িয়ে উদয়পুর সৈকতে চলে যান তাঁরা। উল্লেখ্য নির্জনতার জন্য অনেকেই উদয়পুর পছন্দ করেন। জায়গাটি ওড়িশা পুলিশের অন্তর্গত তালসারি মেরিন থানার অধীন। নিজেদের গাড়ি থাকায় হোটেল থেকে মাত্র মিনিট দশেকের মধ্যে উদয়পুর পৌঁছে যান তাঁরা। মামা জনীগোপাল ঘোষ ও মামীমা সীমা ঘোষ এবং তাঁদের আড়াই বছরের ছেলের সঙ্গে সুমন বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ উদয়পুরে পৌঁছে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রথমে মামীমা সীমার সঙ্গে একদফা স্নান করেছিল সুমন। তারপর ফের মামা জনীগোপালের সঙ্গে স্নানে নামে। বিপর্যয় ঘটে এই সময়।
স্নানে নেমে ঢেউ ভাঙতে ভাঙতে মামার কাছ থেকে খানিকটা দূরে এগিয়ে যায় সুমন। হঠাৎই একটা বড় ঢেউয়ে ভেসে যায় সে। বিষয়টা দেখতে পেয়েই মামা জনীগোপাল তাকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু আচমকা আরও একটি বড় ঢেউ চলে এলে মামার হাতের নাগালের বাইরে চলে যায় সুমন। মামা জনীগোপাল বলেন,’সে সময় চিৎকার করলেও উদ্ধারের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। ঘটনার সময় ছিলনা পুলিশ কিংবা নুলিয়া। ওই সময় পাড়ে বসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মদ্যপান করেছিল বেশকিছু ব্যক্তি। আমার স্ত্রী তাঁদের কাছে কাকুতি মিনতি করছিল। কিন্তু তাঁরা কেউ উঠে আসেননি সাহায্য করতে। তখনও আমার ভাগ্নেকে জলে ভাসতে ডুবতে দেখা যাচ্ছিল। কেউ একজন এগিয়ে এলে বেঁচে যেত ছেলেটা।’
মৃতের পরিবারের অভিযোগ, এরপর স্থানীয় তালসারি মেরিন থানায় গেলে মারাত্মক দুর্ব্যবহার করা হয় তাঁদের সাথে। কেন তাঁরা এই সৈকতে এসেছেন, কেন সমুদ্রে নেমেছিলেন এই প্রশ্ন তোলা হয়। গোটা ঘটনাই দিঘা থানার অভ্যন্তরে ঘটেছে এই অজুহাত দেখিয়ে কার্যত তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয় থানা থেকে। এরপরই দিঘা থানার সাহায্য প্রার্থী হয় ওই দম্পত্তি। দিঘা থানার পুলিশ সমুদ্র থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করে। দিঘা থানার পক্ষে জানানো হয়েছে ঘটনাস্থল ওড়িশা পুলিশের অন্তর্গত হলেও বাংলার জলসীমায় দেহটি উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পাঠানো হয়েছে দেহ।