Saturday, July 27, 2024

Kanthi : উদ্ধার ডুবে যাওয়া ট্রলারের ৮ মৃতদেহ! সমুদ্র যাত্রার মুখেই হাহাকার পূর্ব মেদিনীপুরের মৎসজীবী পরিবারগুলির

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা : তাঁরাই ছিলেন পরিবারের সম্বল, আয়ের উৎস। আর ২দিন পরেই যাওয়ার কথা ছিল সমুদ্রযাত্রায়। কিন্তু তার আগেই সব শেষ। চলতি মরসুমে মৎসশিকার যাত্রার মুখেই বড়সড় বিপর্যয় ঘটে গেল পূর্ব মেদিনীপুরের পেটুয়া মৎসবন্দরের মুখেই। ট্রলার উল্টে মৃত্যু হল ৮ জন মৎসজীবীর। গত শুক্রবার, মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনার পর থেকে রবিবার অবধি দফায় দফায় মোট ৮টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। আগের দিন রাতে নন্দীগ্রাম থেকে রওনা হওয়া ওই ট্রলারটিতে চালক সহ মোট ১২জন মৎসজীবী ছিলেন যার মধ্যে শুরুতেই চারজন জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিলেন।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে মৎস প্রজননের স্বার্থে গত ১৫ই এপ্রিল থেকে সমুদ্রে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শুরু হয় যা চলে ১৪ই জুন অবধি। অর্থাৎ আগামী ১৫ই জুন থেকে ফের সমুদ্র যাত্রা শুরু হবে মৎসজীবীদের। ট্রলার কিংবা যন্ত্রচালিত নৌকা নিয়ে সমুদ্র যাত্রা করবেন তাঁরা। মৎসশিকারের পূর্বে ট্রলারের রসদ সংগ্ৰহ অর্থাৎ তেল, জল, বরফ ইত্যাদি নেওয়ার জন্য নন্দীগ্রামের ‘আলামিন’ ট্রলার যাচ্ছিল পেটুয়া বন্দরের উদ্দেশ্যে। বৃহস্পতিবার রাতে যাত্রা শুরু করেছিল দুর্ঘটনার কবলে পড়া ট্রলারটি। বন্দরের পথে রসুলপুর নদী মহনায় চড়ায় আটকে যায় ট্রলারটি। সকাল ৬ টা নাগাদ জোয়ার শুরু হলে তীব্র জলস্রোতে উল্টে যায় সেটি। এরফলে সঙ্কটে পড়েন ট্রলারের চালক সহ ১২জন মৎস্যজীবী। ট্রলারের ভেতরে জল ঢুকতে শুরু করলে কয়েকজন ট্রলার ছেড়ে মোহানার জলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মৃত দুই ভাই আটকে যান ডুবন্ত ট্রলারেই। মৃত দুই মৎস্যজীবীর সম্পর্কিত আরেক ভাই মুর্শেদ খাঁ সহ ৩ জন সাঁতরে পাড়ে ওঠেন। তীব্র জলস্রোতে ভেসে যান ৭জন।

শুক্রবারই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিল জাতীয় বিপর্যয় উদ্ধার কারী দল এনডিআরএফ এবং ইন্ডিয়ান কোস্ট গার্ড বা উপকূলরক্ষী বাহিনী। হুভারক্র্যাফট, হেলিকপ্টার ও স্পিডবোট নামিয়ে নিখোঁজ মৎসজীবীদের খোঁজে জোর তল্লাশি শুরু হয়। তাঁদের প্রচেষ্টাতেই ঘটনার উদ্ধার হয়েছিল ২ ভাইয়ের মৃতদেহ। বাকি ৭ জনের খোঁজ মেলেনি তখনও। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে হাজির হন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি, কাঁথির মহকুমা শাসক আদিত্যবিক্রম মোহন হিরানি, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সোমনাথ সাহা এবং কাঁথি মৎস্য দপ্তরের সামুদ্রিক বিভাগের সহকারী অধিকর্তা সুরজিৎ বাগ প্রমূখরা। ঘটনার প্রায় ৩০ ঘন্টার পর শনিবার সন্ধে নাগাদ উত্তাল নদী সাঁতরে ফেরেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগরের বাসিন্দা মাঝি ইকবাল হোসেন। খেজুরির দক্ষিণ কলাগেছিয়া উপকূলে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা তাঁকে উদ্ধার করেন। তিনি বর্তমানে তমলুক জেলা হাসপাতালের চিকিৎসাধীন।

রবিবার রবিবার সকালে জুনপুট কোস্টাল থানার বাঁকিপুট এবং খেজুরির তালপাটি কোস্টাল থানার মেইদিনগরের কাছে সমুদ্রে ভেসে ওঠে দেহগুলি।মৃতরা হল খেজুরির বারাতলা কৌস্তব মণ্ডল, কাঁথির দক্ষিণ আমতলিয়ার পঞ্চানন মণ্ডল এবং কাঁথি পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের জালালখাঁবাড়ের বামাপদ হাজরা। ওইদিনই রাতে পেটুয়া বন্দর এলাকায় ভেসে ওঠে নন্দীগ্রামের কেন্দ্যামারীর গোবিন্দ পালের মৃতদেহ। সোমবার তালপাটি কোস্টাল ও নন্দীগ্রাম থানা এলাকায় উদ্ধার হয় খেজুরির বারাতলা ও কামদেবনগরের বাসিন্দা সঞ্জয় গিরি ও জয়দেব করণের মৃতদেহ।

দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে জানা যায় যে বন্দরে ঢোকার আগে রসুলপুর মোহনায় চড়ায় গেঁথে যায় এবং তীব্র জলস্রোতে সেটি উল্টে যায়। ট্রলারটি চড়ায় গেঁথে যাওয়ায় কারণে প্রবল ঢেউয়ে সেটি উল্টে যাওয়ার কারণে কেবিন থেকে দেহ বের করতে হয় উদ্ধারকারীদের। মৎসজীবীদের দাবী রসুলপুর নদীর মোহনায় এই চড়ার কারনে বারংবার বিপদে পড়তে হয় ট্রলারগুলিকে। ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে মৎসজীবী পরিবার গুলিতে।

- Advertisement -
Latest news
Related news